রাজশাহী বিএনপি কার্যালয়ের ভাড়া বাকি তিন লাখ টাকা

রাজশাহী জেলা ও মহানগর বিএনপি কার্যালয়ের দুই বছরের ভাড়া বাকি রয়েছে প্রায় তিন লাখ টাকা। এই দুই বছরে ভবনের বিদ্যুৎ ও পানির বিল বকেয়া আরও লক্ষাধিক টাকা।

ভবন মালিক বকেয়া ভাড়া চেয়ে ও ভবন ছেড়ে দিতে কয়েকবার উকিল নোটিশ পাঠিয়েছেন রাজশাহী মহানগর বিএনপি নেতাদের; কিন্তু বিএনপি নেতারা বিভিন্ন অজুহাতে ভবনটি ছেড়ে দিচ্ছেন না বলে ভবন মালিকদের অভিযোগ।

এদিকে ভবন মালিকেরা আরও বলছেন, বিএনপির জেলা ও মহানগর কার্যালয় করতে ২০২১ সালে যেসব বিএনপি নেতারা তাদের ভবন ভাড়া নিয়েছিলেন তারা এখন রাজশাহী বিএনপির কোনো কমিটিতে নেই। ফলে তারা কোনো দায়দায়িত্ব নিচ্ছেন না। জেলা ও মহানগর বিএনপির কমিটিতে এখন যারা আছেন তারা ভবন ছাড়ছেন না আবার ভাড়াও পরিশোধ করছেন না। মালিকেরা এখন পুরনো এই ভবনটি ভেঙে নতুন ভবন করতে চান; কিন্তু বিএনপির অফিস থাকায় ভাঙতেও পারছেন না আবার জোর করে তাদের উচ্ছেদও করতে পারছেন না।

খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, রাজশাহী মহানগরীর মালোপাড়ায় অবস্থিত ১৯৬৪ সালে তৈরি পুরনো এই চারতলা ভবনটির নাম কাবিল ম্যানশন। ভবনের উল্টোদিকে রয়েছে ঐতিহ্যবাহী ভুবনমোহন পার্ক। চারতলা কাবিল ম্যানশনের দ্বিতীয় তলায় ৮০০ বর্গফুটের পাশাপাশি দুটি কক্ষ নিয়ে বিএনপির রাজশাহী জেলা ও মহানগর কার্যালয় অবস্থিত। বিএনপির অন্য সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরাও এটিকে কার্যালয় হিসেবে ব্যবহার করেন। নিয়মিত সভা মিটিং করেন। গত ৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তনের পর থেকে বিএনপির এই কার্যালয়টি নেতাকর্মীদের আনাগোনা ও ভিড়ে জমজমাট থাকে। ভবনে জেলা ও মহানগর বিএনপির একটি বড় সাইনবোর্ড লাগানো রয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০২১ সালের ১ আগস্ট থেকে পরবর্তী এক বছরের জন্য মাসিক ১২ হাজার টাকার চুক্তিতে ভবনটির দুটি কক্ষ ভাড়া নেন রাজশাহী মহানগর বিএনপির সাবেক সভাপতি ও রাসিকের সাবেক মেয়র মিজানুর রহমান মিনু। বর্তমানে তিনি বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা। চুক্তি মোতাবেক ২০২২ সালের ৩১ আগস্ট পর্যন্ত তিনি নিয়মিত ভাড়া পরিশোধ করেছেন। তবে এরপর গত দুই বছরের বেশি সময় ধরে কেউ আর ভাড়া পরিশোধ করেননি।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, ২০২১ সালের ৯ ডিসেম্বর রাজশাহী মহানগর ও জেলা কমিটি ভেঙে দিয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট এরশাদ আলী ইশাকে আহবায়ক ও মামুনুর রশিদকে সদস্য সচিব করে ৯ সদস্যের আংশিক কমিটি গঠন করা হয়। এর আগে রাজশাহী মহানগর বিএনপির সভাপতি ছিলেন রাসিকের সাবেক মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল ও সাধারণ সম্পাদক ছিলেন অ্যাডভোকেট শফিকুল হক মিলন।

অন্যদিকে আবু সাঈদ চাঁদকে আহবায়ক ও বিশ্বনাথ সরকারকে সদস্য সচিব করে জেলা বিএনপির নতুন কমিটি দেওয়া হয় একইদিনে।

জানা গেছে, জেলা ও মহানগর বিএনপির নতুন কমিটি আসার পর আগের কমিটির নেতারা দলীয় কার্যালয়ে অনিয়মিত হয়ে পড়েন। পরিবর্তে নতুন কমিটির নেতারা কাবিল ম্যানশনের দলীয় কার্যালয়ে আসা শুরু করেন। ভবন মালিকেরা ২০২২ সালের ৩১ আগস্ট পর্যন্ত ভাড়া পেলেও পরবর্তীতে আর পাননি। বিএনপি নেতারা কার্যালয়টি ব্যবহার করলেও ভবন মালিকের সঙ্গে নতুন করে আর চুক্তিও করেননি।

খোঁজ নিয়ে আরও জানা যায়, ভবনের মালিকেরা আট ভাইবোন। এতদিন ভবনটির সবকিছু দেখভাল করতেন ভাইবোনদের সবচেয়ে বড় আবদুল ওহাব। সম্প্রতি তিনি মারা গেছেন। এরপর থেকে প্রবাসে থাকা তার ভাই শামস আলম দেখভাল করছেন। তিনি বলেন, ভবনটির দুটি কক্ষ ভাড়া দিয়েছিলেন বড় ভাই আব্দুল ওহাব। এখন তিনি আমাদের মাঝে নেই। আমরা পুরনো এই ভবনটি ভেঙে নতুন ভবন করতে চাই। ভবন ভাঙার জন্য গত ৩০ জুলাই আমরা একটি পার্টির সঙ্গে চুক্তি করেছি। তারা ভবন ভাঙা শুরু করেছিলেন; কিন্তু বিএনপি নেতারা দলীয় কার্যালয় হিসেবে ব্যবহৃত কক্ষ দুটি খালি করছেন না। ফলে ভবন ভাঙা স্থগিত রাখা হয়েছে। আমরা কয়েকবার মহানগর বিএনপির আহবায়কসহ অন্য নেতাদের সঙ্গে সরাসরি কথা বলেছি; কিন্তু ভবন খালি করছেন না তারা। তারা দুই বছরের বকেয়া ভাড়াও পরিশোধ করেননি।

খোঁজ নিয়ে আরও জানা যায়, গত ১৭ মে বিএনপির কার্যালয় উচ্ছেদে সহায়তা চেয়ে ভবন মালিকেরা রাজশাহী মহানগর পুলিশ কমিশনারের কাছে একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছিলেন। ভাড়া না দিয়ে ভবন ব্যবহারের অভিযোগ করা হয় বিএনপি নেতাদের বিরুদ্ধে। তবে ওই সময় মহানগর পুলিশের পক্ষ থেকে বিএনপি নেতাদের সঙ্গে আলাপ আলোচনার মাধ্যমে বিষয়টি নিষ্পত্তির পরামর্শ দেওয়া হয়। তবে ভবন মালিকেরা বলছেন বিএনপি নেতাদের সঙ্গে আলাপ আলোচনাতেও কোনো ফল আসেনি। তারা ভবন ছেড়ে দেব বললেও ছাড়েননি।

ভবন মালিকেরা আরও জানান, কাবিল ম্যানশন ১৯৬৪ সালে তৈরি একটি পুরনো ভবন। গত এক বছর ধরে বিএনপি নেতাদের সঙ্গে তারা ভবন খালি করার জন্য দেনদরবার করছেন; কিন্তু তাতে কোনো লাভ হয়নি। বরং গত ৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তনের পর ভবনে নতুন করে একটি বড় দলীয় সাইনবোর্ড লাগানো হয়েছে।  ভবনটি খালি না হওয়ায় ভাঙা বন্ধ আছে। আবার একটি ডেভেলপার কোম্পানির সঙ্গে চুক্তির কথাবার্তা চললেও ভবন খালি না হওয়ায় তারাও পিছিয়ে গেছে। চুক্তিপত্রে ভবনের বিদ্যুৎ বিল পরিশোধের কথা থাকলেও বিএনপি নেতারা গত দুই বছর যাবত কোনো বিদ্যুৎ বিল দেননি। ফলে লক্ষাধিক টাকার পানি ও  বিদ্যুৎ বিল বকেয়া পড়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে চুক্তিপত্র সম্পাদনকারী বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও রাসিকের সাবেক মেয়র মিজানুর রহমান মিনু বলেন, আমার সঙ্গে এক বছরের চুক্তি হয়েছিল। আমি চুক্তিসীমা পর্যন্ত সব ভাড়া ও বিল পরিশোধ করেছি। এখন বিএনপির মহানগর ও জেলা কমিটির দায়িত্ব ভাড়া ও বিল পরিশোধ করার। মালিকেরা বললে ভবনটি ছেড়ে দেওয়া উচিত।

বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে রাজশাহী মহানগর বিএনপির আহবায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট এরশাদ আলী ইশা বলেন, আমরা ভবনটি এখন আর ব্যবহার করছি না। ইতোমধ্যে অধিকাংশ আসবাবপত্র সরিয়ে নিয়েছি। কারা এখন ভবনে আসা যাওয়া করেন আমরা বলতে পারছি না।

বকেয়া ভাড়ার বিষয়ে তিনি বলেন, আমাদের সঙ্গে কোনো ভাড়ার চুক্তি নেই। যাকে ভাড়া দিয়েছিলেন ভবন মালিকেরা তাকে বলতে পারেন।