পারিশ্রমিক নিয়ে ভোগান্তির সমাধান দরকার

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে একদম শুরু থেকেই মাঠে ছিলেন অভিনেত্রী বন্নি হাসান। শিল্পীর আগে একজন শিক্ষার্থী হিসেবেই তাদের সঙ্গে আন্দোলনে নেমেছিলেন বলে জানান তিনি। এখনো শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কাজ করছেন এই অভিনেত্রী।

কিছুদিন আগে উত্তরার এক রাস্তায় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে অংশ নিয়েছিলেন দেয়াল আঁকার কাজেও। অভিনেত্রী বললেন, শিল্পীর আগে আমি একজন শিক্ষার্থীও। সম্প্রতি আমি আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ (এআইইউবি) থেকে গ্র্যাজুয়েশন শেষ করেছি। আন্দোলনের একদম শুরু থেকেই আমি উত্তরাতে অংশ নিয়েছিলাম। রাস্তায় নেমেছিলাম। প্রতিবাদ জানানো, খাবার, পানি দিয়ে সহযোগিতা করা; আমার পক্ষে যেটুকু সম্ভব হয়েছে করেছি। কিন্তু সেসবের হয়তো কোনো ছবি তুলিনি বা রাখিওনি।

নতুন দেশকে কীভাবে দেখতে চান, এমন প্রশ্নে ‘তিলোত্তমা’ খ্যাত এ অভিনেত্রীর উত্তর, ‘সবার আগে নিজেকে পরিবর্তন করতে হবে। একটা মজার কাহিনি বলি, ইদানীং আমি রাস্তায় বের হলে আগের মতো যেখানে সেখানে ময়লা ফেলছি না। আগে কিন্তু ঠুসঠাস এদিকে ওদিকে ফেলে দিতাম। দেখা গেল চিপস খাচ্ছি, খাওয়া শেষে প্যাকেটটা সব সময় ধরে নিয়ে রাখছি রাখছি, তারপর দেখা যাবে আচ্ছা ঠিক আছে দিই ফেলে। চেষ্টা করতাম রাস্তায় ময়লা না ফেলার, কিন্তু তারপরও দেখা যাবে অনেক সময় হয়েছে। তাছাড়া বাসার জানালা দিয়েও আমরা অনেক সময় কিছু একটা ফেলে দিলাম। এই অভ্যাসটাও তো খারাপ। এখন ওইটা একদমই চলে গেছে। গতকাল আমার আইইএলটিএসের ক্লাসে যাওয়ার সময় কলা খেতে খেতে বাসা থেকে বের হয়েছি। ওই কলার খোসাটা ফেলেছি হেঁটে রাস্তা পার হয়ে একটা বিল্ডিংয়ের নিচে ডাস্টবিন পেয়েছি তারপর। ততক্ষণ আমি কলার খোসাটা হাতে নিয়ে নিয়ে ঘুরে বেরিয়েছি। লোকজন দেখছে আমার হাতে একটা কলার খোসা। এভাবে যদি অভ্যাস তৈরি হয়ে যায় তাহলে কোনো ঝামেলা হবে না। এমন অনেক কিছুই আছে যেগুলো অভ্যাসে পরিণত হলে তখন আর ঝামেলা হবে না।’

তিনি আরও বলেন, ‘ঘুষ বন্ধ হোক। ঘুষ দেওয়া-নেওয়ার প্যাটার্নটা সব জায়গাতেই আছে। কমিশনিং এই ওভার অল বাজেটটাকে বাড়িয়ে ফেলে সব কিছুতে। মানুষ দেয় এবং খাবারও চেষ্টা করে, যেটার কারণে ঝামেলা হয়। সো আমি একদমই ঘুষের বিপক্ষে। আর কী বিষয় পরিবর্তন হবে জানি না, তবে আমি ঘুষ বিষয়টার একদম বিপক্ষে।’

শোবিজ ইন্ডাস্ট্রিতে সংস্কার প্রয়োজন বলেও মনে করেন এ অভিনেত্রী। তিনি বলেন, ‘এখানে কিছু সংস্কার দরকার। আশা করছি সেটাও হবে। আমাদের কাজের দিকেও পরিবর্তন দরকার। যেমন এজেন্সিগুলো যেভাবে সবকিছু চাপিয়ে দেয়, যেভাবে সবাইকে বাজেট নিয়ে কিংবা স্ক্রিপ্ট নিয়ে পিষতে থাকে, ওটা নিয়ে তো কারও কোনো কথা নেই। ওটা যদি সবাই মিলে ঠিকঠাক করার চেষ্টা করে তাহলে তো খুব ভালো হবে। আর রেমুনারেশন (পারিশ্রমিক) ঝুলিয়ে রাখার বিষয়টারও সমাধান দরকার। আমাদের কথা বাদ দিলাম কারণ আমাদের এত ঝামেলা হয় না। তবে অনেকেই আছেন যাদের পারিশ্রমিক অল্প, কিন্তু সেটাও ঠিকমতো পান না। সেই অল্পটা পেতেও তাদের অনেক ভুগতে হয়, অনেককে ঠেলতে হয় ৮-১০ মাস ধরে। এ ব্যাপারগুলো যদি ঠিকঠাক হয় তাহলে খুব ভালো হবে। এই জোয়ারে ঠিক না হলে আসলেই আর হবে না।’

কাজের ব্যস্ততা প্রসঙ্গে তিনি জানান, কয়েক মাস ধরে শুটিং শুধু পিছিয়েই যাচ্ছে। বললেন, শুটিং পেছাতে পেছাতে পাগল হয়ে গেলাম। যেটা দেড় মাস, দুই মাস আগে হওয়ার কথা সেগুলোও এখন পেছাচ্ছে। এর মধ্যে বাইরের একটা প্রজেক্ট হওয়ার কথা হচ্ছিল, কিন্তু এর মধ্যে আর মনে হয় না আর হবে এটা। কারণ অধিকাংশ দেশই এখন ভিসা দিচ্ছে না।

এ মাসের ব্যস্ততা নিয়ে বন্নির ভাষ্য, এ মাসে ফটোশুট আছে। এই মুহূর্তে তো বড় প্রজেক্টের রিস্ক নিতে চাচ্ছে না কেউ। প্রডিউসার ফিক্সড করতে পারছে না। অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে মানুষ কীভাবে নামবে। কাজ না থাকলে তো ভালো লাগে না, বোরিং লাগে।