১৭ কোটি টাকার কাজে অনিয়মের অভিযোগ

রাজশাহীর জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের ১৭ কোটি টাকার একটি কাজে নির্বাহী প্রকৌশলী হারুন-অর-রশিদের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলের স্থানীয় সাতজন ঠিকাদার তাঁর বিরুদ্ধে ওই অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলীসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের কাছে এ ব্যাপারে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।

লিখিত অভিযোগে বলা হয়েছে, গত নভেম্বরে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল রাজশাহী থেকে ২৩টি গ্রুপের কাজের জন্য দরপত্র আহ্বান করার পর ১৬টি গ্রুপের কাজ অনিয়ম করে ওই প্রকৌশলী দুই ঠিকাদারের যৌথ মালিকাধীন দুটি প্রতিষ্ঠানকে পাইয়ে দিয়েছেন। তাঁরা হলেন ঢাকার ব্যবসায়ী হারুন-অর-রশিদ এবং তাঁর সহযোগী সিরাজুল হক ভুঁইয়া।

তাঁদের দুটি প্রতিষ্ঠান ১৭ কোটি টাকার মধ্যে মোট ১৩ কোটি টাকার কাজ পেয়েছে। এর মধ্যে ১১টি গ্রুপের কাজ পেয়েছে এসএম এন্টারপ্রাইজ এবং পাঁচটি গ্রুপের কাজ পেয়েছে কথা এন্টারপ্রাইজ। এসব কাজ এখন চলমান রয়েছে।

অভিযোগে ঠিকাদাররা উল্লেখ করেন, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের রাজশাহী বিভাগীয় কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী হারুন-অর-রশিদ ঢাকার ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান এসএম এন্টারপ্রাইজ এবং কথা এন্টারপ্রাইজকে বিগত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের এক নোটিশে ২৩টি গ্রুপের কাজের মধ্যে ১৬টি গ্রুপের কাজ পাইয়ে দিয়েছেন।

১৭ কোটি টাকার মধ্যে প্রায় ১৩ কোটি টাকার সাবমার্সিবল বা নিমজ্জিত পানির পাম্প বসানোর কাজ অনিয়মের মাধ্যমে ওই দুটি প্রতিষ্ঠানকে পাইয়ে দিয়েছেন। কাজ পাওয়ার ক্ষেত্রে প্রকৌশলী গোপনে প্রাক্কলন মূল্যের সব তথ্য ওই দুই ঠিকাদারকে সরবরাহ করেন। তদন্ত করলে তাঁর এই দুর্নীতিটির প্রমাণ মিলবে বলে অভিযোগে দাবি করা হয়।

ঠিকাদারদের অভিযোগ, এর আগেও নির্বাহী প্রকৌশলী হারুন-অর-রশিদের যেখানে পদায়ন হয়েছে, সেখানেই তিনি তাঁর বন্ধু হারুন-অর-রশিদকে কাজ পাইয়ে দিয়েছেন।তিনি রাজশাহীতে যোগদানের পর থেকে নিয়মের তোয়াক্কা না করে গোপনে দরপত্রের প্রাক্কলন মূল্যের তথ্য ফাঁস করে একক সিদ্ধান্তে তাঁর বন্ধুকে কাজ পাইয়ে দিচ্ছেন।

সোহাগ নামের অভিযোগকারী একজন ঠিকাদার বলেন, ‘গোপনে প্রাক্কলন মূল্যের তথ্য কোনো ঠিকাদারকে না দিলে তাঁর পক্ষে ১১টি গ্রুপের কাজ পাওয়া সম্ভব না। ২৩টি গ্রুপের কাজের মধ্যে কিভাবে ১৬টি কাজ একই ঠিকাদারের অধীনে থাকা দুটি প্রতিষ্ঠান পায়, তদন্ত করলে তা বেরিয়ে আসবে। আমরা এই অনিয়মের বিচার চাই। এ জন্য আমরা লিখিত অভিযোগ করেছি।

এ বিষয়ে রাজশাহী জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী হারুন-অর-রশিদ বলেন, ‘এর আগের বছরও ১৯টি গ্রুপের কাজ একই ঠিকাদার পেয়েছেন বলে আমি জানি। ঠিকাদাররা একজোট হয়ে এক প্রতিষ্ঠানকে কাজ পাইয়ে দেওয়ার সুযোগ দিলে আমার কী করার আছে? তবে এসএম এন্টারপ্রাইজ এবং কথা এন্টারপ্রাইজের সঙ্গে আমার কোনো সম্পৃক্ততা নাই। ঠিকাদার হারুন-অর-রশিদের সঙ্গেও আমার সম্পর্ক নেই। তিনি আমার বন্ধু নন। প্রাক্কলন  মূল্যের বিষয়ে কোনো তথ্য তাঁদের দিইনি।’

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ঠিকাদাররা কাজ না পেলে অভিযোগ করবেন—এটাই স্বাভাবিক। এখানে একটি সিন্ডিকেট আছে। তারাই টেন্ডারগুলো নিয়ন্ত্রণ করে বলে মনে হচ্ছে।’

জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর রাজশাহীর একটি সূত্র জানায়, স্থানীয় ৯টি উপজেলা পর্যায়ে দরিদ্র পরিবারে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ প্রকল্পের আওতায় এসব পাম্প বানাতে এই দরপত্র আহ্বান করা হয়। তবে দরপত্রে অনিয়মের অভিযোগে ঠিকাদারদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ দেখা দেয়। বিষয়টি নিয়ে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল রাজশাহী অফিসেও তোড়জোড় চলছে।

এমএস এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী ঠিকাদার হারুন-অর-রশিদ বলেন, ‘টেন্ডারে কোনো অনিয়ম হয়নি। আমি নিয়মমতো কাজ পেয়েছি। যাঁরা কাজ পাননি, তাঁরা মিথ্যা অভিযোগ দিচ্ছেন। এখানে অনিয়মের কোনো সুযোগ নেই। যিনি ১০ শতাংশের কমের মধ্যে সবচেয়ে কম রেট দেবেন, তিনিই কাজ পাবেন। সেই হিসেবে আমি কাজ পেয়েছি।’

জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর রাজশাহী সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী বাদশা মিয়া বলেন, ‘নির্বাহী প্রকৌশলী হারুন-অর-রশিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আমিও পেয়েছি। বিষয়টি খতিয়ে দেখব। তবে আমাদের টেন্ডারে অনিয়মের সুযোগ থাকে না।’

রাজশাহী-৩ (পবা-মোহনপুর) আসনের সংসদ সদস্য আসাদুজ্জামান আসাদ বলেন, ‘টেন্ডারে কোনো অনিয়ম হলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ খতিয়ে দেখবে। তবে আমি আমার এলাকায় কাজ সঠিকভাবে বুঝে নেব। অনেক এলাকায় ঠিকমতো এই কাজটি করা হয় না বলে অভিযোগ রয়েছে।’