দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়া শেখ হাসিনাকে ভারত থেকে দেশে ফিরিয়ে আনতে ভারতের কাছে চিঠি দেওয়ার জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। শনিবার বিকেলে গাজীপুর মহানগরীর কোনাবাড়ি ডিগ্রি কলেজ মাঠে গাজীপুর জেলা ও মহানগর শ্রমিকদল আয়োজিত এক শ্রমিক সমাবেশে তিনি এ দাবি জানিয়েছেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, শেখ হাসিনা গণহত্যাকারী, দেশ ধ্বংসকারী, রাষ্ট্রবিরোধী ও গণতন্ত্রবিরোধী। তাকে দেশে ফিরিয়ে এনে তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগগুলোর ভিত্তিতে বিচারের জন্য ভারতের কাছে চিঠি দেওয়া হোক। আমরা ভারতের কাছে অনুরোধ করেছি; যে গণহত্যা করেছে, বাংলাদেশের গণতন্ত্র হত্যা করেছে, মানুষকে খুন করেছে এবং অনেক গণহত্যার আসামি হয়েছে তাকে আপনারা জায়গা দেবেন না। তারা এখন পর্যন্ত কোনো কিছু বলেনি। আমরা আবারো ভারতের কাছে অনুরোধ জানাচ্ছি দয়া করে এই গণহত্যাকারী, মানুষ খুনকারী, খুনি হাসিনাকে দেশে ফেরত পাঠাবার সকল ব্যবস্থা করুন। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে আবারো বলছি, আপনি তার জন্য যে আইনগত বিধান আছে সে মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণ করুন।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকাকালে আমাদের অসংখ্য নেতাকর্মীদের হত্যা করেছে। শ্রমিককে হত্যা করেছে, ছাত্র হত্যা করেছে এমনকি তারা নারীদেরকে হত্যা করতে দ্বিধাবোধ করেনি। নিজে ক্ষমতায় থাকার জন্য প্রধানমন্ত্রী থাকবে এ কারণে সে বাংলাদেশের সমস্ত রাষ্ট্র ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দিয়েছে। বাংলাদেশের মানুষকে একটি ভীতির রাজত্বে নিয়ে গেছে। ছাত্র-জনতার অভ্যুথানে সে যখন পালিয়ে গেছে বাংলাদেশের মানুষ তখন হাফ ছেড়ে বেঁচেছে। যাই হোক, আমরা শান্তিতে দম নিতে পারছি। রাতে আরাম করে শুতে পারতেছি। আগে মনে হতো এই বুঝি পুলিশ আসলো। এই বুঝি আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসী আসলো। ওই জায়গাটা থেকে বের হয়ে আসছি। এই জন্য মানুষ আনন্দ করে বলে ‘পলাইছে’ ‘পলাইছে’। শেখ হাসিনা পলাইছে।
তিনি বলেন, শেখ হাসিনা পলাইছে এটা ঠিক, কিন্তু তার যে প্রেতাত্মা এদেশের মধ্যে এখনো আছে। তারা ভুলতে পারছে না। তারা এই দেশে চুরি চামারি লুট করে যে সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছিল, দেশের ভিতরে বিরাট বিরাট বাড়িঘর, ব্যবসা তৈরি করে, খামার তৈরি করে লুটপাট করেছে; তারা এসব ভুলতে পারে না। তারা ভাবে আবার যদি শেখ হাসিনাকে ফিরিয়ে আনতে পারতাম, আবার লুট করতে পারতাম। সেজন্য তারা দেশের বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্নভাবে ষড়যন্ত্র করছে। সবচেয়ে বড় ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত করছে আমাদের পোশাক শিল্প কারখানাগুলোতে। ২০২৩ সালে বাংলাদেশ থেকে যত রপ্তানি হয়েছে তার মধ্যে পোশাক খাত থেকে এসেছে ৮৫ ভাগ। এই আয়ের পরিমাণ ৪৭ দশমিক ৩৮ বিলিয়ন ডলার। যা বাংলাদেশি টাকায় ৫ লাখ ৬৬ হাজার ৭৩ কোটি টাকা।
গার্মেন্টস, ওষুধ শিল্পসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে দুষ্কৃতিকারীদের বিশৃংখলা প্রতিরোধ, শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখা এবং শ্রমিক-কর্মচারিদের বেতন-ভাতা নিয়মিত পরিশোধের দাবিতে এ শ্রমিক সমাবেশের আয়োজন করা হয়। সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন শ্রমিকদলের কার্যকরী সভাপতি সালাহউদ্দিন সরকার।
সমাবেশে বিশেষ অতিথি ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন। প্রধান বক্তা ছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী অ্যাডভোকেট সামছুর রহমান শিমুল বিশ্বস। বক্তব্য রাখেন জেলা বিএনপির সভাপতি ফজলুল হক মিলন, বিএনপির সমাজ কল্যাণ সম্পাদক কামরুজ্জামান রতন, বিএনপির সহ-শ্রম বিষয়ক সম্পাদক হুমায়ূন কবির খান, শ্রমিক দলের কেন্দ্রীয় সভাপতি আনোয়ার হোসেন, সহ-স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম বাচ্চু, কেন্দ্রীয় নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা হাসান উদ্দিন সরকার, ডা. মাজহারুল আলম, মজিবুর রহমান, মহানগর বিএনপির সভাপতি শওকত হোসেন সরকার প্রমুখ।