এখন কী করবেন জিএম কাদের!

জাতীয় পার্টির (রওশন) দশম সম্মেলনে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন রওশন এরশাদ। তবে নবম সম্মেলনে দলীয় কাউন্সিলরদের ভোটে জাপার নেতৃত্ব পান জিএম কাদের। দলের চেয়ারম্যান জিএম কাদের ও মহাসচিব মুজিবুল হককে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিয়ে শনিবার সম্মেলন করেছে রওশনপন্থিরা। যা নিয়ে তৈরি হয়েছে প্রশ্ন।

রওশন এরশাদ অনুসারীদের এই সম্মেলনে মহাসচিব নির্বাচিত হয়েছেন কাজী মামুনুর রশীদ ও নির্বাহী চেয়ারম্যান হয়েছেন কাজী ফিরোজ রশীদ। সম্মেলনে সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান এবং সাহিদুর রহমান টেপা, শফিকুল ইসলাম সেন্টু, এরশাদপুত্র রাহগির আলমাহি এরশাদ (সাদ এরশাদ), গোলাম সারোয়ার মিলন ও সুনীল শুভ রায়কে কো-চেয়ারম্যান ঘোষণা করা হয়।

তবে এই সম্মেলন মানছেন না জিএম কাদেরপন্থিরা। তারা বলছেন, জাতীয় পার্টির নবম সম্মেলন দলীয় কাউন্সিলরদের ভোটে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন জিএম কাদের। এই সম্মেলন সকলেই মেনে নিয়েছিল তখন। যেহেতু দলের নবম সম্মেলনে নেতৃত্ব পান জিএম কাদেরের নেতৃত্বাধীন কমিটি। কিন্তু জিএএম কাদের কিংবা তার নেতৃত্বাধীন কমিটি এই সম্মেলন ডাকেনি। বরং জাপা চেয়ারম্যান অক্টোবরে দশম সম্মেলন ডেকেছেন। তখনই হবে জাতীয় পার্টির দশম সম্মেলন।

এদিকে চলতি বছরের ২৯ জানুয়ারি কাজী মামুনুর রশীদের সই করা জাতীয় পার্টির নেতৃত্বে পরিবর্তন আনা হয়েছে জানিয়ে নির্বাচন কমিশনে (ইসি) চিঠি দিয়েছেন রওশন এরশাদপন্থিরা। তাদের চিঠিতে বলা হয়, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান রওশন এরশাদ ও মহাসচিব কাজী মামুনুর রশিদ দলের দাপ্তরিক কার্যক্রম পরিচালনা করবেন। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সিইসিকে অনুরোধ করা হয়।

তবে চিঠির উত্তরে ১৯ ফেব্রুয়ারি নির্বাচন কমিশন (ইসি) জানিয়েছে, ‘জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও মহাসচিবকে তাদের পদ থেকে অব্যাহতি প্রদানের বিষয়টি উক্ত দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী না হওয়ায় আপনার প্রেরিত পত্রটি মাননীয় নির্বাচন কমিশন কর্তৃক নামঞ্জুর হয়েছে। এমতাবস্থায়, বিষয়টি আপনাকে অবগত করা হলো।’ অর্থাৎ জাপার চেয়াম্যান জিএম কাদের ও মহাসচিব মুজিবুল হককে দল থেকে রওশন এরশাদ যে অব্যাহতি দিয়েছেন তা দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী না হওয়ায় ইসি রওশন পন্থিদের ‘চেয়াম্যান ও মহাসচিব’ পরিবর্তনের চিঠি নামঞ্জুর করেছেন। ফলে এখানেও জাপার নেতৃত্ব জিএম কাদেরে হাতেই রয়েছে বলে স্পষ্ট হয়।

শনিবার রওশন পন্থিদের দশম সম্মেলনের বিষয়ে জানতে চাইলে জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও অতিরিক্ত মহাসচিব রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘তারা (রওশনপন্থিরা) যদি দশম সম্মেলন দাবি করে থাকেন, তাহলে অষ্টম ও নবম সম্মেলন তারা মেনে নিয়েছে। নবম সম্মেলনে দলীয় কাউন্সিলরদের ভোটে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন জিএম কাদের। এটা তারা মেনে নিয়েছেন। এখন নবম সম্মেলনে যিনি চেয়ারম্যান হয়েছেন তিনি তো এই সম্মেলন ডাকেননি। তিনি সম্মেলন ডেকেছেন আগামী অক্টোবরে। তখনই দশম সম্মেলন হবে।’

রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া বলেন, ‘নবম সম্মেলনে যদি তাদের কাছে বৈধ হয়ে থাকে, তাহলে নবম সম্মেলনের কমিটিতে যারা আছেন তারাই তো দশম সম্মেলন ডাকবেন। কিন্তু তারা তো সম্মেলন করেননি।’

এ অবস্থায় জিএম কাদের নেতৃত্বাধীন জাপা রওশনপন্থিদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেবে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এ ব্যাপারে নির্বাচন কমিশনে রওশনপন্থিরা চিঠি দিয়েছিল। চিঠির জবাবে কমিশন জানিয়ে দিয়েছে, আপনাদের এটা নামঞ্জুর করা হলো। সিদ্ধান্ত যেটা হওয়ার নির্বাচন কমিশন থেকে হয়ে গেছে। দল থেকে ব্যবস্থা বলতে যারা এটা করেছে তাদের বহিস্কার করা হয়েছে। এখন নতুন করে যারা যাবে (রওশন এরশাদের সঙ্গে) তারাও দল থেকে বহিস্কার হবে। এর বাইরে আর কিছু করার নেই। জাতীয় পার্টির আরও তিন-চারটা গ্রুপ আছে এরাও (রওশনপন্থিরা) এমনই একটা গ্রুপ হয়ে থাকবে।’

জাতীয় পার্টির নবম সম্মেলনে কাউন্সিলরদের ভোটে দলের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন জিএম কাদের। সেহেতু দশম সম্মেলন ডাকতে হলে তো নবম সম্মেলনের কমিটির আহ্বান দরকার— এই প্রশ্নের জবাবে রওশন এরশাদ অংশের মহাসচিব মহাসচিব কাজী মামুনুর রশীদ ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘জিএম কাদেরের পর্ব তো ক্লোজ। উনাকে তো পার্টি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। সুতরাং উনার পর্বটা কেন টেনে আনেন!’

‘সংসদেও বিরোধী দলের নেতা জিএম কাদের’ এইটুকু বলার পর বাকি কথা না শুনেই কাজী মামুনুর রশীদ বলেন, ‘এটা অন্যরা মানুক।’ তিনি বলেন, ‘নবম সম্মেলন মানার কারণেই তো দলের প্রধান পৃষ্ঠপোশক (রওশন এরশাদ) হিসেবে তাকে (জিএম কাদের) অব্যাহতি দিতে পেরেছেন।’

নির্বাচন কমিশন রওশনপন্থিদের চিঠি গ্রহণ না করার বিষয়ে কাজী মামুনুর রশীদ বলেন, ‘এটা তো পুরনো ইস্যু। আমাদের চিঠির উত্তর নির্বাচন কমিশন দিয়েছে। তাদের উত্তরের পরিপ্রেক্ষিতে আমরাও একটা উত্তর দিয়েছি। বাকি আনুষ্ঠানিকতা শেষে দশম সম্মেলনের কাগজপত্র নির্বাচন কমিশনে জমা দেওয়া হবে।’