গতকাল বুধবার অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠকে রাজনৈতিক দলগুলোর শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা ঐক্যবদ্ধভাবে এমন অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।
ওই বৈঠকের শুরুতে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর ‘মুক্ত স্বাধীন নতুন বাংলাদেশকে’ মুছে দিতে ‘কল্পকাহিনি’ প্রচার করা হচ্ছে মন্তব্য করে রাজনৈতিক দলগুলোকে তা ঠেকাতে একজোট হওয়ার আহবান জানান।
রাজনৈতিক নেতাদের মূল্যায়ন
সরকারের চার মাসের সাফল্য-ব্যর্থতা সম্পর্কে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু গতকাল শনিবার কালের কণ্ঠকে বলেন, গণ-অভ্যুত্থানের পর পৃথিবীর যেকোনো দেশেই অরাজকতা তৈরি হয়। সে জন্য গণ-অভ্যুত্থানের পর আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতির দিকে বিশেষ দৃষ্টি দিতে হয়। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকার ঠিক যেভাবে আইন-শৃঙ্খলা নিয়ে কাজ করার দরকার ছিল সেভাবে পারেনি। বাজার পরিস্থিতিও বেসামাল। সরকার সঠিক পদক্ষেপ নিয়ে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়েছে।
তবে ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু মনে করেন, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক দুরবস্থা থেকে পরিত্রাণের জন্য সরকার কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে, যা ইতিবাচক। তা ছাড়া ভারতের আগ্রাসী ভূমিকার বিরুদ্ধে জাতিকে ঐক্যবদ্ধ রাখার বিষয়ে এই সরকারের উদ্যোগও প্রশংসনীয়।
তিনি বলেন, সব সমস্যার সমাধান দিতে পারে একমাত্র জাতীয় সংসদ নির্বাচন। তাই অতি প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে সরকারকে নির্বাচন দিতে হবে।
জটিল পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে চার মাস অতিবাহিত করতে পারাটা অন্তর্বর্তী সরকারের বড় সফলতা বলে মনে করেন বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ও গণতন্ত্র মঞ্চের শীর্ষ নেতা সাইফুল হক। তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘এরই মধ্যে নির্বাচন কমিশন ও বিভিন্ন সংস্কার কমিশন গঠনসহ সরকার বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়েছে। ডিসেম্বরের মধ্যে কমিশনগুলোর রিপোর্ট চলে আসবে। এরপর রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলাপ করে নির্বাচনী পথনকশা প্রণয়ন করা হবে। রাজনৈতিক দলগুলোকে আস্থায় নিয়ে গোটা নির্বাচনীপ্রক্রিয়া শুরু করা গেলে এখন যেটুকু আস্থাহীনতা আছে তা কেটে যাবে।
তিনি আরো বলেন, নানা ধরনের দাবি-দাওয়া নিয়ে বিভিন্ন পক্ষ রাস্তায় নামায় পরিস্থিতি অস্থিতিশীল। এরপর দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি এই অস্থিতিশীলতা বাড়িয়ে দিয়েছে। এরপর আওয়ামী লীগের পরাজয়কে মোদি সরকার নিজেদের পরাজয় বলে মনে করায় এবং ভারতে নানা কার্যক্রম অন্তর্বর্তী সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সীমান্ত এলাকায় ভারতের ক্ষমতাসীন বিজেপির নেতৃত্বে উগ্র হিন্দুত্ববাদী দলগুলোর সমাবেশ, ত্রিপুরায় বাংলাদেশ উপহাইকমিশনে হামলা এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের শান্তিরক্ষী বাহিনী বাংলাদেশে পাঠানোর দাবি বাংলাদেশের জাতীয় নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্বের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। এসব বিষয় সরকারকে গুরুত্ব দিয়ে দেখতে হবে।’
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) সভাপতি রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, ‘গত চার মাসে কিছু কালাকানুন বাতিল ও দুর্নীতির শ্বেতপত্র প্রকাশসহ বেশ কিছু সংস্কার কার্যক্রম গ্রহণ করা অন্তর্বর্তী সরকারের বড় সফলতা। তবে গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে গঠিত সরকারের সামনে অনেক চ্যালেঞ্জ ছিল।
এর মধ্যে ছিল আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন, নিহত ও আহতদের তালিকা প্রণয়ন এবং দ্রব্যমূল নিয়ন্ত্রণ। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও আন্দোলনকারী শক্তিগুলোকে আস্থায় নিয়ে সরকারের এই কাজটি করা প্রয়োজন ছিল। কিন্তু সরকার সেই কাজটি করতে ব্যর্থ হয়েছে। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়ায় জনগণ, বিশেষ করে সংখ্যালঘুদের আস্থাহীনতা বেড়েছে। বাজারব্যবস্থা সংস্কারে উদ্যোগ না নিয়ে পুরনো ব্যবস্থা বহাল রেখে বাজার নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে।
এতে জনমনে ক্ষোভ বাড়ছে। এ ছাড়া সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য অপরিহার্য সংস্কার কাজগুলো চিহ্নিত না করতে পারায় জনমনে হতাশা বেড়েছে। এর সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধবিরোধী সাম্প্রদায়িক শক্তির আস্ফাালন নতুন সংকট তৈরি করেছে। সংকট সমাধানে রাজনৈতিক দলগুলোকে আস্থায় নিয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।’
শিক্ষাঙ্গনে পুরোপুরি শৃঙ্খলা ফেরেনি
দেশে প্রাক-প্রাথমিক থেকে উচ্চশিক্ষা পর্যন্ত শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় চার কোটি। তবে শিক্ষা পরিবারের সঙ্গে যুক্ত দেশের প্রায় সব পরিবার। কিন্তু সেই শিক্ষা খাতে এখনো পুরোপুরি শৃঙ্খলা ফেরেনি। নানা ইস্যুতে শিক্ষার্থীরা প্রায়ই শিক্ষাঙ্গন ছেড়ে দাবি আদায়ে সড়কে নামছে। একাধিকবার সচিবালয় ঘেরাওয়ের মতো কর্মসূচি দিয়েছে। এমনকি শিক্ষা প্রশাসন এখনো ফ্যাসিস্টমুক্ত হয়নি বলে অভিযোগ রয়েছে।
আগামী বছর থেকে পাঠ্যপুস্তক ফিরে আসছে পুরনো শিক্ষাক্রমে। পাঠ্যবইয়ে যুক্ত করা হয়েছে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ইতিহাস। বাদ দেওয়া হয়েছে অতিরঞ্জিত সব বিষয়। এরই মধ্যে পাণ্ডুলিপি পরিমার্জন শেষ হয়েছে। তবে এখনো সব বই ছাপার কাজ শুরু হয়নি। যে গতিতে কাজ চলছে তাতে আগামী বছরের শুরুতে সব বই হাতে পাবে না শিক্ষার্থীরা।
ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর দেশের ৫৫টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশির ভাগ উপাচার্য, উপ-উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষ পদত্যাগ করেন। ফলে উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। এরই মধ্যে বেশির ভাগ বিশ্ববিদ্যালয়েরই উপাচার্য পদ পূরণ করা হয়েছে। তবে এখনো অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষের পদ শূন্য রয়েছে।
স্কুল-কলেজ স্বাভাবিকভাবেই চলছে। কিন্তু স্বাভাবিক ছন্দে ফিরতে পারেনি শিক্ষার্থীরা। আবারও বেড়েছে প্রাইভেট-কোচিংয়ের দৌরাত্ম্য। শিক্ষকরা তাদের নানা দাবি-দাওয়া নিয়ে এখনো সরব রয়েছেন। পৃথক বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত রাজধানীর সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা তাদের আন্দোলন স্থগিত করলেও মাঠে রয়েছে সরকারি তিতুমীর কলেজ।
জনপ্রশাসনে চার মাসে পদোন্নতি ৭৬৮ জনের
গত চার মাসে সহকারী সচিব থেকে সচিব পদে ৭৬৮ জনকে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরের প্রায় দুই হাজার কর্মকর্তাকে বদলি করা হয়েছে। আট থেকে ১০ জন কর্মকর্তাকে বাধ্যতামূলক অবসর এবং প্রায় এক শ জনকে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) করা হয়েছে। বাতিল করা হয়েছে দেড় শ কর্মকর্তার চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ। এ ছাড়া প্রায় এক শ জনকে রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ করা হয়েছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, হাসিনা সরকারের নিয়োগ দেওয়া অন্তত ২৫ জন সচিবকে ওএসডি করা হয়েছে, এখনো বহাল রয়েছেন অন্তত দুই ডজন সচিব। পর্যায়ক্রমে তাদের অনেককে ওএসডি বা বিদায় করা হতে পারে। বিশেষ করে যেসব সচিব হাসিনা সরকারের আমলে জাতীয় নির্বাচনে বিশেষ ভূমিকা রেখেছেন তাদের পর্যায়ক্রমে সরানো হবে।
এ ছাড়া গত সাড়ে ১৫ বছরে বিভিন্ন স্তরের পদোন্নতিবঞ্চিত অন্তত ৫০০ কর্মকর্তাকে ভূতাপেক্ষ পদোন্নতি এবং প্রায় আড়াই শ কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। পদোন্নতিপ্রাপ্তদের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরে পদায়ন করা হয়েছে। রাজনৈতিক কারণে বঞ্চিত প্রশাসনের কর্মকর্তাদের ক্ষতিপূরণ দিতে সাবেক অর্থসচিব জাকির আহমেদ খানকে প্রধান করে পর্যালোচনা কমিটি গঠন করা হয়েছে।
হাসিনা সরকারের নিয়োগ দেওয়া মাঠ প্রশাসনের বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসক (ডিসি) পদেও পরিবর্তন আনা হয়েছে। এসব পদক্ষেপ ছাড়াও সরকারি কর্মচারীদের সম্পদের হিসাব প্রতিবছর নির্দিষ্ট ফরমেটে জমা দিতে বাধ্যতামূলকভাবে নির্দেশনা জারি করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। এমনকি রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পরিপ্রেক্ষিতে কর্মচারীদের বিশেষ সতর্কতা অবলম্বনের নির্দেশ দিয়েছে সরকার। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে এরই মধ্যে সব সচিবের কাছে ৯ দফা নির্দেশনা পাঠানো হয়েছে।
পুলিশের কার্যক্রমে গতি ফিরেছে
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় দেশের থানাগুলো। থানা ভবন, সরকারিভাবে বরাদ্দ গাড়িসহ পুলিশের ব্যক্তিগত কিছু মোটরসাইকেলও পুড়ে যায়। লুট হয় অস্ত্র। জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে সেনাবাহিনী ও ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা আন্দোলনকারীদের লাশ উদ্ধার করে, যেটি পুলিশের করার কথা। ৫ আগস্ট-পরবর্তী পুলিশের কার্যক্রমে একেবারে ধীরগতি লক্ষ করা যায়। আতঙ্কিত অনেক পুলিশ সদস্য কাজে যোগ দেওয়া থেকে বিরত থাকেন।
তবে ধীরে ধীরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করে। এ বিষয়ে পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি ইনামুল হক সাগর বলেন, পুলিশের আভিযানিক ও গোয়েন্দা কার্যক্রম থেকে শুরু করে পুলিশের রুটিন কাজকর্ম পুরোদমে চলছে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় রাজধানীসহ সারা দেশে পুলিশ টহল দিচ্ছে, চেকপোস্ট বসিয়ে দায়িত্ব পালন করছে। গ্রেপ্তার হচ্ছে সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামিরা। উদ্ধার হচ্ছে মাদকদ্রব্য। অস্ত্রসহ ধরা পড়েছে ডাকাত, ছিনতাইকারী।
ট্রাফিক পুলিশের কার্যক্রমেও গতি ফিরেছে উল্লেখযোগ্যভাবে। গত বৃহস্পতি ও শুক্রবার ট্রাফিক পুলিশ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ট্রাফিক আইন লঙ্ঘনকারীদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করে দুই হাজার ৭৩৯টি মামলা করেছে। এ ছাড়া অভিযানকালে ৪৬টি গাড়ি ডাম্পিং ও ৭০টি গাড়ি রেকার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ডিএমপির ডিসি (মিডিয়া) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান।
সাফল্য নিয়ে সরকারপক্ষের মূল্যায়ন
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান প্রধান সাফল্য এবং কাজের অগ্রগতি গত ১৫ নভেম্বর নিজের ফেসবুক পেজে তুলে ধরেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেসসচিব শফিকুল আলম। ক্ষমতা গ্রহণের পরপরই শৃঙ্খলা ফেরানো অন্তর্বর্তী সরকারের অন্যতম সাফল্য উল্লেখ করে তিনি লেখেন, ‘আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছিলেন, হাসিনাকে ক্ষমতা থেকে সরানো হলে লাখ লাখ মানুষ মারা যাবে।
কিন্তু বাস্তবে একটি প্রবল গণ-অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পরও তেমন কোনো ঘটনা ঘটেনি। অন্তর্বর্তী সরকার রাজনৈতিক দল ও ছাত্রসমাজকে সঙ্গে নিয়ে আগস্টের প্রথম কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই দেশে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হয়। এ সময় পুলিশ কার্যত অনুপস্থিত ছিল। এ সময় সরকার আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্থিতিশীল রাখতে সফল হয়েছে।’
জুলাই-আগস্ট হত্যাকাণ্ডের জন্য জবাবদিহি ও ন্যায়বিচার প্রসঙ্গে বলা হয়, ‘অন্তর্বর্তী সরকার জুলাই-আগস্টের গণহত্যা তদন্তে জাতিসংঘ নেতৃত্বাধীন একটি ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং (তথ্য অনুসন্ধান) মিশনকে আমন্ত্রণ জানায়। এটি সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবে কাজ করবে। মিশন আগামী মাসের (ডিসেম্বর) শুরুতে প্রথম প্রতিবেদন জমা দেবে বলে আশা করা হচ্ছে। এ ছাড়া দেশে পুনর্গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল (আইসিটি) এই হত্যাকাণ্ডের তদন্ত করছে।
হাসিনা ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে। চ্যালেঞ্জ হলো, বিচারকে আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন করা, যাতে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলো এর রায় নিয়ে প্রশ্ন তুলতে না পারে; যেমনটা ২০১৩-১৬ সালের আইসিটি রায়গুলোর ক্ষেত্রে হয়েছিল।’ এ ছাড়া বলা হয়, ‘অন্তর্বর্তী সরকার শহীদ পরিবারের জন্য ৩০ লাখ টাকা অনুদান ঘোষণা করেছে, আহতদের জন্য বিনা মূল্যে চিকিৎসা নিশ্চিত করেছে এবং শহীদ পরিবারের সহায়তায় একটি তহবিল গঠন করেছে।’
অর্থনীতি পুনরুদ্ধার প্রসঙ্গে বলা হয়, ‘অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা গ্রহণ করার সময় অর্থনীতি ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে ছিল। সরকারের ১০০ দিনের মধ্যে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ পুনরুদ্ধার হয়েছে। রিজার্ভে হাত না দিয়েই বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের আন্তর্জাতিক পেমেন্ট বাধ্যবাধকতা পূরণ করা হয়েছে। রপ্তানি ঘুরে দাঁড়িয়েছে। সেপ্টেম্বরে চালান ৭ শতাংশ এবং অক্টোবরে ২০ শতাংশের বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। ব্যাংকিং খাত স্থিতিশীল হয়েছে। দেশের সেরা অর্থনীতিবিদদের অর্থনীতিকে পুনরুদ্ধার করতে নিযুক্ত করা হয়েছে এবং তারা প্রশংসনীয় কাজ করেছেন।
অস্থিরতা ও সংকটের দক্ষ ও শান্তিপূর্ণ ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে বলা হয়, ‘অন্তর্বর্তী সরকারের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল প্রত্যাশা পূরণ। বিভিন্ন গোষ্ঠী দাবি নিয়ে রাস্তায় নেমেছে এবং হঠাৎ করে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। সরকার এ পর্যন্ত আলোচনার মাধ্যমে বিক্ষোভ মোকাবেলা করেছে। বিক্ষোভ দমন করতে খুব কমই বল প্রয়োগ করা হয়েছে। গার্মেন্টস খাতে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। রাজনৈতিকভাবে সংশ্লিষ্ট কিছু কারখানা মালিক গাঢাকা দিয়েছেন, ফলে সরকারকে প্রতিদিনই সংকট মোকাবেলা করতে হয়েছে। তবে সরকার সর্বোচ্চ সংযম দেখিয়ে অস্থিরতার অবসান ঘটিয়েছে। কিছু জায়গায় এখনো সমস্যা রয়ে গেছে, তবে তা রপ্তানি কার্যক্রমে প্রভাব ফেলতে পারেনি।
শফিকুল আলম ভয়াবহ বন্যা ও নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি সামাল দেওয়া বিষয়ে উল্লেখ করেন, অন্তর্বর্তী সরকার কয়েকটি বিধ্বংসী বন্যা এবং মূলত প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি দক্ষতার সঙ্গে সামাল দিয়েছে। আনসার সদস্যদের প্রতিবাদ শান্তিপূর্ণভাবে মোকাবেলা করা হয়েছে, কোনো সমস্যার সৃষ্টি হয়নি। এ ছাড়া নতুন রোহিঙ্গা সংকট এত নিঃশব্দে সামাল দেওয়া হয়েছে যে কেউই তা বুঝতে পারেনি।
সাংস্কৃতিক পুনর্জাগরণ হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের সমাজে নজিরবিহীন বিতর্কের সূচনা হয়েছে। মাদরাসার ছাত্র থেকে শহুরে অভিজাত, নারীবাদী থেকে দক্ষিণপন্থী—সবাই এই বিতর্কে অংশ নিয়েছে। প্রতিদিন নতুন সেমিনার ও আলোচনার আয়োজন করা হচ্ছে। ইতিহাস নতুন দৃষ্টিকোণ থেকে বিশ্লেষণ করা হচ্ছে। চিন্তা-ভাবনা গভীরভাবে ভাগ করা হচ্ছে এবং আলোচনা করা হচ্ছে। তরুণ তারকারা জাতীয় মঞ্চে তাদের আগমন ঘোষণা করেছেন। পুরনো তারকারা নিজেদের প্রাসঙ্গিকতা টিকিয়ে রাখতে সংগ্রাম করছেন। আগামী ফেব্রুয়ারিতে এমন কিছু সেরা বই দেখা যাবে, যেগুলো আমাদের সমাজের কাঠামো নিয়ে গভীর আলোচনার ভিত্তি গড়তে পারে।’
শফিকুল আলম তার লেখায় আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে অন্তর্বর্তী সরকারের সাফল্য, সংস্কার কমিশন এবং নির্বাচন কমিশন গঠনের বিষয়টিও উল্লেখ করেন।