আশরাফুল ইসলাম ফরাশী, রাজশাহীর বাগমারার মাড়িয়া কলেজের অধ্যক্ষ আব্দুর রশিদ মন্ডল ও শিক্ষক প্রতিনিধি অধ্যাপক মাহমুদুজ্জামান মজিবরের বিরুদ্ধে সভাপতির স্বাক্ষর জাল করে নিয়োগ বাণিজ্য, দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারসহ বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। এর প্রতিবাদে রোববার তাহেরপুর প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেছেন কলেজের প্রতিষ্ঠাতা ও জমিদাতা মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রশিদ শেখ। সংবাদ সম্মেলনে কলেজ পরিচালনা কমিটির বর্তমান সভাপতি খোরশেদ আলমও উপস্থিত ছিলেন। সংবাদ সম্মেলনে মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রশিদ শেখ লিখিত বক্তব্যে দাবি করেন, মাড়িয়া কলেজের দূর্নীতিবাজ অধ্যক্ষ আব্দুর রশিদ মন্ডল ও শিক্ষক প্রতিনিধি অধ্যাপক মাহমুদুজ্জামান মজিবর যোগসাজশ করে কলেজ পরিচালনা কমিটির বর্তমান সভাপতি খোরশেদ আলমের স্বাক্ষর জাল করে ২৮ লক্ষ টাকার বিনিময়ে একজন অফিস সহকারি নিয়োগ দিয়ে পুরো টাকা আত্মসাৎ করেছেন। সম্প্রতি ভূয়া সনদের মাধ্যমে একজন বিপিএড শিক্ষক ও একজন লাইব্রেরিয়ান নিয়োগ দিয়ে কলেজের সাবেক সভাপতি, অধ্যক্ষ ও শিক্ষক প্রতিনিধি প্রায় ৫০ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করেছেন। এছাড়া কলেজে পদার্থ, রসায়ন, জীববিজ্ঞান ও ল্যাব সহকারি কাম অফিস সহকারি বিষয়ে ল্যাব স্থাপন করে ওইসব পদে নিয়োগের প্রলোভন দিয়ে মাড়িয়া গ্রামের সোহরাব হোসেনের কাছে থেকে ৪ লক্ষ টাকা, জামেলা বেগমের কাছে থেকে ৩ লক্ষ টাকা এবং আব্দুল মাতিনের কাছ থেকে ৪ লক্ষ টাকাসহ আরো কয়েক গরীব ও অসহায় বেকার যুবকের কাছে থেকে ৪ থেকে ৫ লক্ষ করে টাকা নিয়েও তাদের নিয়োগ দেওয়া হয়নি। ওইসব বিষয়ে বেশি টাকা পাওয়ায় শরিফুল ইসলাম, রাজিয়া, নীলিমা, মৌসুমি ও একজন আয়া নিয়োগ দিয়ে প্রায় ৫৫ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। নিয়োগ পাওয়া এসব কর্মচারীরা কোন দিন কলেজে না আসলেও অধ্যক্ষ ও শিক্ষক প্রতিনিধিকে অর্থের বিনিময়ে ম্যানেজ করে তারা নিয়মিত বেতন-ভাতা উত্তোলন করে থাকে। সংবাদ সম্মেলন আরো অভিযোগ করা হয়,প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে আজ পর্যন্ত কলেজটিতে কাম্য সংখ্যক শিক্ষার্থী নাই। বিশেষ করে পরিসংখ্যান, ইতিহাস, আরবি, সাচিবিকবিদ্যা, অর্থায়ন ও উৎপাদন, সমাজকল্যাণ এবং সমাজকর্ম এসব বিষয়ে কোন ছাত্র-ছাত্রী নাই। বর্তমানে এই কলেজে মোট শিক্ষার্থীর সংখ্যা মাত্র ৮০ জন। অথচ খাতায় প্রায় ৩০০ জন ভূয়া ছাত্র-ছাত্রীর নাম লিখে রাখা হয়েছে। যেসব বিষয়ে শিক্ষার্থী নাই সেইসব বিষয়ের শিক্ষকগণ প্রতি মাসে মাত্র একদিন করে কলেজে এসে হাজিরা খাতায় পুরো মাসের স্বাক্ষর করে অবৈধভাবে বেতন-ভাতা উত্তোলন করে এবং সরকারি অর্থ আত্মসাৎ করা হচ্ছে। অপরদিকে কলেজের কমিটি গঠন করা হয় সকলের অগোচরে। কলেজ প্রতিষ্ঠাতাগণের মধ্যে অনেক শিক্ষিত ও জ্ঞানীগুনি লোক থাকা সত্বেও অধ্যক্ষ ও শিক্ষক প্রতিনিধি নিয়োগ বাণিজ্যের লক্ষ্যে অশিক্ষিত ব্যক্তির নামে এমপির ডিও লেটার নিয়ে সভাপতি করে দুর্নীতি করে আসছেন। এবারও কমিটির মেয়াদ শেষ হওয়ায় ছয় মাস আগে কলেজ থেকে পাঁচ কিলোমিটার দূরে গোবিন্দপাড়া গ্রামের জনৈক সুরাত আলীর নামে এমপির ডিও লেটার নেওয়া হয়েছে। কলেজের শিক্ষক প্রতিনিধি অধ্যাপক মাহমুদুজ্জামান মজিবর একজন স্থানীয় ব্যক্তি। এ কারণে ক্ষমতার দাপটে তিনি এইসব বিষয় নিয়ন্ত্রন করে থাকেন এবং তার মনোনীত ব্যক্তির নামে এমপির ডিও লেটার নিয়ে এসে তাকে সভাপতি করে নিয়োগ বাণিজ্য ও অর্থ আত্মসাৎ করে অল্প দিনের মধ্যে তিনি অঢেল সম্পদের পাহাড় গড়েছেন।
দুর্নীতিবাজ অধ্যক্ষ আব্দুর রশিদ মন্ডল ও শিক্ষক প্রতিনিধি অধ্যাপক মাহমুদুজ্জামান মজিবরের বিরুদ্ধে সভাপতির স্বাক্ষর জাল করে নিয়োগ বাণিজ্য, দুর্নীতি ও অনিয়মের বিষয়ে রাজশাহী শিক্ষা অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগও দেওয়া হয়েছে। তাই সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানানো হয়েছে। কলেজ পরিচালনা কমিটির সভাপতি খোরশেদ আলমও তার স্বাক্ষর জাল করে অফিস সহকারি নিয়োগ দিয়ে ২৮ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে বলে তিনি অভিযোগ করেছেন। তবে অধ্যক্ষ আব্দুর রশিদ মন্ডল এই অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন অফিস সহকারি পদে এখনো কাউকে নিয়োগ দেওয়া হয়নি।