মেন্টালি টর্চার্ড হয়েছি, কিন্তু মুখ ফুটে বলতে পারিনি: প্রভা

ক্যারিয়ারের সু-সময়ে ব্যক্তি জীবনে সমালোচনায় জড়িয়ে কাজ থেকে ছিটকে পড়েন অভিনেত্রী সাদিয়া জাহান প্রভা। তবে সে সব সামলে পুনরায় কাজে ফিরেন এই অভিনেত্রী। কিন্তু নিজেকে মেলে ধরার সে চেষ্টায় ভাগ্য সহায় হয়নি প্রভার। বরাবরই কাজের চেয়ে ব্যক্তি জীবনের আলোচনায় এসেছেন তিনি। এসব ঘিরেই সবসময় চর্চায় থাকেন প্রভা। ফলে ধীরে ধীরে গণমাধ্যম এড়িয়ে চলতে শুরু করেন তিনি। এতদিন সাংবাদিক ভীতি নিয়ে কোথাও মুখ খোলেননি তিনি। তবে কয়েকদিন আগে জানিয়েছিলেন, তার অনুমতি ছাড়া যেন কোনো সংবাদ প্রকাশ না করা হয়। শনিবার (১ মার্চ) অভিনয়শিল্পী সংবাদ সম্মেলনের পর সাংবাদিকদের এড়িয়ে চলার কারণ বিষয়ে সরাসরি কথা বলেন প্রভা। এসময় প্রভা বলেন, ছোটবেলায় পড়ে গিয়ে ব্যথা পেলে ভয় পেতাম, কারণ আম্মু জানলে বকা দেবে। এখন ফিজিক্যালি অ্যাবিউজড হলেও হজম করে ফেলি, কারণ তার চেয়ে বড় ভয় হয় যদি জার্নালিস্ট জানতে পারে- তাহলে কী হবে! আমার জীবনে যারা (প্রেমিক) এসেছে, প্রত্যেকে যাওয়ার সময় একটা ব্লেম গেম খেলেছে। এটার মধ্যে মেন্টালি টর্চার্ড হয়েছি, কিন্তু কাউকে কিছু মুখ ফুটে বলতে পারিনি। বরাবরই মনে হয়েছে বললেই যদি জার্নালিস্ট জেনে যায়? ডিভোর্সের পেপার যখন ফাইল করি, নিয়ম অনুযায়ী আমার কিছু পাওনা থাকে। কিন্তু সেটা নিয়ে কথা বলতে ভয় করে, যদি সেটা খবরে চলে আসে। আমি সবকিছুই করতে পারতাম, সাংবাদিকরা যদি আমাকে সাপোর্ট করত। প্রভা সাংবাদিকদের অভিযোগ করে আরো বলেন, কিছুদিন আগে আমার ভেরিফায়েড পেজ থেকে জানিয়েছি, কথা বলা ছাড়া আমার কিছু পাবলিশ করবেন না। যেমন কদিন আগে, রোজায় নরম ভাষায় কিছু একটা লিখলাম। পরদিন নিউজ হলো- অবশেষে ক্ষমা চাইলেন প্রভা! বলেন তো কিসের জন্য ক্ষমা চাইব আমি? অনেকে বলে আমি অ্যাটেনশন সিকার, তাই এসব পোস্ট দিচ্ছি। অথচ আমি অ্যাটেনশনই চাই না খবরের ভয়ে। এত অন্যায় আমার সঙ্গে, অথচ আমি প্রতিবাদ জানাতে পারি না, ভয়, সাংবাদিকরা লিখবেন। প্রভা উপস্থিত সাংবাদিকদের ভাই সম্বোধন করে অনুরোধ করেন, কেউ যদি তার নামে সোশ্যাল হ্যান্ডেলে বা খবরে বাজে কথা লেখেন, তবে যেন সেটার প্রতিবাদ করেন ভাই হিসেবে। প্রভার এই ব্রিফিংয়ের মূল কারণ ছিল, সম্প্রতি তাকে আইনি নোটিশ পাঠিয়েছেন এক আইনজীবী। দেড় যুগ আগের ভিডিও প্রকাশ ও স্ক্যান্ডালের বিষয়ে ভুল স্বীকার করে জনসম্মুখে ক্ষমা প্রার্থনা করে ভবিষ্যতে এমন কাজ আর করবেন না মর্মে প্রতিশ্রুতি দিতে সেই লিগ্যাল নোটিশ পাঠিয়েছেন জয়নাল আবেদীন মাযহারী নামের কুমিল্লার এক আইনজীবী। যে নোটিশের সূত্র ধরে বিভিন্ন গণমাধ্যমে ফের চর্চিত হচ্ছেন প্রভা। যদিও যথারীতি এই বিষয়ে এতদিন তিনি চুপ ছিলেন। ধারণা করা ছিল, শনিবার সন্ধ্যায় তিনি সেই বিষয়েই কথা বলবেন। তবে হলো উল্টোটা। ব্রিফিংয়ের পুরোটাই তিনি দুষলেন সাংবাদিকদের। জানালেন কেন সাংবাদিকদের তিনি এড়িয়ে চলেন। এমনকি সাংবাদিকদের সঙ্গে দূরত্ব তৈরির কারণ হিসেবে অভিযোগ তুললেন ‘গায়ে হাত’ দেওয়ারও! সংবাদ সম্মেলনের শেষে প্রভার কাছে এক সাংবাদিক জানতে চান, সব সাংবাদিক আপনার সঙ্গে এমন কেন করবে? আপনার কী কোনও সমস্যা রয়েছে? তা না হলে আপনার সঙ্গে কেন এমন হবে? জবাবে প্রভা বলেন, একই প্রশ্ন তো আমার। কেন সবাই আমার সঙ্গে এমন করবে। আমার কী প্রবলেম? এরপর অভিনেত্রী দুটি অভিজ্ঞতা শেয়ার করেন। যার মাধ্যমে তিনি তুলে ধরেন সাংবাদিকদের সঙ্গে তার দূরত্বের কারণ। তিনি বললেন, দেখেন দুইটা গল্প বলি। একটা মেকআপ রুম। যেখানে আমরা শুটিং করে রুমে ঢুকি। মেকআপ করি। এসি খাই। আপনারা আসলে বসে গল্প করি। তো এভাবে একদিন গ্রিনরুমে বসে আছি। একজন ফটোগ্রাফার ও একজন সাংবাদিক আসলো। বসতে বললাম। এরপর আমি মুখে পাউডার মেখে মেকআপের প্রস্তুতি নিচ্ছি। এরমধ্যে ক্লিক ক্লিক ক্লিক। আমি বললাম, ‘কেন ছবি তুলতেছেন?’ বলে, ‘আমি তো জার্নালিস্ট’। এটার মানে কী বলেন তো? উনি সাংবাদিক বলে আমার কোনও প্রাইভেসি নাই?’ এরপর দুই নম্বর গল্পটি শুনে উপস্থিত সবাই অবাক হন। প্রভা বললেন, নম্বর টু। সেদিন শুটিং শেষ করে উবার নিয়েছি। একজন সাংবাদিকও আমার সঙ্গে উঠলেন। ভাই মানুষ, বসলেন পাশে। বললেন, এয়ারপোর্টে নামায়ে দিতে। তো সিটে বসে কথা বলতে বলতে সে আমার পায়ে হাত রাখলো! বললাম, ‘তুমি আমার গায়ে হাত দিলা কেন? আমার কোনও কলিগও তো এভাবে হাত দেয় না। ’ এরপর সে সরি বলেছে। নামকরা সাংবাদিক। আমি জানি, সে সরি বললেও তার ভুল রিয়েলাইজ করে নাই। সে তার ক্ষোভ প্রকাশ করেছে অন্যভাবে পরে। কিভাবে তাহলে সাংবাদিকদের সঙ্গে আন্তরিক হবো? টিভি নাটকের সংগঠন অভিনয়শিল্পী সংঘ নতুন একটি উদ্যোগ নিয়েছে। শিল্পীদের আইনি সহায়তা দেওয়ার জন্য ‘লিগ্যাল উইংস অ্যান্ড ডায়ালগ’ নামে একটি টিম গঠন করা হয়েছে। শনিবার (১ এপ্রিল) সন্ধ্যায় সংঘের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এর আনুষ্ঠানিক যাত্রা হয়েছে। মূলত সেই অনুষ্ঠানেই এসব কথা বলেন সাদিয়া জাহান প্রভা।