ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে তালের শাঁস

প্রকৃতিতে শুরু হয়েছে মধু মাস। এই সময়ে বাজারে নানা রকম রসালো ফলের দেখা মেলে। তাল তার মধ্যে একটি। নরম তুলতুলে, রসালো ও মিষ্টি তালের শাঁস অনেকেরই বেশ পছন্দের। তালের ফল এবং বীজ দুইই বাঙালি খাদ্য। কাঁচা তালের শাঁস বাংলাদেশসহ এশিয়ার অনেক দেশে জনপ্রিয় খাবার। কেবল খেতেই নয়, তালের শাঁসের রয়েছে অনেক উপকারিতাও। বাংলাদেশের ময়মনসিংহ, খুলনা, ফরিদপুর, রাজশাহী, গাজীপুরে তালের ব্যাপক চাষ হলেও ফলটির আদি নিবাস আফ্রিকা।

পাম গোত্রের অন্যতম দীর্ঘ উদ্ভিদে পাওয়া যায়। তাল উদ্ভিদ প্রাকৃতিক প্রতিকূলতা থেকে গাছকে রক্ষা ও ভূমির ক্ষয় রোধ করে। বহুকাল আগে এই দেশে তার আগমন। বিজ্ঞানীরা নাম দিয়েছেন বোরাসুস ফ্লাবেলিয়ার। খুবই ধীরে বাড়ে। দীর্ঘ হয়ে ফল দিতে সময় নেয় অন্তত দশ বছর। বসন্তের শেষে ফুল ধরে ফল হয়। তালের যে বীজও খাওয়া হয় তা তালশাঁস নামে বেশি পরিচিত। প্রতিটি তালে দুই থেকে তিনটি শাঁস হয়। গ্রীষ্মের সময় কচি অবস্থায় তালের শাঁস ব্যাপক চাহিদা থাকে গ্রাম থেকে শহর পর্যন্ত।

গরমে তালের শাঁস খেলে বিভিন্ন রোগ থেকে মুক্তি মিলবে। সেই সঙ্গে বাড়বে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা। শুধু গ্রীষ্মকালেই বাজারে কচি তাল দেখতে পাওয়া যায়। এর নরম কচি শাঁস খেতে ছোট বড় সবাই পছন্দ করে।

তালের শাঁসকে নারিকেলের মতই পুষ্টিকর বলে বিবেচনা করা হয়। এটি খেতে খুবই সুস্বাদু। এতে প্রচুর পরিমাণ পানিও থাকে। যা অনেকটা ডাবের পানির মতো। এতে প্রচুর পরিমাণ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ভিটামিন, ফাইবার এবং খনিজ উপাদান থাকে।

পুষ্টিবিদদের মতে, ডাবের পানি এবং তালের শাঁসের গুণাগুণ একই রকমের। দুইটিই খোলসের ভিতরে থাকে। ডাবের পানির পুরোটাই তরল, অন্যদিকে তালের শাঁসে কিছুটা শক্ত অংশ থাকে।

মিষ্টি স্বাদের কচি তালের শাঁস শুধু খেতেই সুস্বাদু নয় বরং পুষ্টিতেও অনেক ভরপুর। প্রতি ১০০ গ্রাম তালের শাঁসে আছে জলীয় অংশ ৮৭ দশমিক ছয় গ্রাম, আমিষ শূন্য দশমিক আট গ্রাম, ফ্যাট শূন্য দশমিক পাঁচ গ্রাম, কার্বোহাইড্রেট ১০ দশমিক নয় গ্রাম, খাদ্য আঁশ এক গ্রাম, ক্যালসিয়াম ২৭ মিলিগ্রাম, ফসফরাস ৩০ মিলিগ্রাম, আয়রন এক মিলিগ্রাম, থায়ামিন শূন্য দশমিক চার গ্রাম, রিবোফাভিন শূন্য দশমিক দুই মিলিগ্রাম, নিয়াসিন শূন্য দশমিক তিন মিলিগ্রাম, ভিটামিন সি মিলিগ্রাম। এসব উপাদান আমাদের শরীরকে নানা রোগ থেকে রক্ষা করাসহ রোগ প্রতিরোধে সহায়তা করে। শারীরবৃত্তীয় কাজে অংশ নেওয়া এই তালশাঁসে যেসব পুষ্টিগুণ তা জেনে নেওয়া যাক।

ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করে

তাল একটি সুস্বাদু ও পুষ্টি সমৃদ্ধ ফল হলেও খাদ্য কুসংস্কারের কারণে অনেক ডায়াবেটিস আক্রান্ত ব্যক্তি পাকা তালের রস অথবা এর শাঁস খাওয়া থেকে বিরত থাকেন। তালের শাঁস সুগারের রোগীদের পক্ষে ভালো। ভিটামিন ও খনিজের পাশাপাশি সুগার ও ক্যালোরি কম। তালের শাঁস ফাইটোনিট্রিয়েন্টস, কার্বোহাইড্রেট এবং ক্যালসিয়ামের পাওয়ার হাউস। এতে ন্যূনতম পরিমাণে ফাইবার রয়েছে, এতে ভিটামিন এ, সি, বি ৭, কে এবং আয়রন রয়েছে যা স্বাস্থ্যের জন্য চরম সহায়ক। গবেষণায় দেখা যায়- পাকা তালের রস, কচি তালের শাঁস, অংকুরিত তালের আঁটির ভেতরের সাদা অংশের মধ্যে প্রচুর পরিমাণ পুষ্টিগুণ ও ফাইটোকেমিক্যাল রয়েছে। যার কোনোটিই ডায়াবেটিসের মাত্রা তো বাড়ায়ই না বরং উল্লেখযোগ্য মাত্রায় কমাতে সাহায্য করে। স্বাভাবিক খাবারের পাশাপাশি এ দু’টি উপাদান পরিমিত মাত্রায় প্রয়োগ করলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে চলে আসে।

শরীরে পানিশূন্যতা রোধ করে

গরমে শরীরকে ঠান্ডা রাখতে সাহায্য করে তালের শাঁস। প্রচণ্ড গরমে তালের কচি শাঁস এবং এর ভেতরের মিষ্টি পানি তৃষ্ণা মিটিয়ে শরীরে এনে দেয় আরামদায়ক অনুভূতি। এছাড়া এ সময় তাপমাত্রার কারণে ত্বক শুষ্ক হয়ে যাওয়া, চুল পড়া ইত্যাদি রোধ করতে সাহায্য করে এটি। অতিরিক্ত ঘামের ফলে শরীর থেকে যে পানি বেরিয়ে যায় তা পূরণ করতে সাহায্য করে তালের শাঁস।

কোষ্টকাঠিন্য কমায়

পাকস্থলীর বিভিন্ন সমস্যা এবং হজমের সহায়ক হিসেবে প্রাকৃতিক ওষুধের মতো কাজ করে তালের শাঁস। এটা কোষ্টকাঠিন্য কমায় এবং হজমশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। আলসার এবং এসিডিটি দূর করতেও সাহায্য করে এটি। গভর্বতী নারীদের হজমের জন্য এটি বেশ উপকারী।

স্মৃতিশক্তি ভালো রাখে

তালের শাঁস আমাদের স্মৃতিশক্তি ভালো রাখে এবং শারীরিক স্বাস্থ্য রক্ষা করে থাকে।

দাঁতের ক্ষয় রোধ করে

বমি ভাব আর মুখের অরুচিও দূর করতে খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তালের শাঁসে ক্যালসিয়াম থাকায় এটি দাঁতের জন্য অনেক ভালো। দাঁতের এনামেল ভালো রাখে এবং দাঁতের ক্ষয় রোধ করে।

রক্তশূন্যতা দূর করে

তালের শাঁস হাড়কে শক্তিশালী করে তোলে। কচি তালের শাঁস রক্তশূন্যতা দূরীকরণে দারুণ ভূমিকা রাখে। আপনার যদি অ্যানিমিয়া বা রক্তাল্পতা থেকে থাকে, তাহলে তা দূর করতে খান কচি তালের শাঁস।

চোখের জন্য অত্যন্ত উপকারী

তালে শাঁসে আছে পটাশিয়াম, ক্যালশিয়াম, আয়রন, সালফার, সেলেনিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, কপার এবং ম্যাগনেসিয়ামের মতো বেশ কিছু উপকারী উপাদান। যা আমাদের চোখের জন্য অত্যন্ত উপকারী। এছাড়াও চোখের এলার্জিসহ অন্যান্য চোখের রোগের প্রকোপ কমাতে তাল অনেক কার্যকরী। একই সাথে রাতকানা রোগ থেকে চিরতরে রেহাই পাওয়া যায়। এছাড়াও চোখের এলার্জি সহ অন্যান্য চোখের রোগের প্রকোপ কমাতে তালের শাঁস অনেক কার্যকরী।

লিভারের সমস্যা দূর হয়

তালের শাঁস খেলে লিভারের সমস্যা দূর হয়। এতে থাকা ভিটামিন সি ও বি কমপ্লেক্স খাবারে রুচি বাড়াতে সাহায্য করে।

রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে

তালে শাঁস রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। এটি খেলে শরীরে নাইট্রেটের পরিমাণ বেড়ে যায়, যা প্রাকৃতিক উপায়ে আমাদের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।

ত্বকের সমস্যায় কার্যকর

গরমের কারণে ত্বকে কোনো ধরনের র‌্যাশ বা ব্রণ দেখা দিলে তালের শাঁস মুখে লাগাতে পারেন। এতে ত্বকের সমস্যা কমে যাবে।

ক্যানসারের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে

ক্যালরির পরিমাণ কম থাকায় তালের শাঁস ওজন কমাতে ভূমিকা রাখে। এতে প্রচুর পরিমাণে পানি থাকায় এটি দীর্ঘক্ষণ পেট ভরা রাখতে সাহায্য করে। এতে প্রচুর পরিমাণ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকায় এটি হৃদরোগ এবং ক্যানসারের ঝুঁকি কমাতেও সাহায্য করে।