ছাত্রলীগ থেকে পদত্যাগ করা জাকি ভাঙচুর মামলার আসামি

সামাজিক যোগযোগ মাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে গত সপ্তাহে ছাত্রলীগ থেকে পদত্যাগ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী জাকি তাজওয়ার। কোটা আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের উপর হামলার ঘটনায় তিনি ছাত্রলীগ থেকে পদত্যাগ করেন। আন্দোলন ঘিরে বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় জেলা আওয়ামী লীগের উপ দপ্তর সম্পাদক খালেকুজ্জামান রাজার দায়ের করা মামলায় জাকি তাজওয়ারকে আসামি করা হয়েছে।জাকি তাজওয়ার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ শাখা ছাত্রলীগের উপ-দপ্তর সম্পাদক ছিলেন। তিনি জাকি বগুড়ার সরকারি আজিজুল হক কলেজের গণিত বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক মাহতাব উদ্দিনে ছেলে। জাকি বগুড়া জিলা স্কুলের এসএসসি ২০১৯ ও সরকারি আজিজুল হক কলেজের এইচএসসি ২০২১ ব্যাচের শিক্ষার্থী ছিলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মুদ্রণ ও প্রকাশনা অধ্যয়ন বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র।জানা যায়, ১৬ জুলাই দুপুরের পর বগুড়া শহরের সাতমাথায় জিলা স্কুলের শিক্ষার্থীরা কোটা আন্দোলনের মিছিল বের করে। এ সময় তাদের উপর হামলা হয়। হামলার পর রাতে ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে ছাত্রলীগ থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দেন জাকি তাজওয়ার। সে সময় জাকি তাজওয়ার তার ফেসবুকে লেখেন, ‘…লুকানোর কিছু নেই। ছাত্রলীগের মিছিলে স্লোগানে পেয়েছেন। তারুণ্যের জয়গানে পেয়েছেন। কখনো কি সহিংসতায় দেখেছেন? আক্রান্ত হয়েছেন? আজ আমরা আক্রান্ত, আপনাদের সঙ্গে আক্রান্ত। নীতি আর আদর্শের ভাষা এসব শেখায়নি। আমরা এ দেশের সন্তান। বড় করে বলি সূর্যসন্তান। আমরা যদি না জাগি মা কেমনে সকাল হবে?’

হামলা, ভাঙচুরের মামলায় আসামী হওয়ার বিষয়ে জাকি বলেন, বগুড়া জিলা স্কুলের প্রতীকী ছাত্র সংসদের একাধিকবার ভিপি ছিলাম। গত ১৬ জুলাই জিলা স্কুলের শিক্ষার্থীরা কোটা সংস্কারের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিলের প্রস্তুতি নেয়। তাদের ন্যায়সঙ্গত দাবির সাথে একাত্মতা প্রকাশ ওইদিন মিছিলে যোগ দেই। মিছিলে হামলা করা হয়। দ্বিতীয় বার আবারও সাতমাথায় মিছিল নিয়ে যাওয়ার পর আবারও ককটেল হামলা করা হয়। এতে শিক্ষার্থীরা উত্তেজিত হলেও কোনো প্রকার ভাঙচুর কিংবা জ্বালাও পোড়াও করেনি। সহিংসতা শুরু হলে শিক্ষার্থীরা দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করে।

তিনি আরও বলেন, ছাত্রলীগ থেকে পদত্যাগের কারণেই আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয় পোড়ানো মামলার আসামি হয়েছি, এমনটা নাও হতে পারে। কেউ হয়তো আওয়ামী লীগ নেতাদের ভুল বুঝিয়ে আমাকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়েছেন।

আওয়ামী লীগের করা ওই মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, এজাহারনামীয় আসামি ছাড়া অজ্ঞাত ১০০ থেকে ১৫০ আসামি দেশি অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে সরকারবিরোধী স্লোগান দিয়ে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে জেলা আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের কার্যালয়ে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেন। তাঁরা কার্যালয়ের মালামাল লুট করেন। এ ছাড়া টাউন ক্লাব ও জেলা আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক সুলতান মাহমুদ খানের ব্যক্তিগত কার্যালয়ে হামলা, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট করেন। ওই মামলায় জাকি তাজওয়ার ছাড়াও বগুড়া জেলা বিএনপির সভাপতি রেজাউল করিম বাদশা, সাধারণ সম্পাদক আলী আজগর তালুকদারসহ বিএনপি-জামায়াতের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মীসহ ৮৭ জনকে আসামী করা হয়েছে। এর মধ্যে কয়েকজন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছাড়া বগুড়ার বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইনফরমেশন টেকনোলজির (বিআইআইটি) অধ্যক্ষ প্রকৌশলী শাহাবুদ্দিন সৈকত ও ইনস্টিটিউট অব ইনফরমেশন টেকনোলজির (আইআইটি) পরিচালক সবুর শাহ লোটাসকেও আসামি করা হয়েছে।

১৬ জুলাই বগুড়া জেলা আওয়ামীলীগের কার্যালয় পোড়ানোর প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন বলেন, হটাৎ একদল শিক্ষার্থী জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয় ও আশপাশের স্থাপনায় হামলা করে ভাংচুর করে। এর একপর্যায়ে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। হামলায় অংশ নেয়া বেশির ভাগ শিক্ষার্থীর গায়ে কোন ইউনিফর্ম ছিল না এবং মুখে মাস্ক পড়া, হাতে ও পিঠে ব্যাগ ছিল। এ সময় কেউ ছবি তোলা বা ভিডিও করার চেষ্টা করলে তাদের উপরও হামলা করেছে তারা।

বগুড়া জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সজীব সাহা বলেন, জাকি তাজওয়ার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। সেখানকার রাজনীতির সাথে জড়িত। সেখানে ছাত্রলীগ থেকে পদত্যাগ করেছেন। বগুড়ার রাজনীতির সাথে তিনি জড়িত নন।

১৬ জুলাই শিক্ষার্থীদের হামলায় বেশ কয়েকজন সাংবাদিক আহত হন। তারমধ্যে যমুনার টিভির বগুড়া ব্যুরো মেহেরুল সুজন। তিনি বলেন, যখন জেলা আওয়ামীলীগ কার্যালয়ে হামলা করা হয়। তখন সেখানে গণমাধ্যম কর্মীদের যেতে দেয়া হয়নি। আমরা শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলছিলাম, এরই একপর্যায়ে কেউ একজন মাথায় লাটি দিয়ে আঘাত করে আমাকে।