টাকা না দিয়ে খাচ্ছেন রাবির দুই ছাত্রলীগ নেতা

খাবারে তেলাপোকা ও মাছি ফেলে আন্দোলনের ভয় দেখিয়ে গত ৫ বছর ধরে ডাইনিং ও ক্যান্টিনে টাকা না দিয়ে খাবার খাওয়ার অভিযোগ উঠেছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শহীদ হবিবুর রহমান হল শাখা ছাত্রলীগের এক নেতার বিরুদ্ধে। এছাড়া হলের দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে গত তিন মাস ধরে ডাইনিং থেকে দুপুর-রাত দুবেলা টাকা ছাড়াই খাবার খাওয়ার অভিযোগ উঠেছে একই হলের আরেক ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে।

এঘটনায় ভুক্তভোগী হলেন, হবিবুর রহমান হল ক্যান্টিনের মালিক মো. আলতাফ হোসেন ও একই হলের ডাইনিং কর্তৃপক্ষ। অভিযুক্তরা হলেন, হল শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি ও হলের বর্তমানে দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা মো. মিনহাজুল ইসলাম। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন ও ভূমি প্রশাসন বিভাগের ২০১৫-১৬ সেশনের শিক্ষার্থী এবং বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান বাবুর অনুসারী। অভিযুক্ত আরেক ছাত্রলীগ নেতা সোহান আহমেদ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। তিনি হবিবুর রহমান হলের সাংগঠনিক সম্পাদক ও হলের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা। সোহান শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদুল্লা-হিল-গালিবের অনুসারী।

এ বিষয়ে শহীদ হবিবুর রহমান হলের ক্যান্টিন মালিক আলতাফ হোসেন বলেন, ‘হলে উঠার পর থেকে আমার ক্যান্টিনে বাকি খাচ্ছে মিনহাজ। বাকির টাকা লিখতে লিখতে হতাশ হয়ে গেছি আমি; তাই এখন আর তার বাকির টাকা লেখিনা। একবার টাকা চেয়েছিলাম বিধায় হুমকি দিয়েছিলো তেলাপোকা ও মাছি মেরে খাবারে দিয়ে দিবে। এরপর থেকে আর টাকা চাইনি আমি। প্রভোস্টদের জানিয়েও সমাধান পাইনি; তারা শুধু বাকি দিতে মানা করেন। আমি শারীরিকভাবে হার্টের রোগী, আমার শরীরে তিনটি রিং বসানো হয়েছে, প্রতিদিন অনেক টাকার ওষুধ লাগে—এসব বিষয় বলার পরেও তারা কোনো কেয়ার করে না।’ হবিবুর রহমান হলের ডাইনিং কর্মচারি আব্দুস সামাদ, জামাল উদ্দিন, নুরুল ইসলাম, সাদ্দাম হোসেন নিপু, আলাউদ্দিন, শফিকুল ইসলামসহ কয়েকজন জানান, প্রায় তিনমাস ধরে প্রতিদিন দুজনকে চারটা খাবার পাঠান তারা। খুব কষ্টে ক্যান্টিন চালানোর পর আর এভাবে পারছেন না ডাইনিং কর্মচারীরা।

দ্রব্যমূল্যের ক্রমাগত ঊর্ধ্বগতিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাদের। অতিরিক্ত যে ভর্তা শাক থাকে সেগুলো তাদেরকে দিতে হয়। এমন চলতে থাকলে নিজেরা মারা যাবেন বলে জানিয়ে প্রশাসনের সহযোগিতা কামনা করেন তারা। টাকা না দিয়ে খাবার খাওয়ার বিষয়ে অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতা মিনহাজুল ইসলাম বলেন, ক্যান্টিনে আমার এতো টাকা বাকি নেই। বাকি খাচ্ছি এবং মাঝে মাঝে টাকা পরিশোধও করছি। তিন-চারশত টাকা হয়তো বাকি থাকতে পারে। ডাইনিং থেকে কখন আমার রুমে খাবার আসে বিষয়টি আমার জানা নেই। আরেক অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতা সোহান আহমেদ বলেন, এমন অভিযোগ দিয়ে আমাকে ফাঁসানো হচ্ছে। আমার রুমে কোনো ধরনের খাবার আসে না।

এসব অভিযোগ এনে ছাত্রলীগকে প্রশ্নবিদ্ধ করা হচ্ছে। আমার সামনের ক্যারিয়ারকে নষ্ট করতে এমন অভিযোগ আনা হচ্ছে। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান বাবু বলেন, বিষয়টি নিয়ে আমরা গতকাল রাতে বসেছিলাম। আমরা উভয়পক্ষকে ডেকে এটার সমাধান করে দিয়েছি। কিছু টাকা বাকি ছিল, সেটা আমরা দিয়ে দেওয়ার জন্য বলে দিয়েছি। ছাত্রলীগের নাম ভাঙ্গিয়ে বাকি খাওয়ায় ঘটনায় মিনহাজের বিরুদ্ধে কোন সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে কিনা? এমন প্রশ্নের জবাবে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি বলেন, ‘এক দুই হাজার টাকা একটা হলের ছেলে বাকি খেতেই পারে। আমি সেটার সমাধান করে দিয়েছি।’

সোহানের বিষয়ে শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদুল্লা-হিল-গালিব বলেন, আমি তার কাছে জেনেছি সে একজন প্রতিবন্ধী আর সাংবাদিকতার এক শিক্ষার্থীর জন্য এটার ব্যবস্থা করেছে। আমি সেটা হল প্রাধ্যক্ষের সঙ্গে বসে লিখিত আকারে করতে বলেছি। তবে টাকা না দিয়ে খাবার নিয়ে প্রতিবন্ধী ও সাংবাদিকতার শিক্ষার্থীকে খাওয়ানোর বিষয়টি অবগত নন বলে জানান হবিবুর রহমান হল ডাইনিংয়ের প্রধান বাবুর্চি আব্দুস সামাদ।

শহীদ হবিবুর রহমান হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. শরীফুল ইসলাম বলেন, ‘ডাইনিং ও ক্যান্টিনের কর্মচারীরা এ বিষয়ে আমার কাছে অভিযোগ করেছেন। আমি তাদেরকে অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতাদের বাকি বা ফ্রিতে খাবার দিতে নিষেধ করে দিয়েছি। তবুও কেন তাদেরকে তারা বাকি বা ফ্রিতে খাবার দিয়ে থাকে সেটা আমি জানি না।’