চট্টগ্রামে পুলিশের অভিযানের খবর পেয়ে গুলি ছুড়তে ছুড়তে পালিয়ে গেছেন শীর্ষ সন্ত্রাসী সাজ্জাদ হোসেন ওরফে ছোট সাজ্জাদ। পুলিশ জানায়, ছোট সাজ্জাদের অবস্থান জানতে পেরে বৃহস্পতিবার (৫ ডিসেম্বর) ভোর ৪টার দিকে সাজ্জাদের অবস্থান জানতে পেরে নগরীর অক্সিজেন মোড়ের জালালাবাদ পেট্রল পাম্পের পেছনে সাততলা ভবনের পঞ্চম তলায় অভিযান চালায় পুলিশ। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে ‘বুড়ির নাতি’ সাজ্জাদ গুলি ছোড়ে। এ সময় চারজন আহত হয়েছেন। তার মধ্যে স্থানীয় বাসিন্দা মোহাম্মদ জাবেদ ও সিটি ব্যাংকের একটি এটিএম বুথের নিরাপত্তাকর্মী কাজল কান্তি দে গুলিবিদ্ধ হন। আহত দুই পুলিশ সদস্য হলেন- চান্দগাঁও থানার সহকারী উপপরিদর্শক ফাইয়াছ হাসমিনুর রোবেল এবং রাজু আহমেদ। প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, জোড়া খুনসহ ১০ মামলার আসামি সাজ্জাদ হোসেনকে ধরতে পুলিশ গতকাল বুধবার রাতে অক্সিজেন এলাকার আলহাজ ইউনুস টাওয়ারের একটি ফ্ল্যাট বাসায় অভিযানে যায়। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে সাজ্জাদ গুলি ছুড়তে ছুড়তে পালিয়ে যান। তার ছোড়া গুলিতে স্থানীয় বাসিন্দা মোহাম্মদ জাবেদ ও সিটি ব্যাংকের এটিএম বুথের নিরাপত্তাকর্মী কাজল কান্তি দে গুলিবিদ্ধ হন। আহত হন দুই পুলিশ সদস্য। গোলাগুলির ঘটনার পর পুলিশের সোয়াট দল যায় ঘটনাস্থলে, কিন্তু সাজ্জাদকে পাওয়া যায়নি। পরে ওই বাসা থেকে সাজ্জাদের স্ত্রী তামান্না বেগম, দুই যুবকসহ তিনজনকে আটক করা হয়। নগর পুলিশের উপকমিশনার (মিডিয়া) কাজী মো. তারেক আজিজ কালবেলাকে বলেন, সন্ত্রাসী সাজ্জাদের বিরুদ্ধে জোড়া খুনসহ ১০টি মামলা রয়েছে। আজ পুলিশের অভিযানে ফসকে পালিয়ে যান তিনি। পালানোর সময় তার ছোড়া গুলিতে দুজন গুলিবিদ্ধ হন। আমাদের দুই পুলিশ সদস্য আহত হন। আহত দুই পুলিশ সদস্য দামপাড়া পুলিশ হাসপাতালে এবং স্থানীয় দুজন বর্তমানে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এদিকে সন্ত্রাসী সাজ্জাদ ধরা না পড়ায় নগরের বায়েজিদ বোস্তামী, চান্দগাঁও, পাঁচলাইশ ও হাটহাজারী থানার প্রায় তিন লাখ বাসিন্দা আতঙ্কে রয়েছেন। এলাকায় তার চাঁদা দাবির বিষয়টি অনেকটা প্রকাশ্যেই চলে। মূলত নির্মাণাধীন ভবন ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে চাঁদা তোলেন এই সন্ত্রাসী। সিএমপির উপপুলিশ কমিশনার (অপরাধ) রইস উদ্দিন কালবেলাকে বলেন, গোপন সংবাদে আমরা জানতে পারি বায়েজিদ থানাধীন অক্সিজেন মোড় এলাকায় জালালাবাদ আলহাজ ইউনুস টাওয়ারের একটি ফ্ল্যাট বাসায় শীর্ষ সন্ত্রাসী সাজ্জাদ অবস্থান করছে। পরে বায়েজিদ থানা, চান্দগাঁও থানা ও পাঁচলাইশ থানা মোট তিন থানা যৌথভাবে অভিযান পরিচালনা করে। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে সাজ্জাদ এলোপাতাড়ি গুলি ছোড়ে। তার ছোড়া গুলিতে দুজন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। এ সময় পুলিশ সদস্যরা মোট ৬ রাউন্ড গুলি ছোড়ে। পরে সে বাড়ির ছাদে উঠে পাশের আরেকটি ভবনে যায়। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ঘটনাস্থল থেকে সাজ্জাদের স্ত্রী পরিচয় দেওয়া এক নারীকে আটক করা হয়েছে। অভিযানে আমাদের দুই পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। গত ২১ সেপ্টেম্বর বিকেলে নগরের চান্দগাঁও থানার অদূরপাড়া জাগরনী সংঘ ক্লাব সংলগ্ন একটি চায়ের দোকানে মাইক্রোবাস থেকে নেমেই স্থানীয় ব্যবসায়ী আফতাব উদ্দিন তাহসীনকে (২৭) গুলি করে হত্যা করে সাজ্জাদ বাহিনী। গত ১৮ সেপ্টেম্বর বিকেল ৪টার দিকে নগরের বায়েজিদ বোস্তামী থানার কালারপুল এলাকায় শটগান হাতে সাজ্জাদ হোসেনসহ আরও দুজন গুলি করতে করতে একটি নির্মাণাধীন ভবনে প্রবেশ করেন। এরপর ওই ভবন মালিকের কাছে পাঁচ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। গত ২৯ আগস্ট নগরের বায়েজিদ বোস্তামি থানার অক্সিজেন-কুয়াইশ সড়কে প্রকাশ্যে গুলি করে মাসুদ কায়সার (৩২) ও মোহাম্মদ আনিস (৩৮) নামে দুজনকে হত্যা করা হয়। এলাকায় আধিপত্য বিস্তার, ব্যবসা ও রাজনৈতিক মতাদর্শ নিয়ে দুপক্ষের দ্বন্দ্বের জেরেই এ খুন হয়। এই চাঞ্চল্যকর ডবল মার্ডারের ঘটনার দুই মামলায় সাজ্জাদ ও তার সহযোগীদের আসামি করা হয়। গত ৫ জুলাই বায়েজিদ থানার বুলিয়াপাড়া এলাকায় একটি বাসায় গুলি করেন সাজ্জাদ তার সহযোগীদের নিয়ে। আর গত বছরের ২৭ অক্টোবর চাঁদা না পেয়ে দলবল নিয়ে মো. হাছান নামের এক ঠিকাদারের চান্দগাঁও হাজীরপুল এলাকার বাসায় গিয়েও গুলি করে তারা।