জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় এবং ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ের পর গুচ্ছ পদ্ধতির ভর্তি প্রক্রিয়া থেকে বের হয়ে আসার ঘোষণা দিয়েছে গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (বশেমুরবিপ্রবি)। বৃহস্পতিবার (০৬ এপ্রিল) বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিলের সভায় সর্বসম্মতিক্রমে এ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়৷ এর আগে গত ২৬ ফেব্রুয়ারি এ বিষয়ে শিক্ষক সমিতির পক্ষ থেকে একটি জরিপ পরিচালনা করা হয়। জরিপে প্রায় শতভাগ শিক্ষক গুচ্ছ পদ্ধতি বশেমুরবিপ্রবির ভর্তি কার্যক্রম পরিচালনার জন্য উপযোগী নয় বলে মতামত দেন এবং ৯৭.৩ শতাংশ শিক্ষক পূর্বের নিজস্ব পদ্ধতিতে ভর্তি কার্যক্রম পরিচালনার পক্ষে মতামত দেন। এছাড়া ৩ শতাংশ শিক্ষক ব্যপক পরিবর্তন সাপেক্ষে গুচ্ছ পদ্ধতিতে অংশগ্রহণ করা যেতে পারে বলে মতামত দেন। ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ তারিখে মাননীয় শিক্ষামন্ত্রীর সাথে অনুষ্ঠিত এক সভায় বর্তমান শিক্ষক সমিতির পক্ষ থেকে উক্ত জরিপের ফলাফল শিক্ষামন্ত্রীর হাতে সভা চলাকালে হস্তান্তর করা হয়। জরিপে অংশগ্রহণকারী শিক্ষকরা গুচ্ছ পদ্ধতি থেকে বের হয়ে আসার দাবির পেছনে ছয়টি কারণ উল্লেখ করেছেন। তাদের মধ্যে ৮১ শতাংশ গুচ্ছ ভর্তিতে সমন্বয়হীনতা ও দীর্ঘসূত্রিতা এবং শিক্ষার্থীদের আর্থিক ও আনুষঙ্গিক ভোগান্তিকে গুচ্ছ পদ্ধতির ভর্তি কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করতে না চাওয়ার কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। এছাড়া, ৬৩ শতাংশ একাডেমিক ক্যালেন্ডার অনুসরণে অসুবিধা, ৫৬ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের সমন্বয়হীনতা, ৫৩ শতাংশ সুনির্দিষ্ট নীতিমালার অভাব এবং ৫১ শতাংশ আর্থিক স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার অভাবকে কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। এ বিষয়ে বশেমুরবিপ্রবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি ড. সালেহ আহম্মেদ এবং সাধারণ সম্পাদক জাকিয়া সুলতানা মুক্তা সাক্ষরিত এক বিবৃতিতে বলা হয়, মঙ্গলবার (৪ এপ্রিল) বশেমুরবিপ্রবি’র শিক্ষক ক্লাবে অনুষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সাধারণ সভায় ২০২২-২০২৩ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষা “সমন্বিত (জিএসটি) বা গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা” পদ্ধতির অনুসরণে না করে পুনরায় বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব ভর্তি পরীক্ষা পদ্ধতিতে ফিরে আসার বিষয়ে সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত সিদ্ধান্ত হয়। উক্ত সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বৃহস্পতিবার (৬ এপ্রিল) বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৮ তম একাডেমিক কাউন্সিলের টেবিল এজেন্ডা হিসেবে শিক্ষক সমিতির সভাপতি, উক্ত সিদ্ধান্ত চেয়ারম্যানদের বৈঠকে আলোচনা করেন এবং সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্তটি একাডেমিক কাউন্সিলে গৃহীত হয়। বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘বশেমুরবিপ্রবি শিক্ষক সমিতি মনে করে একাডেমিক ক্যালেন্ডারের বিপর্যয় সৃষ্টিকারী ও “সমন্বিত (জিএসটি) বা গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা” পদ্ধতির কারণে উদ্ভুত সমস্যাসমূহ উক্ত পদ্ধতিকে শিক্ষার্থী ও শিক্ষাবান্ধব করার বদলে শিক্ষাক্ষেত্রে বরং অনেকক্ষেত্রে সংকট বাড়িয়েছে। অতএব বশেমুরবিপ্রবি শিক্ষক সমিতি অত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল শিক্ষকের দাবিকে সমর্থন করে অবিলম্বে উক্ত “সমন্বিত (জিএসটি) বা গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা” পদ্ধতি থেকে বের হয়ে, আসন্ন ২০২২-২০২৩ শিক্ষাবর্ষের ১ম বর্ষের শিক্ষার্থী ভর্তিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব ভর্তি পরীক্ষা পদ্ধতি অনুসরণের জন্য প্রশাসনের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছে।’ এ বিষয়ে বশেমুরবিপ্রবি উপাচার্যের সাথে মুঠোফোনে করলে বলেন, ‘তারা শিক্ষামন্ত্রীকে আগেও এ কথা বলেছিল, শিক্ষামন্ত্রী রাজি হননি। গুচ্ছ থেকে বের হওয়া এত সহজ নয়। এ বিষয়ে আমাদের শিক্ষামন্ত্রীর সাথে বসতে হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘তাদের এ সিদ্ধান্ত ইউজিসি, শিক্ষামন্ত্রী কেউই সমর্থন করবে না বলেই আমার বিশ্বাস। তারপরও আজকে তাদের নেয়া সিদ্ধান্ত আমি শিক্ষামন্ত্রীকে জানাবো। তাদের মেসেজটা আমি শুধুমাত্র পৌঁছে দিবো, এটুকুই।