নোয়াখালীতে বৃষ্টি নেই, তবু কমছে না পানি

সকাল থেকে সূর্যের দেখা পেয়ে বানভাসি মানুষের মুখে হাসি ফুটলেও নিমেষেই তা আবার মলিন হয়ে গেছে। বৃষ্টি নেই, তবুও পানি কমছেনা। পরিস্থিতিরও উন্নতি নেই। কবে ঘরে ফিরবে আশ্রয়কেন্দ্রে আসা মানুষ। তা নিয়েই তারা বেশি দুশ্চিন্তায়। Google news অন্যদিকে আবার এটাও চিন্তার বিষয় যে, ঘরে ফিরে গেলে খাবে কি? পানি জমে থাকায় কাজকর্ম বন্ধ। উপার্জন নেই বেশ কয়েকদিন। হাতে নেই নগদ টাকা। এ অবস্থায় ঘরে ফিরলেও সেটা স্বস্তির হবে না। এমনটাই বলছে আশ্রয়কেন্দ্রে আসা পানিবন্দিরা। নোয়াখালীতে গতকাল শুক্রবার থেকে বৃষ্টি না হলেও বন্যা পরিস্থিতির তেমন কোনো উন্নতি হয়নি। পার্শ্ববর্তী জেলা ফেনী থেকে ধেয়ে আসা পানি নোয়াখালীর উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে জেলার প্রায় ২০ লাখ বাসিন্দা উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠার মধ্যে রয়েছেন। সরেজমিনে দেখা গেছে, নোয়াখালী শহরের অধিকাংশ সড়ক এখনো পানির নীচে তলিয়ে রয়েছে। কোথাও হাঁটু পরিমাণ। আবার কোথাও একটু বেশি। আবার অনেক জায়গায় একটু কম। শহরের বেশির ভাগ বাসাবাড়িতেও এখনো বন্যার পানি রয়েছে। শহরের সড়কগুলোতে রিকশা, অটোরিকশার চলাচলও কম। পানি মাড়িয়ে চলাচল করছেন মানুষ। মাইজদী হাউজিং এলাকার একরাম হোসেন নামে একজন বলেন, পুরো এলাকায় পানি আর পানি। এ অবস্থা আর কখনো দেখিনি। ঘর থেকে বের হতে পারছি না। না পারছি বাজারে যেতে, না পারছি কাজে বের হতে। ঘরে খাদ্যও তেমন নেই। পুরো শহরে পানি আর পানি। রিকশা চলে না। পানির সাথে যুদ্ধ করে বেশি পথ চলাও সম্ভব না। মধুসুদনপুর এলাকার আজিজুর রহমান বলেন, পানির জন্য ঘর থেকে বের হওয়া যাচ্ছেনা। বাজারও তেমন নেই ঘরে। বাজারে যে যাবো, তার উপায়ও নেই। রিকশা চলে না, মোটর সাইকেল নিয়েও যাওয়া যাচ্ছে না। এলাকার ছোট ছোট দোকানগুলোও বন্ধ। হাসপাতাল রোডের রোমানা নামে একজন গৃহিনী বলেন, ঘরের ভিতরে পানি। কোনো রকমে পরিবার নিয়ে আছি। টেবিলের উপর চুলা উঠিয়ে রান্না করছি। গ্যাস সিলিন্ডারের গ্যাস শেষ হয়ে আসছে। আশপাশে ছোট ছোট মুদি দোকান বন্ধ। পানি মাড়িয়ে দূরে গিয়ে প্রয়োজনীয় বিভিন্ন পণ্য কেনাকাটাও অসম্ভব। পানি না কমলে থেকে না খেয়ে থাকতে হবে। জেলার সেনবাগ, সোনাইমুড়ি ও বেগমগঞ্জ উপজেলার স্থানীয় সূত্র থেকে জানা যায়, ফেনী জেলা থেকে পানি প্রবাহিত হয়ে এসব এলাকায় ঢুকছে। বৃষ্টি না হলেও পানি কমছে না। এসব উপজেলার বাসিন্দারা চরম দুর্ভোগের মধ্যে রয়েছেন। জেলা প্রশাসক দেওয়ান মাহবুবুর রহমান বলেন, জেলার ৮টি উপজেলায় ২০ লাখের বেশি মানুষ বর্তমানে পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছেন। ৫০০টি আশ্রয় কেন্দ্রে উঠেছেন প্রায় ৭৬ হাজার বানভাসি মানুষ। সরকারি বরাদ্দ হিসেবে এ পর্যন্ত ৫০৫ মেট্রিক টন চাল ও নগদ ২৫ লাখ টাকা দেওয়া হয়েছে। আরো ১২০০ মেট্রিক টন চাল ও নগদ ২০ লাখ টাকা প্রস্তুত রয়েছে। বানভাসিদের জন্য কাজ করছে জেলার বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন, রাজনৈতিক দল, স্কাউট-রেডক্রিসেন্টসহ সর্বস্তরের মানুষ। সবাই বন্যার্তদের জন্য কাজ করছে।