বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে কেন্দ্র করে দীর্ঘ তিন মাস ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ থাকার পর অবশেষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) সব ধরনের শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়েছে। রোববার (২২ সেপ্টেম্বর) সকাল ৮টা থেকে বিভিন্ন বিভাগে ক্লাস শুরু হতে দেখা গেছে। এছাড়া, ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের ক্লাস আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হবে বলে জানা গেছে।
এর আগে, গত ৯ সেপ্টেম্বর রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমদ খানের সভাপতিত্বে অধ্যাপক আব্দুল মতিন চৌধুরী ভার্চ্যুয়াল ক্লাসরুমে আবাসিক হলের প্রাধ্যক্ষদের সঙ্গে আয়োজিত বৈঠকে চারটি পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়।
সেগুলো হলো- ২২ সেপ্টেম্বর থেকে অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম শুরু করার জন্য প্রত্যেক হল প্রাধ্যক্ষ যথাযথ ব্যবস্থা নেবেন; ২০১৭–১৮ ভর্তি সেশন ও পূর্ববর্তী সেশনের যে সব শিক্ষার্থীর ইতোমধ্যে মাস্টার্স পরীক্ষা শেষ হয়েছে, তারা ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে হল ত্যাগ করবেন; আবাসিক হলে সব ধরনের গণরুম প্রথা বিলুপ্ত; হলের গেমস রুমকে সহশিক্ষামূলক কার্যক্রমে ব্যবহার উপযোগী হিসেবে গড়ে তোলা হবে।
জানা গেছে, ঈদুল আজহা ও গ্রীষ্মকালীন ছুটি মিলিয়ে চলতি বছরের গত ২ জুন থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত বন্ধ ছিল ঢাবি। তবে এ সময়ে বিভিন্ন বিভাগে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে। পরে ১ জুলাই থেকে সর্বজনীন পেনশনের প্রত্যয় স্কিম বাতিলের দাবিতে শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ঘোষিত কর্মবিরতিতে বন্ধ হয়ে যায় ঢাবির ক্লাস-পরীক্ষা।
এরপর দেশব্যাপী শুরু হয় শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কার আন্দোলন। শিক্ষার্থীরা কোটা সংস্কারের দাবিতে ৭ জুলাই থেকে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করেন। এ আন্দোলন তীব্র হলে ১৭ জুলাই অনির্দিষ্টকালের জন্য হলসহ সবকিছু বন্ধ করে দেওয়া হয়। ছাত্র জনতার গণঅভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গত ৭ আগস্ট থেকেই হলে উঠতে শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। তবে শিক্ষার্থীরা হলে উঠলেও ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ ছিল।
এদিকে, দীর্ঘ প্রায় সাড়ে তিন মাস পর ক্লাসে ফিরতে পেরে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষার্থীরা বলেন, গ্রীষ্মকালিন ও ঈদুল আযহার ছুটির পর শিক্ষকদের আন্দোলন শুরু হয়। এরপর শুরু হয় আমাদের বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন। দেশ ফ্যাসিবাদের কবল থেকে নতুন করে স্বাধীন হয়েছে। স্বাধীনভাবে ক্লাসে ফিরতে পেরে খুব ভালো লাগছে। আমরা আসলে বাড়ি থেকে বের হয়েছি লেখাপড়া করার উদ্দেশ্যে। কিন্তু বৈষম্যের কারণে রাজপথে নামতে হয়েছে। আমাদের কাজ লেখাপড়া ও গবেষণা করা। দীর্ঘদিন শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হওয়ায় খুব ভালো লাগছে।
ঢাবির নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী আহসান খান বলেন, অনেকদিন পর আজ ক্লাস কার্যক্রম শুরু হলো। এক অন্য পরিবেশে এবং অন্যরকম ভালোলাগা কাজ করছে । তবে বড় একটা শঙ্কা হল আমরা সেশনজটে পড়তে যাচ্ছি । বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের কাছে দাবি থাকবে, এটা নিয়ে একটু গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করার। যেমন- সপ্তাহের বন্ধের দিনগুলোতে ক্লাস নেওয়া যেতে পারে ।
তিনি বলেন, ক্লাস শুরুর আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে আমাদের প্রত্যাশা ছিল, দলীয় ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করে ডাকসু সংস্কারের মতো কিছু নিয়ে স্পষ্ট পদক্ষেপের । যদি এটা হতো, তাহলে হয়ত আরও ভালো হতো।
ভাষাবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী আকিব মাহমুদ রচি বলেন, আজ প্রায় সাড়ে তিন মাসেরও বেশি সময় পরে আমাদের বিভাগ তথা পুরো বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বাভাবিক একাডেমিক কার্যক্রম শুরু হলো। বিগত সময়ে শিক্ষকগণের পেনশন বৈষম্য ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জন্য শিক্ষা কার্যক্রম পুরোপুরিভাবে স্থবির ছিল। এমনকি শিক্ষার্থীদের ভিতরেও এ স্থবিরতা ও সেশনজট নিয়ে নিয়ে ভীতি ছিল। আজ স্বাভাবিক কার্যক্রম শুরু হওয়ায় সেটা অনেকটাই কেটে গেছে।
তিনি বলেন, সবাই উৎফুল্লভাবে ক্লাসে অংশগ্রহণ করছে, প্রিয় বন্ধুদের সঙ্গে দেখা, আড্ডা দেওয়া, কুশল বিনিময় করছে! তবে অনেকের যথাসময়ের সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা পিছিয়ে গেছে। অনেকের যথাসময়ে নতুন সেমিস্টার শুরু হয়নি। মূল্যবান শিক্ষাজীবনের মধ্যে থেকে চার মাস হারিয়ে গেছে। এখন প্রত্যেকটা বিভাগের উচিৎ বন্ধ থাকা পরীক্ষাগুলো দ্রুত নিয়ে নেওয়া এবং রুটিনে ক্লাসের পরিমাণ বৃদ্ধি করে হলেও দ্রুত সেমিস্টার শেষ করা।