গরম ও অস্বস্তিকর আবহাওয়া থেকে মুক্তি পেতে আরো ১০ দিন অপেক্ষা করতে হবে দেশবাসীকে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাস অনুযায়ী, গত মে মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে তীব্র গরম পড়তে শুরু করেছে, এখনো তা অব্যাহত আছে। তবে গত এপ্রিলের চেয়ে চলমান তাপমাত্রা অপেক্ষাকৃত কম থাকলেও বাতাসের আর্দ্রতার কারণে অস্বস্তিকর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এর ফলে, মানুষের শরীর থেকে ঘাম যেমন দ্রুত শুকাচ্ছে না; তেমনি তাপ ত্যাগ করে শরীর ঠাণ্ডা হতে পারছে না। যার কারণে মানুষ ৩২ থেকে ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার মধ্যেই অনেক অস্বস্তি অনুভব করছে। আগামী ১৫ জুন থেকে বর্ষার বৃষ্টি শুরু হলে এই অস্বস্তি কাটানোসহ ধীরে ধীরে ‘ধরণি’ শীতল হওয়া শুরু করবে। আবহাওয়া সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
ঢাকা আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, এই গরমে ‘লু বাতাসের’ জেরে আর্দ্রতাজনিত অস্বস্তি উঠবে চরমে। তাপমাত্রা বাড়বে ঢাকা, রাজশাহী, খুলনা ও বরিশাল বিভাগ এবং ময়মনসিংহ, মৌলভীবাজার, রাঙ্গামাটি, কুমিল্লা, চাঁদপুর, নোয়াখালী ও বান্দরবান জেলায়। এসব জেলার উপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে। সারাদেশে দিন এবং রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।
আবহাওয়াবিদ মনোয়ার হোসেন বলেন, মৌসুমী বায়ু এখনো বাংলাদেশ উপকূল থেকে অনেক দূরে আছে। টেকনাফের উপকূলে আসতে পারে ১২ জুনের দিকে। এরপর চট্টগ্রাম, কুমিল্লা ও সিলেটের দিকে বৃষ্টি শুরু হতে পারে। ধীরে ধীরে দেশের মধ্যাঞ্চল হয়ে সারাদেশে ছড়িয়ে পড়বে এই বৃষ্টি। তিনি বলেন, এই মৌসুমি বায়ু আসার আগের সময়ে আবহাওয়া এমনই থাকবে। বাতাসে আদ্রতা বেশি হওয়ায় মানুষ তাপমাত্রা যা তারচেয়ে বেশি অস্বস্তি
কানাডার সাস্কাচোয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের আবহাওয়া ও জলবায়ু গবেষক মোস্তফা কামাল পলাশ বলেছেন, আগামী ১৪ জুন পর্যন্ত চলমান তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকতে পারে। এ সময় তাপমাত্রা ৪৫ ডিগ্রি পর্যন্ত উঠতে পারে। তিনি আবহাওয়ার ইউরেপিয়ান মডেল বিশ্লেষণ করে বলেন, ৩০ মের পর থেকে বাংলাদেশের উপর দিয়ে গরম ও শুষ্ক বাতাস (তাপপ্রবাহ) অতিক্রম করা শুরু করেছে। আজ থেকে আগামী ১২ জুন পর্যন্ত চুয়াডাঙ্গা, কুষ্টিয়া, মেহেরপুর, যশোর, ঝিনাইদহ, মাগুরা, রাজশাহী, নাটোর ও পাবনা জেলায় দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪২ থেকে ৪৫ ডিগ্রি পর্যন্ত উঠার সম্ভাবনা রয়েছে। ১৪ জুন পর্যন্ত সিলেট ও চট্টগ্রাম বিভাগ ছাড়া দেশের অন্য কোনো বিভাগে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা
খুব কম। সবমিলিয়ে ১৪ জুন পর্যন্ত বাংলাদেশের উপর দিয়ে মাঝারি থেকে তীব্রমানের তাপপ্রবাহ বয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। প্রসঙ্গত, কোনো বিস্তৃত এলাকাজুড়ে তাপমাত্রা ৩৬ থেকে ৩৮ ডিগ্রি থাকলে মৃদু, ৩৮ থেকে ৪০ ডিগ্রি থাকলে মাঝারি এবং ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের চেয়ে বেশি হলে তীব্র তাপপ্রবাহ বলে।
বিভিন্ন গাণিতিক বিশ্লেষণ করে গবেষক মোস্তফা কামাল পলাশ বলেন, ৭ থেকে ১১ জুন পর্যন্ত রাজশাহী, খুলনা ও রংপুর বিভাগের ওপর দিয়ে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাবে। আজ থেকে ১৩ জুন পর্যন্ত রাজশাহী, রংপুর, খুলনা, ঢাকা, বরিশাল, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম বিভাগের রেশির ভাগ জেলার উপর দিয়ে মাঝারি তাপপ্রবাহ বয়ে যাবে। জাপানের কৃত্রিম ভূ-উপগ্রহ থেকে প্রাপ্ত চিত্র বিশ্লেষণ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশের আকাশে খুবই কম পরিমাণে মেঘের উপস্থিত দেখা যাচ্ছে। বঙ্গোপসাগর থেকে জলীয়বাষ্পযুক্ত বাতাস রাজশাহী ও চট্টগ্রাম বিভাগের উপর দিয়ে বাংলাদেশের স্থলভাগের উপর প্রবাহিত হচ্ছে। যে কারণে দেশের সব জেলায় বায়ুর আর্দ্রতা ৪০ থেকে ৮০ শতাংশে বিরাজ করছে। এছাড়া জুন মাসের এই সময়টিতে সূর্য ঠিক বাংলাদেশের উপর অবস্থান করে। যার কারণে দিনের বেলা সূর্য শক্তি বাংলাদেশের উপরের বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করতেছে। গত এপ্রিল মাসে দেশের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া তীব্র তাপপ্রবাহের তুলনায় বর্তমান তাপমাত্রা অপেক্ষাকৃত কম থাকলেও বাতাসের আর্দ্রতার কারণে অস্বস্তিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। এর ফলে মানুষের শরীর থেকে ঘাম দ্রুত শুকিয়ে যাচ্ছে না। শরীরের তাপ ত্যাগ করে ঠাণ্ডা হতে পারছে না। যার কারণে মানুষ অনেক অস্বস্তি অনুভব করছে ৩২ থেকে ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার মধ্যেই।
আবহাওয়ার এই সতর্কবার্তার আলোকে শিক্ষা অধিদপ্তরের আওতাধীন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহের শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যঝুঁকি এড়ানোর লক্ষ্যে সতর্কতামূলক নির্দেশনা প্রতিপালনের জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশক্রমে অনুরোধ করেছে। এতে বলা হয়, প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং যেসব মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে প্রাথমিক স্তর সংযুক্ত রয়েছে সেসব বিদ্যালয়ের প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণির শ্রেণি কার্যক্রম আগামী ৮ জুন পর্যন্ত বন্ধ থাকবে। পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত প্রাত্যহিক সমাবেশ স্থগিত থাকবে। শিক্ষার্থীরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে রোদের মধ্যে খেলাধুলাসহ অন্যান্য কার্যক্রম থেকে বিরত থাকবে। শিক্ষার্থীদের পর্যাপ্ত পানি পানের পরামর্শ দিতে হবে। শিক্ষার্থীরা প্রয়োজনে নিজ বাসা থেকে পর্যাপ্ত পানি সঙ্গে নিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আসবে। শ্রেণিকক্ষে পর্যাপ্ত প্রাকৃতিক আলো-বাতাসের জন্য প্রতিষ্ঠানের সব জানালা ও দরজা সম্পূর্ণ খোলা রাখার ব্যবস্থা করতে হবে। শ্রেণিকক্ষ, শিক্ষক মিলনায়তন ও কর্মচারীদের কক্ষে প্রয়োজনীয় বৈদ্যুতিক পাখা সক্রিয় রাখার ব্যবস্থা করতে হবে। দেশের সব সরকারি-বেসরকারি নিম্ন মাধ্যমিক, মাধ্যমিক বিদ্যালয়, স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ, প্রধান শিক্ষককে এই নির্দেশনা পাঠানো হয়েছে। পাশাপাশি কৃষকদের জন্য এই গরমের করণীয় সম্পর্কে কৃষি বিভাগও বিভিন্ন নির্দেশনা দিচ্ছে।
সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, প্রায় দুই সপ্তাহ ধরেই দেশের কোথাও বৃষ্টির দেখা নেই। ফলে তাপপ্রবাহের এলাকার পরিধি বেড়েই চলেছে। মৌসুমি বায়ু আসার অপেক্ষায় দেশ। ঋতু পরিবর্তনের এই সময়ে বাতাসে আদ্রতার পরিমাণও বেশি থাকে। ফলে তাপমাত্রার পরিমাণ যতটা, তারচেয়েও অনেক তাপ অনুভূত হচ্ছে মানুষের কাছে। গরমে ঘেমে আরও অস্বস্তিকর হয়ে উঠছে পরিবেশ। সবচেয়ে কষ্টে ভুগছেন শ্রমজীবী মানুষরা- বিশেষ করে রিকশাচালক, বাসচালক ও সহকারী, হকার ও নির্মাণ শ্রমিকরা। এই তীব্র তাপকে উপেক্ষা করেই কাজ চালিয়ে যেতে হচ্ছে তাদের। গত ২৩ ঘণ্টায় দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে দিনাজপুরে ৪১ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এছাড়া বিভাগীয় শহরগুলোর মধ্যে ঢাকায় ৩৭ দশমিক ৬, রাজশাহীতে ৩৯ দশমিক ৮, রংপুরে ৩৬ দশমিক ৮, ময়মনসিংহে ৩৬, সিলেটে ৩৫, চট্টগ্রামে ৩৪ দশমিক ২, খুলনায় ৩৮ এবং বরিশালে ৩৬ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানায়, পশ্চিমা লঘুচাপের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ এবং আশপাশের এলাকায় অবস্থান করছে। আগামী ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে বলা হয়, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের দুয়েক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। এছাড়া দেশের অন্য এলাকায় অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ