পুরুষদের তুলনায় নারীদের বিষণ্নতার ঝুঁকি বেশি!

ব্যস্ত জীবনধারা ও অনিয়মিত রুটিন সরাসরি প্রভাব ফেলছে আমাদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যে। যার মধ্যে অন্যতম একটি সমস্যা হলো ডিপ্রেশন বা বিষণ্নতা। বর্তমান সমাজে ঘরে ঘরে এই সমস্যা দেখা যাচ্ছে, যা আমাদের মানসিক সুস্থতা ও সামগ্রিক জীবনযাপনকে বিপন্ন করছে। গবেষণায় দেখা গেছে, পুরুষদের তুলনায় নারীদের বিষণ্নতার ঝুঁকি অনেক বেশি।তবে এর কারণগুলো কী এবং এই সমস্যাকে প্রতিরোধ করার উপায় কী, তা জানা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

নারীদের মধ্যে বিষণ্নতার কারণ

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নারীদের বিষণ্নতা বাড়ার পেছনে রয়েছে বিভিন্ন শারীরিক ও মানসিক কারণ। শরীরে হরমোনের ভারসাম্যহীনতা, মাসিক চক্র, গর্ভাবস্থা, বন্ধ্যাত্ব এবং মেনোপজ—এই প্রতিটি ধাপই বিষণ্নতার ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলতে পারে। এ ছাড়া সামাজিক ও সাংস্কৃতিক চাপ, সম্পর্কের টানাপোড়েন এবং পারিবারিক দায়িত্বের কারণে মহিলাদের মানসিক চাপের মাত্রা অনেক বেশি।সামাজিক নির্ভরতা এবং আত্ম-পরিচয়ের সমস্যাও মহিলাদের বিষণ্নতার কারণ হতে পারে।

বিষণ্নতার লক্ষণ

বিষণ্নতা প্রথমে স্বাভাবিক কাজকর্মের প্রতি আগ্রহ হারানো এবং হতাশার অনুভূতি দিয়ে শুরু হয়। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সমস্যা বেড়ে যেতে পারে। নারীদের মধ্যে বিষণ্নতার সাধারণ লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে—দুঃখ, ঘুমের সমস্যা, ক্লান্তি, ওজন হ্রাস বা বাড়া, অতিরিক্ত কান্না, রাগ, সামাজিক বিচ্ছিন্নতা এবং যৌন আকাঙ্ক্ষায় হ্রাস।প্রাথমিক পর্যায়ে চিকিৎসা না নিলে এসব সমস্যা তীব্র আকার ধারণ করতে পারে এবং আত্মহত্যার প্রবণতাও দেখা দিতে পারে।

বিষণ্নতা প্রতিরোধের উপায়

দৈনন্দিন রুটিনে পরিবর্তন আনুন। নিয়মিত শরীরচর্চা, স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস এবং পর্যাপ্ত ঘুম মানসিক স্বাস্থ্য উন্নত করে। বিষণ্নতার সময়ে বন্ধু, পরিবারের সাপোর্ট খুব গুরুত্বপূর্ণ। সমাজের সহায়তা বিষণ্নতা কাটিয়ে ওঠার প্রক্রিয়াকে সহজ করে তোলে।হরমোনের ভারসাম্য রক্ষা মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য সহায়ক। প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে হরমোনের ভারসাম্য রক্ষার জন্য স্বাস্থ্যকর খাবার ও জীবনধারা বজায় রাখা প্রয়োজন। বিষণ্নতার লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত একজন মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন। প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে থেরাপি ও ওষুধের মাধ্যমে বিষণ্নতা নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে। সৃজনশীল কার্যকলাপে যুক্ত থাকা যেমন—পাঠ্যপুস্তক পড়া, গান শোনা বা আঁকাআঁকি করা বিষণ্নতার সময় মনকে শান্ত রাখতে সাহায্য করে।

বিষণ্নতা এমন একটি মানসিক সমস্যা যা অনেকের জীবনে নীরবে প্রভাব ফেলছে। এটি একটি চিকিৎসাযোগ্য রোগ, এবং সঠিক সময়ে চিকিৎসা ও সহায়তার মাধ্যমে বিষণ্নতা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।