শরীর বিষমুক্ত রাখে কিশমিশ ভেজানো পানি

আদিকাল থেকে কিশমিশ কর্মশক্তির চমৎকার উৎস হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। কারণ মিষ্টি এ শুকনো ফলটিতে আছে বিশেষ কিছু জাদুকরী গুণ বা উপকারিতা যা আপনার জীবনকে বদলে দিতে পারে। এমনটাই বলছেন পুষ্টিবিদরা। কিশমিশ এমনই একটি খাবার যেখানে বহু রোগ থেকে দূরে থাকার চাবিকাঠি রয়েছে। নানা ধরনের শারীরিক সমস্যা থেকে মুক্তি দিতে পারে এক মুঠো ভেষজ ঔষধি কিশমিশ। কিশমিশ রোদে বা ড্রায়ারে শুকানো আঙুর। রঙ সোনালী কিংবা গাঢ় বাদামী। ইংরেজিতে এর নাম রেইজিন।

কিশমিশে এমন কিছু গুনাগুন আছে, যা জানলে আপনার চোখ কপালে উঠবে। তাই আপনার যদি কিশমিশ পছন্দ না হয়ে থাকে, তাহলে আজ থেকেই খেতে শুরু করুন।

ভেজানো কিশমিশ স্বাস্থ্যের জন্যও উপকারী। কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায়, ভেজানো কিশমিশগুলো খেয়ে নিলেও পানিটা ফেলে দেন। এখানেই কিন্তু ভুল করেন। কিসমিস না-খেয়ে শুধু কিসমিসের পানি খেলেও ভিটামিন ও মিনারেল শরীরে প্রবেশ করে।

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, কিশমিশ পানিতে ভিজিয়ে রাখলে তার গুণাগুণ আরও বেড়ে যায়। এর ফলে এতে উপস্থিত অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও পুষ্টি উপাদানের পরিমাণও বাড়ে।

ফাইবার এবং প্রয়োজনীয় পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ কিশমিশ শরীরে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায়। সেই সঙ্গে হৃদরোগের ঝুঁকিও দূর করে। তাছাড়া কিশমিশে অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল গুণ রয়েছে। এটি মুখের বাজে গন্ধকে দূর করে।

পুষ্টিবিদদের মতে, সোনালি ও বাদামি রঙের চুপসানো ভাঁজ হওয়া ফলটি খুবই শক্তিদায়ক। এটি তৈরি করা হয় সূর্যের তাপে। এটি রক্তে শর্করার মাত্রায় ঝামেলা তৈরি করে না। এটি খেলে শরীরের রক্ত দ্রুত বৃদ্ধি পায়, পিত্ত ও বায়ুর সমস্যা দূর হয়। এটি হৃৎপিণ্ডের জন্যও অনেক উপকারী।

প্রতি ১০০ গ্রাম কিশমিশে রয়েছে এনার্জি ৩০৪ কিলোক্যালরি, কার্বোহাইড্রেট ৭৪.৬ গ্রাম, ডায়েটরি ফাইবার ১.১ গ্রাম, ফ্যাট ০.৩ গ্রাম, প্রোটিন ১.৮ গ্রাম, ক্যালসিয়াম ৮৭ মিলিগ্রাম, আয়রন ৭.৭ মিলিগ্রাম, পটাসিয়াম ৭৮ মিলিগ্রাম ও সোডিয়াম ২০.৪ মিলিগ্রাম। এছাড়া কিশমিশ নানা গুণে সমৃদ্ধ।

পুষ্টিবিদদের মতে, ভেজানো কিশমিশের মতোই পুষ্টিকর কিশমিশ ভেজানো পানি। কিশমিশ ভেজানো পানি ডিটক্স ওয়াটার হিসেবে কাজ করে। এটি শরীরে জমে থাকা টক্সিন বের করে দেয়।

শরীরকে হাইড্রেটেড রাখতে সাহায্য করে কিশমিশ ভেজানো জল। এমনকি হজমে সহায়তা করে এই জল। কিশমিশ ভেজানো জল খেলে আর কী-কী উপকারিতা পাওয়া যায়, দেখে নিন এক নজরে।

কিশমিশ ভেজানো পানিতে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। এটি ফ্রি র‍্যাডিকেলের হাত থেকে শরীরকে রক্ষা করে। এছাড়াও এই জলে থাকা ভিটামিন ও মিনারেল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা উন্নত করে। এর মধ্যে থাকা ভিটামিন সি রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা উন্নত করতেও সাহায্য করে।

ডিটক্স ওয়াটার হিসেবে কিশমিশ ভেজানো পানি খেলে শরীরে এনার্জি লেভেল বাড়ে, শারীরিক প্রদাহ কমে এবং লিভারের কার্যকারিতাকে উন্নত করে। এতে ইমিউনিটি বাড়ে এবং ওজন কমে।

উচ্চ রক্তচাপের সমস্যায় ভুগলে অবশ্যই কিশমিশ ভেজানো পানি পান করুন। এই পানির মধ্যে পটাশিয়াম রয়েছে। এটি রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে। এছাড়া এই পানীয়তে আয়রন রয়েছে, যা রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।

কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যায় ভুগলে কিশমিশ ভেজানো পানি পান করুন। এই পানীয়তে থাকা ফাইবার পাচনতন্ত্র ও অন্ত্রের স্বাস্থ্য উন্নত করে। শরীরে জমে থাকা সমস্ত দূষিত পদার্থ বের করে দিতে সাহায্য করে কিশমিশ ভেজানো জল।

কিসমিস ভেজানো পানি হার্ট ভালো রাখে। শরীর থেকে ক্ষতিকারক কোলেস্টেরল দূর করে দেয়। রয়েছে ভিটামিন ও মিনারেল। ভালো রাখে লিভার-কিডনি। এমনকী টক্সিনও বের করে দেয় শরীর থেকে। সঙ্গে এই পানি হজম শক্তি বাড়িয়ে দেয়।

কিসমিস ভেজানো পানিতে রয়েছে কার্বোহাইট্রেট, যা এনার্জি জোগায়। গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে, কিসমিস ভেজানো পানি খেলে শরীরে জৈব রাসায়নিক প্রক্রিয়া শুরু হয়। ফলে রক্ত পরিশোধিত হতে শুরু করে। কিসমিস থেকে পাওয়া যায় ভরপুর এনার্জি, যা সারাদিন আপনাকে রাখে প্রাণবন্ত।

সুস্থ থাকার জন্য ভালো হজমশক্তি জরুরি। এক্ষেত্রে কিসমিস হজমশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। রোজ রাতে এক গ্লাস পানিতে কিসমিস ভিজিয়ে রাখুন। পরের দিন ভোরে সেই কিসমিস খান। নিজেই তারপর তফাত খেয়াল করুন। দিন পনেরো পরেই ফলাফল বুঝতে পারবেন।

আপনি যদি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বড়াতে চান। তাহলে ভেজা কিসমিস ও তার পানি নিয়মিত খান। এর মধ্যে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। যা রোগের সঙ্গে লড়াই করার ক্ষমতা বা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।

শরীরকে দূষণমুক্ত করতে কিসমিস খান নিয়মিত। চারিদিকের দূষণে আপনি যখন জেরবার তখন সকালে খালি পেটে ভেজানো কিসমিস খেলে শরীর বিষমুক্ত হবে। ভেজানো কিসমিসের পাশাপাশি কিসমিস ভেজানো পানিও খেতে পারেন।

নিয়মিত কিসমিস খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য কমে। আপনি যদি পেটের সমস্যায় নিয়মিত ভোগেন। তাহলে প্রতিদিন সকালে খালিপেটে ভেজানো কিসমিস খান। যারা কোষ্ঠকাঠিন্যে কষ্ট পান। তারা ওষুধের বদলে নিয়মিত কিসমিস খেয়ে দেখুন। শিগগিরেই সুফল পাবেন।

হাই ব্লাড প্রেসার বা উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে কিসমিস ভেজা পানির ভূমিকা রয়েছে। উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের প্রাকৃতিক পদ্ধতিগুলোর মধ্যে একটি কিসমিস। এর মধ্যে থাকা পটাসিয়াম হাই ব্লাড প্রেসার বশে রাখে। রক্তচাপ স্বাভাবিক রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে কিশমিশের জল। কারণ, এই পানীয়ের মধ্যে রয়েছে পটাশিয়াম। রক্তে আয়রনের অভাব হলে নিয়মিত কিশমিশ ভেজানো জল খাওয়া যেতে পারে।

অন্ত্র ভাল রাখতে, কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দূর করতে ফাইবার প্রয়োজন। কিশমিশের মধ্যে থাকা ফাইবার সহজপাচ্য হয়ে ওঠে পানিতে ভিজলে। সেই জল নিয়মিত খেলে পেট ভাল থাকে।

অস্বাস্থ্যকর খাওয়াদাওয়া, ঘরে-বাইরে নানা রকম মানসিক চাপ থেকে প্রতিদিন শরীরে টক্সিন জমা হতে থাকে। কিশমিশে থাকা অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট, পলিফেনল এই টক্সিন দূর করতে সাহায্য করে।

শরীরে আয়রনের ঘাটতি দূর করে কিশমিশ। মহিলাদের মধ্যে রক্তাল্পতার সমস্যা দেখা যায় বেশি। পর্যাপ্ত পরিমাণে লোহিত কণিকা তৈরি না হলে, রক্তাল্পতার সমস্যা দেখা যায়। কিশমিশ ভেজানো জল এই সমস্যা অনেকটাই নিয়ন্ত্রণ করে। স্বাভাবিক ভাবেই লোহিত কণিকা উৎপাদনে সাহায্য করে কিশমিশ।

সাধারণত তৈলাক্ত ত্বকেই ব্রণের উপদ্রব বেশী দেখা যায়। অর্থাৎ তৈলাক্ত ত্বক ব্রণের একটি অন্যতম প্রধান কারণ। কিশমিশ ত্বকের তেল উৎপাদনের ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। আপনার ত্বকের তেলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে এটি ছিদ্র বন্ধ হয়ে যাওয়া রোধ করে। এর ফলে ব্রণ তৈরির প্রবণতা অনেক পরিমাণে কমিয়ে আনতে পারে।

ডিহাইড্রেটেড ত্বক ব্রণের সমস্যা বাড়িয়ে তুলতে পারে, কারণ আপনার শরীর আদ্রতার অভাব পূরণ করার জন্য অতিরিক্ত তেল উৎপাদন করা শুরু করে যাতে পানি শুন্যতার ক্ষতি পূরণ হয়। কিশমিশ ভেজানো পানিতে প্রাকৃতিক শর্করা এবং হাইড্রেটিং বৈশিষ্ট্য থাকায় আপনার ত্বককে ভেতর থেকে ভালোভাবে হাইড্রেটেড রাখতে পারে।

কিশমিশে ক্যালোরির মাত্রা কম থাকে। কিশমিশে থাকা প্রাকৃতিক শর্করা ও লেপটিন দীর্ঘক্ষণ পেট ভরাট রাখে। লেপটিন ফ্যাট ঝরাতেও সাহায্য করে। ব্যায়ামের আগে কিশমিশ খেলে শরীরে দ্রুত শক্তির সঞ্চার হয়। কিশমিশ ভেজোনো পানি খেলেও আপনি শরীরচর্চা করার জন্য প্রয়োজনীয় শক্তি পাবেন।

কিশমিশ ভেজানো পানি পান করার সঠিক নিয়ম

১০০ গ্রাম কিশমিশ ভালো করে ধুয়ে এক গ্লাস পানিতে সারা রাত ভিজিয়ে রাখুন। সকালে সেই পানি ছেঁকে খালি পেটে পান করুন। ভালো ফল পেতে ছাঁকা পানি খানিকটা গরম করেও পান করতে পারেন। তবে এই পানীয়র পর আধ ঘণ্টা আর কিছু খাবেন না। সপ্তাহে পাঁচ দিন এই পানি পান করলে শারীরিক নানা সমস্যা থেকে রেহাই পেতে পারেন।