প্রেম-বিয়ে-বিচ্ছেদের কারণে বছরজুড়েই কোনো না কোনো বলিউড তারকা খবরের শিরোনামে থাকেন। গতকাল অস্কারজয়ী সুরকার এ আর রহমান ২৯ বছরের দাম্পত্য জীবনের ইতি টানার ঘোষণা দিয়েছেন। এ নিয়ে চলছে তুমুল আলোচনা। বলিউডের অধিকাংশ তারকা রাজকীয় আয়োজনে বিয়ের পর্ব শেষ করেন, আবার বিচ্ছেদের সময়ে অনেক তারকা স্বামী গুণেছেন কোটি কোটি টাকা। বলিউডের এমন দামি ছয় ডিভোর্স নিয়ে এই প্রতিবেদন।
আমির খান-রীনা দত্ত-কিরণ রাও
১৯৮৬ সালে পরিবারের অমতে রীনা দত্তকে বিয়ে করেন আমির খান। কারণ রীনা ছিলেন হিন্দু ধর্মাবলম্বী, আমির মুসলিম। এ সময় আমিরের বয়স ছিল ২১ আর রীনার ১৯ বছর। কয়েকজন বন্ধুর সহযোগিতায় ম্যারেজ রেজিস্ট্রার অফিসে গিয়ে বিয়ে করেন এই জুটি। এ দম্পতির জুনায়েদ ও ইরা নামে পুত্র-কন্যা রয়েছে। ভালোই চলছিল এই জুটির সংসার। কিন্তু ২০০২ সালে তাদের বিবাহবিচ্ছেদ ঘটে। এই বিচ্ছেদের জন্য আমিরকে মোটা অঙ্কের অর্থ গুণতে হয়েছিল। জানা যায়, আমির রীনাকে খোরপোষ বাবদ এককালীন ৫০ কোটি রুপি দিয়েছিলেন।
রীনার সঙ্গে বিচ্ছেদের পর কিরণ রাওয়ের সঙ্গে আমিরের ঘনিষ্ঠতা বাড়তে থাকে। এই অভিনেতার ‘লগান’ সিনেমার সেটেই তাদের পরিচয়। রীনার সঙ্গে বিচ্ছেদের পর আমির মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছিলেন, তখন কিরণের সঙ্গে তার দেখা হয়। তার আগে কোনো সম্পর্কে ছিলেন না তারা। কিরণের সঙ্গে আমির ঘণ্টার পর ঘণ্টা কথা বলতেন। এক সময় বন্ধুত্ব থেকে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। প্রায় এক বছর লিভ টুগেদারের পর বিয়ের সিদ্ধান্ত নেন এই জুটি। ২০০৫ সালে বিয়ে করেন তারা। এ সংসারে তাদের একটি পুত্র সন্তান রয়েছে। ২০২১ সালের ৩ জুলাই, হঠাৎ কিরণ রাওয়ের সঙ্গে বিচ্ছেদের ঘোষণা দেন আমির। এক যৌথ বিবৃতি তারা জানান, স্বামী-স্ত্রী হয়ে নয়, সহযোগী এবং একে অন্যের পরিবার হিসেবে থাকবেন তারা। তবে এই বিচ্ছেদে আমিরকে কত টাকা গুণতে হয়েছে, তা এখনো জানা যায়নি। তবে গুঞ্জন রয়েছে, খোরপোষ বাবদ ৫০০ কোটি রুপি গুণতে হয়েছে আমির খানকে।
কারিশমা কাপুর-সঞ্জয় কাপুর
বলিউড অভিনেত্রী কারিশমা কাপুর ও অভিষেক বচ্চনের বাগদান সম্পন্ন হয়েছিল। কিন্তু চার মাসের মাথায় তাদের সম্পর্ক ভেঙে যায়। ২০০৩ সালে মায়ের পছন্দে দিল্লির বিখ্যাত ব্যবসায়ী সঞ্জয় কাপুরের সঙ্গে বিয়ে হয় কারিশমার। কিন্তু এই সংসার শেষ পর্যন্ত টিকেনি। ২০১৪ সালে তারা বিচ্ছেদের আবেদন করেন। দুই বছর মামলা চলার পর ২০১৬ সালে আইনগতভাবে তারা আলাদা হয়ে যান। এ সময় সঞ্জয় কাপুরকে খোরপোষ বাবদ মোটা অঙ্কের অর্থ গুণতে হয়েছিল। খারে অবস্থিত সঞ্জয়ের বাবার বাড়ি এবং তাদের দুই সন্তানের জন্য ১৪ কোটি রুপির বন্ড কিনে দিয়েছিলেন সঞ্জয়। যার মাসিক সুদ আসে ১০ লাখ রুপি।
হৃতিক রোশান-সুজান খান
২০০০ সালের ২০ ডিসেম্বর বিয়ে করেন হৃতিক রোশান ও সুজান খান। ২০০৬ সালে জন্ম হয় এই দম্পতির প্রথম সন্তান হৃহানের। ২০০৮ সালে জন্মগ্রহণ করে তাদের দ্বিতীয় সন্তান হৃদান। কিন্তু এ জুটির চলার পথে ছন্দ পতন ঘটে। ২০১৩ সাল থেকে আলাদা থাকতে শুরু করেন তারা। ২০১৪ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের বিবাহবিচ্ছেদ হয়। আলাদা থাকলেও প্রায়ই দু’জন মিলে সন্তানদের সঙ্গে সময় কাটান। কিন্তু বিচ্ছেদের সময় সুজান ৪০০ কোটি রুপি দাবি করেন। সর্বশেষ ৩৮০ কোটি রুপি গুণতে হয় হৃতিককে।
সাইফ আলী খান-অমৃতা সিং
নবাব পুত্র সাইফ আলী খান অভিনেত্রী অমৃতা সিংয়ের প্রেমে মজেছিলেন। ভালোবাসায় এতটাই অন্ধ ছিলেন যে, অমৃতা সিং তার চেয়ে বয়সে ১৩ বছরের বড় হওয়া সত্ত্বে তোয়াক্কা করেননি। ১৯৯১ সালে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন এই জুটি। তাদের সংসার আলো করে আসে দুই সন্তান। কিন্তু ২০০০ সালে বিবাহবিচ্ছেদ ঘটে সাইফ-অমৃতার। এ সময় সাইফকে মোটা অঙ্কের অর্থ গুণতে হয়েছিল। এক সাক্ষাৎকারে সাইফ জানান— অমৃতাকে ৫ কোটি রুপি খোরপোষ দিয়েছেন। তা ছাড়া ছেলের ১৮ বছর না হওয়া পর্যন্ত প্রতি মাসে অমৃতাকে ১ লাখ রুপি করে দেন বলেও জানান সাইফ।
সঞ্জয় দত্ত ও রিয়া পিল্লালি
১৯৯৮ সালে রিয়া পিল্লালির সঙ্গে দ্বিতীয়বারের মতো বিয়ের পিঁড়িতে বসেন সঞ্জয় দত্ত। এ সময় মুম্বাই বোমা হামলায় জড়িত থাকায় জেল খাটতে হয় সাঞ্জু বাবাকে। পরবর্তীতে রিয়ার সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদ হয়। কারণ হিসেবে জানা যায়, সঞ্জয়ের ‘কান্তি’ সিনেমার সহ-অভিনেত্রী নাদিয়া দুরারির সঙ্গে এ অভিনেতার সম্পর্কের কথা। এই বিচ্ছেদের সময়ে সঞ্জয় দত্ত মুম্বাইয়ে সমুদ্র সৈকতে একটি বিলাসবহুল বাংলো ও একটি গাড়ি দেন রিয়াকে। এছাড়াও শোনা যায়, সঞ্জয় ৫ কোটি রুপি এবং একটি দামি গাড়ি দিয়েছিলেন রিয়াকে।
ফারহান আখতার-অধুনা ভবানি
ফারহান আখতার পরিচালিক প্রথম সিনেমা ‘দিল চাহতা হ্যায়’। এতে লিড হেয়ারস্টাইলিস্ট হিসেবে কাজ করেন অধুনা ভবানি। সেখান থেকেই তাদের প্রেমের সূচনা। ২০০০ সালে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন তারা। তাদের দাম্পত্য জীবন দারুণ কাটছিল। ঘর আলো করে জন্ম নেয় শাক্য ও আকিরা নামে দুই কন্যাসন্তান। কিন্তু ২০১৬ সালে ভেঙে যায় তাদের সংসার। বিচ্ছেদের পর অধুনা মুম্বাইয়ের বাংলো নিজের অধীন রাখার দাবি করেছিলেন। পরে মুম্বাইয়ের ব্যান্ড স্ট্যান্ডে ১০ হাজার স্কয়ার ফুটের একটি বাড়ি অধুনাকে কিনে দিয়েছিলেন ফারহান আখতার। বাড়ি ছাড়াও ফারহান তার মেয়েদের জন্য প্রতি মাসে মোটা অঙ্কের টাকা দেন।