ফারাক্কার গেট খোলার খবরে রাজশাহীতে চিড়ি-মুড়ির দোকানে বাড়ে মানুষের ভিড়

ফারাক্কা বাঁধের সবগুলো গেট খুলে দিয়েছে ভারত। বাংলাদেশের পদ্মার উজানে ভারতের গঙ্গা নদীতে থাকা এ বাঁধটিতে মোট ১০৯টি গেট রয়েছে।

গতকাল সোমবার সবগুলো গেটই খুলে দেওয়া হয়েছে বলে বিভিন্ন গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে। অথচ গেট খুলে দেওয়ার আগ থেকেই বাড়ছে পদ্মার পানি। প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে গেট খুলে দেওয়া হয়। এবারও সেটি হয়েছে। কিন্তু সেই খবর প্রকাশ হলে রাজশাহী অঞ্চলের পদ্মা পাড়ের বাসিন্দাদারে মাঝে দেখা দেয় চরম আতঙ্ক। গতকাল সোমবার বিকেল থেকেই অনেকেই বাড়িতে শুকনা খাবারও মজুদ শুরু করেন।

কেউ কেউ শহরের লাইফ জ্যাকেট বিক্রির দোকানগুলোতেও ভিড় করতে থাকেন বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। তবে গতকাল সন্ধ্যা ছয়টায় পদ্মায় পানির উচ্চতা যা ছিল, আজ সকাল ৯টা পর্যন্ত তাই রয়েছে। ফলে ১৫ ঘন্টায় বাড়েনি পদ্মায় পানি। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) উত্তরাঞ্চলীয় পানিবিজ্ঞান পরিমাপ বিভাগ জানিয়েছে, গত কয়েকদিন থেকেই পদ্মা নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত ছিল। চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার পাংখা এলাকা দিয়ে ভারতের গঙ্গা নদী পদ্মা নাম ধারণ করে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। এই পয়েন্টে সোমবার ভোর ৬টা ও সকাল ৯টায় পানির উচ্চতা পাওয়া গেছে ২০ দশমিক ৪৮ মিটার।

বিকাল ৩টায় তা হয় ২০ দশমিক ৫০ মিটার। পাংখায় পদ্মার পানির বিপৎসীমা ২২ দশমিক ০৫ মিটার। সেই হিসেবে এখনো বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে পদ্মা। অন্যদিকে রাজশাহী নগরের বড়কুটি পয়েন্টে পদ্মা নদীর পানির বিপৎসীমা ১৮ দশমিক ০৫ মিটার। সেখানে গতকাল সোমবার ভোর ৬টায় পানির উচ্চতা পাওয়া গেছে ১৬ দশমিক ২৭ মিটার। সকাল ৯টায় পানির উচ্চতা আরও এক সেন্টিমিটার বেশি পাওয়া যায়। বিকাল ৩টায় পানির উচ্চতা পাওয়া যায় ১৬ দশমিক ৩০ মিটার।

আজ সকাল পর্যন্ত সেটি একই ছিল। এদিকে, গতকাল রাজশাহী নগরীর তেরোখাদিয়া বাজারের মুদি দোকানদার সানোয়ার হোসেন বলেন, ফারাক্কা বাধ খুলে দেওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়ার পর সাধারণ মানুষ মুড়ি ও চিঁড়া কিনতে দোকানে ভিড় করতে থাকেন। দুই ঘন্টার মধ্যেই আমার দোকানের মুড়িগুলো শেষ হয়ে গেছে। চিঁড়া না থাকায় বিক্রি করতে পারিনি।’ নগরীর সাহেব বাজারের মুদি দোকানি বলেন, ‘অনেকেই আসছে মুড়ি ও চিড়া কিনতে। অন্যান্য দিনের চেয়ে আজ (গতকাল) বিকেল থেকে মুড়ি-চিড়া বিক্রির হার বেড়ে গেছিলো কয়েকগুন।’

তার পরেও ১০-১২টা ছিল সেগুলো কয়েক ঘন্টার মধ্যেই বিক্রি হয়ে যায়। আরও অনেকে আসছেন লাইফ জ্যাকেটের খোঁজে। অপরদিকে বাধ খুলে দেওয়ার খবরে সামাজিক গণমাধ্যমেও সচেতনতা ছড়িয়ে দিতে নানা ধরনের পোস্ট দিতে থাকেন অনেকেই।

যদি এভাবে পানি বাড়তেই থাকে তাহলে তিন পর থেকে পরিস্থিতি খারাপের দিকে যেতে পারে।’ উত্তরাঞ্চলীয় পানিবিজ্ঞান পরিমাপ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী রেজাউল করিম বলেন, ‘আমরা সাধারণত ১০ দিনের জন্য নদ-নদীর পানি বৃদ্ধির পূর্বাভাস দিই। আগামী ১০ দিনের মধ্যেও পদ্মার পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করবে না। তারপরেও নিশ্চিতভাবে বলা যাচ্ছে না নদীতে পানি বাড়ছে বলে। রোববার দুপুর থেকেই পানি বাড়ছে। আরও ২-৩ দিন পার হলে প্রকৃত অবস্থা বোঝা যাবে।’