২৫ বছর আগে চিত্রনায়ক সোহেল চৌধুরী খুনের ঘটনায় দায়ের করা মামলার রায় ঘোষণার জন্য আজ বৃহস্পতিবার (৯ মে) দিন ধার্য রয়েছে। ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-২ এর বিচারক অরুণাভ চক্রবর্তী এই রায় ঘোষণা করবেন।
গত ২৯ এপ্রিল রাষ্ট্রপক্ষ ও আসামিপক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে রায়ের এ তারিখ ঠিক করেন। গত ১১ ফেব্রুয়ারি মামলাটিতে আত্মপক্ষ শুনানি শেষ হয়। এর আগে কোনো সাক্ষী সাক্ষ্য দিতে আদালতে না আসায় গত ২৮ জানুয়ারি সাক্ষ্যগ্রহণ সমাপ্ত ঘোষণা করেন আদালত। মামলাটিতে ১০ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করেন আদালত।
আসামিদের মধ্যে ব্যবসায়ী আজিজ মোহাম্মদ ভাই ওরফে আব্দুল আজিজ, ট্রাম্পস ক্লাবের মালিক আফাকুল ইসলাম ওরফে বান্টি ইসলাম, সেলিম খান, হারুন অর রশীদ ওরফে লেদার লিটন ওরফে বস লিটন, আদনান সিদ্দিকী পলাতক রয়েছেন।
আশিষ রায় চৌধুরী ওরফে বোতল চৌধুরী, তারিক সাঈদ মামুন, ফারুক আব্বাসী জামিনে রয়েছেন। সানজিদুল ইসলাম ইমন কারাগার রয়েছেন।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী সাদিয়া আফরোজ শিল্পী বলেন, মামলাটি ২৫ বছর আগের। অনেক সাক্ষীই মারা গেছে। এই মামলায় যাদেরকে পাওয়া গেছে রাষ্ট্রপক্ষ তাদেরই সাক্ষ্যগ্রহণ করেছে। এর প্রেক্ষিতে রাষ্ট্রপক্ষ আশাবাদী সব আসামির দৃষ্ট্রান্তমূলক শাস্তি হবে। এই মামলায় আসামি আদনাম সিদ্দিকী ফৌজদারী কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় দোষ স্বীকার করেছে। ঘটনার সময় এই আসামি বনানীর আবেদীন টাওয়ারে ট্রাম্পস ক্লাবে গিয়েছিলেন। অন্যান্য আসামিদের সাথে ভিকটিমকে দেখেছেন। ট্রাম্পস ক্লাবে মদ খেয়েছে। এই বিষয়গুলো তার দেওয়া জবানবন্দিতে ওঠে এসেছে। রাষ্ট্রপক্ষ আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ করতে সফল হয়েছে। আশা করছি, সব আসামির সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যদণ্ড হবে এবং ভিকটিমের পরিবার ন্যায়বিচার পাবে।
আসামিপক্ষের আইনজীবী শাহ মঞ্জুরুল হক বলেন, সোহেল চেীধুরী হত্যা মামলাটি অবশ্যই একটি আলোচিত মামলা। আমরাও এই হত্যাকাণ্ডের নিন্দা জানাই। অনেক আসামির অভিযোগপত্রে নাম থাকলেও সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ নেই। অনেকের শুধুমাত্র অভিযোগপত্রে নামটাই এসেছে। কোনো অভিযোগ নেই। মামলাটিতে ১০জন সাক্ষী দিয়েছে কেউ আসামিদের নাম ঠিক করে বলতে পারেননি। রাষ্ট্রপক্ষ আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ করতে ব্যর্থ হয়েছে। আশা করি, এ মামলার রায়ে আসামিরা খালাস পাবেন।
সোহেল চৌধুরী ভালোবেসে বিয়ে করে ছিলেন ওই সময়ের জনপ্রিয় চিত্রনায়িকা পারভিন সুলতানা দিতিকে। বিয়ের কিছু দিন পর তাদের সম্পর্কে ফাটল ধরে। ওই সময় মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন সোহেল চৌধুরী। জড়িয়ে পড়েন নেশার জগতে। একপর্যায়ে নেশা ও জুয়ায় ডুবে থাকতেন তিনি। সেই অন্ধকার জগতের অপরাধীদের সঙ্গে শুরু হয় বিভিন্ন বিষয়ে নিয়ে দ্বন্দ্ব। সেই দ্বন্দ্বের রেশ ধরেই অবসান ঘটে তার জীবনের। বনানীর ১৭ নম্বর রোডের আবেদীন টাওয়ারে ট্রাম্পস ক্লাবের নিচে ১৯৯৮ সালের ১৮ ডিসেম্বর সন্ত্রাসীদের গুলিতে মারা যান সোহেল চৌধুরী। ওই ঘটনায় সোহেল চৌধুরীর ভাই তৌহিদুল ইসলাম চৌধুরী রাজধানীর গুলশান থানায় হত্যা মামলা করেন।
আদালত সূত্রে জানা যায়, ২০০১ সালের ৩০ অক্টোবর ঢাকার তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালত আসামিদের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করেন। এর দুই বছর পর মামলাটির বিচার দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য ঢাকার দুই নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হয়। ওই সময় আসামিদের মধ্যে একজন হাইকোর্টে রিট আবেদন দাখিল করেন। হাইকোর্ট বিভাগের তৎকালীন বিচারপতি এম এ মতিন ও সৈয়দ রিফাত আহমদের বেঞ্চ ২০০৩ সালের ১৯ নভেম্বর ওই রিট আবেদনে প্রথমে তিন মাসের জন্য নিম্ন আদালতে মামলাটির কার্যক্রম স্থগিত করেন। এরপর ২০০৪ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি রিটের রুলের নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত মামলাটির নিম্ন আদালতের কার্যক্রম স্থগিত করেন। এরপর ২১ বছর পর ওই রুলের নিষ্পত্তি হয়। পুনরায় সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়।