রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকায় গোলাগুলিসহ কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় পুরো এলাকা জুড়ে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে। হঠাৎ করে আবারও ভয়ঙ্কর ‘কবজি কাটা গ্রুপ’ সরব হয়েছে। এ ছাড়াও জেনেভা ক্যাম্প জুড়ে মাদক কারবারিদের আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে ভয়াবহ সংঘর্ষ নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত কয়েকদিন ধরে মোহাম্মদপুর জেনেভা ক্যাম্পে মাদক ব্যবসায়ীদের দুই গ্রুপের মধ্যে ভয়াবহ সংঘর্ষে গোলাগুলির ঘটনা ঘটছে। এতে জেনেভা ক্যাম্পের শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী চুয়া সেলিম, আকরাম ও শাহ আলমের নেতৃত্বে আরেক শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী সোহেল ওরফে বুনিয়া সোহেলের গ্রুপের মধ্যে ভয়াবহ সংঘর্ষ চলছে। থানা থেকে লুট করে নেওয়া অস্ত্র ও দুই মাদক ব্যবসায়ী গ্রুপের কাছে থাকা অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে এক গ্রুপ আরেক গ্রুপের ওপর হামলা করছে।
মাদক ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে এ সংঘর্ষে যোগ দিয়েছে জেনেভা ক্যাম্পের বিখ্যাত ‘বোবা বিরিয়ানী’ এর মালিকের ভাই কামরান এবং তার ছেলে ইরফান। দীর্ঘদিন ধরে চলা এই সংঘর্ষ নতুন করে গোলাগুলিতে রূপ নিয়েছে। কেউ মাদক ব্যবসায়ীদের বাঁধা দিলে তারা এখন প্রকাশ্যে অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ছে সাধারণ বাসিন্দাদের ওপর। বিশেষ করে, চুয়া সেলিম, শাহ আলম, বোবা বিরিয়ানীর ইরফান, বুনিয়া সোহেল জেনেভা ক্যাম্পের শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী হওয়ায় যে যার মতো মাদক ব্যবসা ধরে রাখতে সরব হয়ে উঠেছে।
সূত্র জানায়, সরকার পতনের পর থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তেমন সরব না থাকায় মোহাম্মদপুর এলাকাকে নতুন করে আবারও সন্ত্রাসীরা তাদের অভয়ারণ্য হিসেবে গড়ে তোলার চেষ্টা করছেন। এই এলাকার আতঙ্ক হিসেবে গড়ে ওঠা শীর্ষ কিশোর গ্যাং সদস্যের মূল হোতা আনোয়ার ওরফে কবজি কাটা আনোয়ার আবারও সরব হয়ে উঠেছে। সেইসঙ্গে ঢাকা উদ্যান, নবীনগর হাউজিং, চাঁদ উদ্যান ও রায়েরবাজার বোর্ড ঘাট এলাকায় প্রতিদিন সন্ত্রাসীরা দেশীয় অস্ত্র নিয়ে সাধারণ মানুষের ওপর হামলা করছে। প্রতিদিনই তাদের টার্গেট ব্যাক্তিকে কুপিয়ে গুরুতর জখমসহ হত্যার করার মতো ভয়ঙ্কর ঘটনায় এখন মোহাম্মদপুর জুড়ে নতুন করে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। এই কিশোর গ্যাং গ্রুপ ছাড়াও, জেনেভা ক্যাম্প এলাকা জুড়ে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। এই এলাকায় মাদক ব্যবসায়ীদের হাতে হাতে এখন অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র। জেনেভা ক্যাম্পের মাদক ব্যবসায়ীরা সাবেক সংসদ সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানকের অনুসারী হওয়ায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আটক করলে নানক অথবা তার ব্যক্তিগত সহকারী মাসুদুর রহমান বিপ্লব গিয়ে সরাসরি ছাড়িয়ে আনতো। এছাড়াও, ছাত্রদের বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের সময় জেনেভা ক্যাম্পের মাদক ব্যবসায়ীরা নানক,পাগলা মিজান ও কাউন্সিলর রাষ্ট্রনের দেওয়া অবৈধ অস্ত্র নিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করেছে। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা পালিয়ে গেলেও সেসব অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র জেনেভা ক্যাম্পের এসব মাদক ব্যবসায়ীদের কাছে এখনও রয়ে গেছে। যা দিয়ে এখন প্রতিনিয়ত জেনেভা ক্যাম্পের ভেতর সংঘর্ষে লিপ্ত হচ্ছে দুই গ্রুপের সদস্যরা।
মোহাম্মদপুর বাসিন্দা স্কুল শিক্ষিকা আজমত আরা জানান, আমার বাসা নবীনগর হাউজিং এলাকায়। সেখানে দিনের বেলাতেই অস্ত্র হাতে সন্ত্রাসীরা কারও না কারও ওপর ঝাঁপিয়ে পড়তে দেখা যাচ্ছে। কেউ তাদের বাঁধা দিতে আসলে তাদের টার্গেট করে কিছুক্ষণ পর তাদের ওপরও হামলা করে। এ জন্য আমরা তাদের কর্মকাণ্ড দেখলেও কোনো কর্ণপাত করতে সাহস পাই না। উল্টো দেখলে না দেখার ভান করেই চলে যাই। বর্তমানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অতো সরব না থাকায় তারা আরও ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেছে।
চাঁদ উদ্যান এলাকার আরেক বাসিন্দা সবুর আলী জানান, আমি মোহাম্মদপুর থাকি। এটা আমার আত্মীয় স্বজনরা শোনার পর ভয়ে আর আমার বাসায় আসতে চায় না। কারণ, চব্বিশ ঘন্টাই চাঁদ উদ্যান এলাকায় অস্ত্র হাতে সন্ত্রাসীরা হামলা করে। পুরো সড়কে যেখানে যাকে পাবে। তার ওপর হামলা করে সব কিছু ছিনিয়ে নিয়ে যায়। তাদের মতো মোহাম্মদপুর এলাকার বেশ কয়েকজন বাসিন্দা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এমন পরিস্থিতি সামলাতে যৌথ বাহিনীর জরুরি অভিযান প্রয়োজন। নাহলে অনেক সাধারণ বাসিন্দা প্রাণ হারাতে পারেন।
এ বিষয়ে মোহাম্মদপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আলী ইফতেখার হাসান জানান, কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় ভুক্তভোগীর মরদেহ হাসপাতালে নিয়ে গেছে। এখন পর্যন্ত তার পরিবারের কেউ আমাদের কাছে অভিযোগ নিয়ে আসেনি। জেনেভা ক্যাম্পের ঘটনাটি আগের হতে পারে। গোলাগুলির যেসব ভিডিও এখন প্রকাশ হচ্ছে। এগুলো আগের ভিডিও। সে ভিডিওগুলো অনেকে কাটছাঁট করে প্রকাশ করছে। আবার হতেও পারে সেগুলো এখনের ভিডিও। তবে, কেউ এখনও আমাদের কাছে এ বিষয়ে অভিযোগ নিয়ে আসেননি।