কনসার্ট ঘিরে বশেমুরবিপ্রবিতে মাদকসেবিদের তান্ডব, আহত রোভার সদস্য

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বশেমুরবিপ্রবি) ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষা সমাপনী অনুষ্ঠান অদ্বিক-০৮ এর কনসার্ট ঘিরে ক্যাম্পাস জুড়ে বসে গাঁজার আসর। এসময় বহিরাগত ও মাদকসেবিদের তান্ডবে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক রোভার সদস্য গুরুতর আহত হন। তিনি আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ২০১৯-২০ সেশনের শিক্ষার্থী। ইতোমধ্যে তাকে গোপালগঞ্জ সদর হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটারে ভর্তি করা হয়েছে। সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের নৌকা চত্বর, লেকপাড়, নির্মাণাধীন কফি হাউজ, কেন্দ্রীয় খেলার মাঠ, নির্মাণাধীন মুরাল কমপ্লেক্স, নিউ মার্কেট সহ পুরো ক্যাম্পাস জুড়ে বসে গাঁজা ও মাদকসেবিদের আসর।

গাঁজার গন্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের চারপাশের পরিবেশ চরমভাবে বিঘ্নিত হয়। এছাড়াও কনসার্টের মধ্যে মাদক সেবনের পাশাপাশি বহিরাগতরা বিশ্ববিদ্যালয়ের নারী শিক্ষার্থীদের দিকে গাঁজার ধোঁয়া ছেড়ে উত্যক্ত করার পাশাপাশি গায়ে স্পর্শ করার অভিযোগ করেছেন নারী শিক্ষার্থীরা। মঙ্গলবার (৫ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় শুরু হওয়া কনসার্টের চতুর্দিকে মাদকের আসর বসলেও প্রক্টরিয়াল বডি কিংবা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের কার্যকরী কোন তৎপরতা লক্ষ্য করা যায়নি। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রশাসনের উপর ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা। ক্যাম্পাসে প্রকাশ্যে মাদক সেবনের জন্য প্রশাসনের উদাসীনতা ও নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে দায়ী করেছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ক্ষোভ প্রকাশ করে আইন বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মোঃ তুহিন বাদশা বলেন,”সন্ধ্যা থেকে ক্যাম্পাসের চিত্র দেখে মনে হয়েছে কিশোর গ্যাং এর আস্তানা এবং অন্য কোনো লোকাল এলাকার প্রোগ্রাম চলছে। গাঁজা, ইয়াবা সেবনকারীদের অধিকাংশ বহিরাগত এবং কিশোর গ্যাং এর সদস্য। তারা ওপেনলি গাঁজা নিয়ে আসর বসিয়েছিল।

আমি নিজে কয়েকজন ফ্রেন্ড এবং জুনিয়র নিয়ে কয়েকটা গ্রুপকে ছত্রভঙ্গ করেছি। প্রশাসনের সেরকম কার্যকর পদক্ষেপ দেখিনি।” এই বিষয়ে পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের ১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ওমর শরীফ বলেন, “ক্যাম্পাসে যে অনুষ্ঠান হয় সেখানে গাঁজার আসর চলতে থাকে, তবে এবার তা যেন লিমিট ক্রস করে গেছে। একটা বিশ্ববিদ্যালয়ে এটা কিভাবে চলতে পারে তা আমার জানা নেই। আমরা জানতাম বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার একটি জায়গা কিন্তু আমরা কোন শিক্ষায় শিক্ষিত হচ্ছি আসলে আমাদের জানা নেই। প্রশাসন আসলে দেখেও চুপ থাকে বুঝি না। ন্যূনতম দায়বদ্ধতা যদি থাকে তাহলে মাদকের যে অভয়ারণ্য তৈরী হচ্ছে সেগুলা যদি নিয়ন্ত্রণ করতে না পারে তাহলে প্রশাসনের উচিত দায় স্বীকার করে তাদের পদ থেকে সরে দাঁড়ানো। ইতোমধ্যে বিভিন্ন কারণে তাদের অব্যবস্থাপনা দেখার সুযোগ হয়েছে।

আমদের স্বপ্নের ক্যাম্পাস মাদকের অভয়ারণ্য হোক এটা আমরা কখনো চাই না।” অবাধে মাদকসেবন ও মেয়েদের গায়ে স্পর্শ করার পরেও প্রক্টরিয়াল বডির দৃশ্যমান পদক্ষেপ না নেওয়া সহ সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. মোঃ কামরুজ্জামান বলেন, “দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি এটা সঠিক নয়। আমি সহ প্রক্টরিয়াল বডি, আনসার সদস্য ও পুলিশ নিয়ে মেয়েদের হল, লেকপাড়, মাঠে গিয়ে বাইরের কিছু পোলাপান এসেছিলো তাদেরকে বের করেছি। আমাদের লোকবল অনেক কম বলে এই গ্যাঞ্জামের ভিতরে তো আমরা যেতে পারি নাই। বহিরাগতরা মেইনগেটের টিন ভেঙ্গে প্রবেশ করেছে। তোমাদের শিক্ষার্থীরাও সাথে করে অনেক বহিরাগতকে নিয়ে আসছে। তোমরা পদক্ষেপ নাও যাতে বিশ্ববিদ্যালয়ে এই ধরনের প্রোগ্রাম গুলো না হয়ে যেন বিভাগ ভিত্তিক হয়।”