বন্ধুত্ব চাইলে শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠান: হাফিজ

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ ভারতের উদ্দেশে বলেছেন, আপনারা স্বাধীনতা যুদ্ধে সহযোগিতা করেছেন, সেজন্য আমরা অনেক কৃতজ্ঞ। কিন্তু এদেশের প্রভু হওয়ার চেষ্টা করবেন না। জনগণের বিপক্ষ হওয়ার চেষ্টা করবেন না। বিএনপি ক্ষমতায় গেলে ভারতের সঙ্গে বন্ধুত্বের সম্পর্ক থাকবে কিন্তু আমাদের দেশ ও সাধারণ মানুষের সম্পর্কে নিয়ে ষড়যন্ত্র করবে না। সার্কের প্রত্যেকটা দেশ আপনাদের বিরুদ্ধে কেন? মালদ্বীপ, শ্রীলংকা সবাই। আমরা চাই বন্ধুত্ব হবে জনগণের সঙ্গে। শেখ হাসিনা ইতিহাসের সবচাইতে বড় ঘাতক। তিনি কত মায়ের বুক খালি করেছেন? এই সভা থেকে দাবি করব শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশে ফিরিয়ে এনে বিচার করতে হবে। ভারতকে বলব, যদি বন্ধুত্ব করতে চান, তাকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠান।

আজ শনিবার দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে মুক্তিযোদ্ধা দল আয়োজিত সমাবেশে তিনি এ কথা বলেন।হাফিজ বলেন, ‘অন্তবর্তীকালীন সরকারের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা হিসেবে গতকাল শপথ নিয়েছেন লে. জেনারেল জাহাঙ্গীর। তার নেতৃত্বে একটা তদন্ত কমিটি হয়েছিল বিডিআর বিদ্রোহ ও হত্যাকাণ্ডের ঘটনা নিয়ে। তিনি সঠিকভাবে কারণ এবং সমাধান বর্ণনা করেছেন। কিন্তু এই প্রতিবেদন আলোর মুখ দেখে নাই। আমরা চাই, তার নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠিত যে সত্য অনুসন্ধান রিপোর্ট তা জনসমক্ষে প্রকাশ করা হোক।’

তিনি বলেন, ‘বিডিআর এ মেধাবী চৌকশ সেনা অফিসারদের পোস্টিং দেওয়া হয়েছিল। এদের প্রতিবেশী রাষ্ট্রের ষড়যন্ত্রে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। এই হত্যাকাণ্ডের বিচারে হচ্ছে দীর্ঘসূত্রিতা। এভাবে কেয়ামত পর্যন্ত এর বিচার শেষ হবে না। অতি দ্রুত প্রয়োজন হলে স্পেশাল ট্রাইব্যুনাল করে যাদের যাদের ফাঁসির আদেশ হয়েছে প্রত্যেককে ঝুলিয়ে দেন। তাহলে নিহতদের আত্মা শান্তি পাবে।’

নির্বাচন কমিশনের সমালোচনা করে হাফিজ উদ্দিন বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন একটা নিকৃষ্টতম প্রতিষ্ঠান। ভোট ডাকাতি করে এতদিন আওয়ামী লীগকে বহাল রেখেছে তারা। এই কমিশন বলেছিল, আওয়ামী লীগ এলে ভোটাররা আসবে। ইলেকশনের দিন প্রধান নির্বাচন কমিশনার ঘুমান, এক ঘুমে ২৪% ভোট ৫৫% হয়ে গেছে দুপুরেই। কি ধরনের ইলেশন কমিশন এরা, এখনো তারা কি করে থাকে?’ স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতিনিধিরা কেউ নির্বাচিত নয়, তাদের সকল নিয়োগ বাতিলের দাবি জানান তিনি।

তিনি বলেন, ‘১৯৭১ সালের মার্চ মাসে আমরা পাঁচটি ক্যান্টনমেন্টে বিদ্রোহী সৈনিকেরা বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রতিষ্ঠা করেছিলাম। আমাদের সেনাবাহিনীর ফাউন্ডিং ফাদার মনে করা হয়। এবার আন্দোলনে আশা ছেড়ে দিয়েছিলাম। কিন্তু মাহেন্দ্রক্ষণে আমাদের দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনী শেখ হাসিনাকে সরানোর ব্যাপারে সঠিক ভূমিকা রেখেছে। সেজন্য আমি তাদের অভিবাদন জানাই। আমাদের দাবি স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার নামে যে ক্যান্টনমেন্ট করা হয়েছে অবিলম্বে তা বাতিলের দাবি করতে হবে।’ বিগত কয়েকটি নির্বাচনের সাবেক সেনা প্রধানরা ‘ফ্যাসিস্ট সরকারের’ পক্ষে যেভাবে ‘তোষামোদি’ করেছেন তার কঠোর সমালোচনাও করেন তিনি।

হাফিজ বলেন, ‘আবু সাঈদের ছবি এখানে আছে। এরা আদর্শ রোল মডেল বাংলাদেশের। গত কয়েক বছরে আমরা একাত্তর ভুলে গিয়েছিলাম। একাত্তরের চেতনায় উদ্বিপ্ত যুবকরা যে এখনো আছে, তার প্রমাণ শহীদ আবু সাঈদ। হাজার বছর যতদিন বাংলাদেশ থাকবে ততদিন আবু সাঈদ হীরো হিসেবে থাকবে।’

এ সময় দলের স্থায়ী কমিটিতে স্থান পাওয়া হাফিজ উদ্দিন কৃতজ্ঞতাও প্রকাশ করে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের প্রতি। মুক্তিযোদ্ধা দলের সভাপতি ইশতিয়াক আজিজ উলফাতের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক সাদেক আহমেদ খানের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা আবদুস সালাম, ফজলুর রহমান, জয়নুল আবদিন ফারুক, গণঅধিকার পরিষদের নুরুল হক নুর, এবি পার্টির ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ, মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের সাবেক মহাসচিব নঈম জাহাঙ্গীরসহ মুক্তিযোদ্ধা দলের নেতারা বক্তব্য রাখেন।