১৩ বছর পর প্রধান কার্যালয়ে প্রেস ব্রিফিং জামায়াতের

১৩ বছর পর ঢাকার মগবাজারের প্রধান কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছে জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ। দে‌শের চলমান প‌রি‌স্থি‌তি নি‌য়ে কথা বলেছেন দলটির আমির শফিকুর রহমান। উল্লেখ্য যে, ২০১১ সালের পর এই কার্যালয় থেকে আর কোনো কার্যক্রম পরিচালিত হয়নি।

মঙ্গলবার (৬ আগস্ট) দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে জামায়াতের আমির শফিকুর রহমান বলেন, ‘আমাদের জোর দাবি বিলম্ব না করে অতি দ্রুত সংসদ ভেঙে দিন। অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করুন।’

এ সময় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের রূপরেখা নিয়ে খুব বেশি হোমওয়ার্ক করার সুযোগ নেই বলে মন্তব্য করে শফিকুর রহমান বলেন, ‘অন্তর্বর্তী বলেন, কেয়ারটেকার বলেন এটা নিয়ে বেশি হোমওয়ার্ক করার দরকার পড়বে না। যদিও আইনের দিক থেকে এটাকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। আইন জনগণের জন্য। প্রয়োজনে আবার সংশোধন করা যাবে।’

অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনুসকে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের প্রস্তাবকে কীভা‌বে দেখ‌ছেন জান‌তে চাই‌লে তি‌নি ব‌লেন, ‘আমরা তা‌কে শ্রদ্ধার চোখে দেখি।’

শফিকুর বলেন, ‘তাদের (ছাত্রদের) অধিকার আছে এ ধরনের কিছু বলার। রাষ্ট্রপতিকে অনুরোধ করেছি তিনি যেন ছাত্রদের কথাও শোনেন। তিনি কথা দিয়েছেন। এখন এই বিষয়ে কোনো মন্তব্য করছি না।’

জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিলের বিষয়ে এক প্রশ্নের জবা‌বে তিনি বলেন, ‘আদালতের বিষয়। যখন দেশে একটা ডেডলক চলছিল ওই সময় আমাদের সিনিয়র আইনজীবী সময় চেয়েছিলেন। এখানে আইনের সুযোগ আছে। এটা এখন আমাদের প্রসঙ্গ নয়। এখন জাতিকে কীভাবে শান্তিপূর্ণ করা যায় সেটা আমাদের বিষয়।’

অরাজকতা দুর্বৃত্তপনা প্রতিরোধের আহ্বান : 

একটি সুবিধাবাদী দুর্বৃত্ত গোষ্ঠী বিভিন্ন স্থানে সরকারি স্থাপনা, প্রতিপক্ষের বাড়িঘর এবং ক্ষেত্রবিশেষে সংখ্যালঘুদের ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে হামলা ও অগ্নিসংযোগ করছে জানিয়ে অরাজকতার বিরু‌দ্ধে প্রতি‌রোধ করার আহ্বান জা‌নি‌য়ে‌ছেন জামায়াতে ইসলামীর আমির।

অনেক মানুষের জীবনহানির মধ্য দিয়ে গতকাল একটি ‘পরিবর্তন’ এসেছে উল্লেখ করে জামায়াতের আমির বলেন, ‘আমরা অতীব দুঃখের সঙ্গে লক্ষ করছি, এই ধরনের পরিবর্তনের ঊষালগ্নে একটি সুবিধাবাদী দুর্বৃত্ত গোষ্ঠী বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায়, শহরে এবং গ্রাম অঞ্চলে বিভিন্ন সরকারি স্থাপনায়, প্রতিপক্ষের বাড়িঘর এবং ক্ষেত্রবিশেষে কিছু কিছু জায়গায় সংখ্যালঘুদের ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে আঘাত করেছে। কোথাও ভাঙচুর, কোথাও লুটপাট করা হয়েছে, অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। যাদের অন্তরে বিবেক আছে, মানবতা আছে, তারা এগুলো করতে পারে না।’

দলের নেতা-কর্মীদের এ বিষয়ে নির্দেশনা দিয়েছেন জানিয়ে শফিকুর রহমান বলেন, ‘এখন থেকে যেখানে মানুষের বিপন্ন হওয়ার আশঙ্কা আছে, সেখানে জামায়াতের নেতা-কর্মীরা যেন পাহারাদারের ভূমিকা পালন করেন।’

যারা লুটপাট-অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটিয়েছে তাদের চিহ্নিত করে বিচারের দাবি জানান এই জামায়াত নেতা। তিনি বলেন, ‘৫৬ হাজার বর্গমাইলের এই দেশে কোথায় কোন ফাঁকফোকরে কোন দুর্বৃত্ত কোন দুর্ঘটনা ঘটিয়ে বসে, এই জন্য দুই-একটা সংগঠনের দ্বারা প্রতিরোধ করা সম্ভব নয়। এখানে আপামর জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত দায়িত্ব পালন করতে হবে। তাহলে অবশ্যই দুর্বৃত্তরা এই দুঃসাহস দেখাবে না। যারা ইতিমধ্যে এ কাজগুলো করেছে, তাদের অবশ্যই আইনের আওতায় আনতে হবে।’

যিনি বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করেছেন, জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে তিনি বাংলাদেশের একজন গর্বিত নাগরিক— মন্তব্য করে জামায়াতের আমির বলেন, ‘এখানে কেউ সংখ্যালঘু নয় এবং কেউ সংখ্যাগুরু নয়। এ জন্য কে সংখ্যালঘু এ প্রশ্নটি আমাদের কাছে অবান্তর। আমরা এ সব দুর্বৃত্তপনা মানবতাবিরোধী কাজ মনে করি। আমরা জাতিকে আহ্বান জানাব, যেখানেই দুর্বৃত্তপনা দেখবেন, তৎক্ষণাৎ এদের প্রতিরোধ করতে হবে। আমরা কথা দিচ্ছি, বিদ্যমান প্রশাসনকে আমরা এ বিষয়ে সর্বাত্মক সহযোগিতার জন্য প্রস্তুত।’

এ সময় দলের কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির মুজিবুর রহমান, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আজাদ ও আবদুল হালিম, মহানগর দক্ষিণের আমির নুরুল ইসলাম, উত্তরের আমির সেলিমউদ্দিন, দক্ষিণের সেক্রেটারি শফিকুল ইসলাম মাসুদ, উত্তরের সেক্রটারি রেজাউল করিমসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।