হেদায়াত লাভের উপায়

কেউ যদি আন্তরিকভাবে স্রষ্টার পরিচয় অনুসন্ধান করে, সত্য জানতে চায়, সঠিক পথ খোঁজে, তাহলে আল্লাহ তাআলা তার অনুগ্রহে তাকে হেদায়াত দেন। সত্য পর্যন্ত পৌঁছতে সাহায্য করেন। কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেছেন,

وَ الَّذِیۡنَ جَاهَدُوۡا فِیۡنَا لَنَهۡدِیَنَّهُمۡ سُبُلَنَا وَ اِنَّ اللّٰهَ لَمَعَ الۡمُحۡسِنِیۡنَ

আর যারা আমার পথে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালায়, তাদেরকে আমি অবশ্যই আমার পথে পরিচালিত করব। আর নিশ্চয় আল্লাহ সৎকর্মশীলদের সাথেই আছেন। (সুরা আনকাবুত: ৬৯)

এটা ইসলামের বাইরে থাকা মানুষের ক্ষেত্রে যেমন প্রযোজ্য, মুসলমানদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য যারা কোনো বিষয়ে সংশয়গ্রস্ত হয়ে সত্য অনুদ্ধান করে। আল্লাহ তার বান্দাদের বিভ্রান্ত হওয়ার জন্য ছেড়ে দেন না বরং অন্ধকার থেকে আলোয় বের করে আনেন। আর যারা সত্যানুসন্ধান ছেড়ে শয়তানকে অনুসরণ করে, প্রবৃত্তির অনুগামী হয়, তারা ক্রমশ অন্ধকারে হারিয়ে যেতে থাকে। আল্লাহ তাআলা বলেন,

اَللّٰهُ وَلِیُّ الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا یُخۡرِجُهُمۡ مِّنَ الظُّلُمٰتِ اِلَی النُّوۡرِ۬ وَ الَّذِیۡنَ كَفَرُوۡۤا اَوۡلِیٰٓـُٔهُمُ الطَّاغُوۡتُ ۙ یُخۡرِجُوۡنَهُمۡ مِّنَ النُّوۡرِ اِلَی الظُّلُمٰتِ اُولٰٓئِكَ اَصۡحٰبُ النَّارِ هُمۡ فِیۡهَا خٰلِدُوۡنَ

যারা ঈমান আনে আল্লাহ তাদের অভিভাবক, তিনি তাদেরকে অন্ধকার হতে বের করে আলোকে নিয়ে যান। আর যারা কুফরি করে তাগুত তাদের অভিভাবক; এরা তাদেরকে আলো থেকে অন্ধকারে নিয়ে যায়। এরাই দোজখের অধিবাসী, সেখানে তারা স্থায়ী হবে। (সুরা বাকারা: ২৫৭)

আল্লাহ তাআলা পৃথিবীতে অনেক নিদর্শন ছড়িয়ে রেখেছেন মানুষকে আল্লাহর অস্তিত্বের কথা বলে, সত্যের দিকে ডাকে। অনুসন্ধানি মন ও দৃষ্টি যাদের আছে, যারা চিন্তা ভাবনা করে, তারা সেগুলো দেখতে পায়। সৃষ্টির মধ্যে স্রষ্টার পরিচয় খুঁজে পায়। আল্লাহ তাআলা বলেন,

اِنَّ فِیۡ خَلۡقِ السَّمٰوٰتِ وَ الۡاَرۡضِ وَ اخۡتِلَافِ الَّیۡلِ وَ النَّهَارِ لَاٰیٰتٍ لِّاُولِی الۡاَلۡبَابِ

নিশ্চয় আসমানসমূহ ও জমিনের সৃষ্টি এবং রাত ও দিনের বিবর্তনের মধ্যে রয়েছে বিবেকসম্পন্নদের জন্য বহু নির্দশন। (সুরা আলে ইমরান: ১৯০)

আল্লাহ তাআলা মানুষের নিজের মধ্যেও নিদর্শন দেখান। আল্লাহ বলেন,

سَنُرِیۡهِمۡ اٰیٰتِنَا فِی الۡاٰفَاقِ وَ فِیۡۤ اَنۡفُسِهِمۡ حَتّٰی یَتَبَیَّنَ لَهُمۡ اَنَّهُ الۡحَقُّ اَوَ لَمۡ یَكۡفِ بِرَبِّكَ اَنَّهٗ عَلٰی كُلِّ شَیۡءٍ شَهِیۡدٌ

বিশ্বজগতে ও তাদের নিজদের মধ্যে আমি তাদেরকে আমার নিদর্শনাবলি দেখাব যাতে তাদের কাছে সুস্পষ্ট হয় যে, এটি সত্য; তোমার রবের জন্য এটাই যথেষ্ট নয় কি যে, তিনি সকল বিষয়ে সাক্ষী? (সুরা ফুসসিলাত: ৫৩)

সত্য অনুসন্ধান করা, ঈমান আনা, আল্লাহ তাআলার আনুগত্য করা, তার প্রেরিত দীন অনুসরণ করা প্রত্যেকের নিজের দায়িত্ব। ইসলামে জোর করে কাউকে ইসলাম গ্রহণ করানোর বৈধতা নেই, পার্থিব চাপ বা লোভে পড়ে ঈমান গ্রহণ করলে তা আল্লাহর কাছে কবুলও হয় না। আল্লাহ পথ দেখিয়ে দিয়েছেন, মানুষ নিজের ইচ্ছায় হেদায়াতপ্রাপ্ত বা পথভ্রষ্ট হতে পারে। আল্লাহ বলেন,

اِنَّا خَلَقۡنَا الۡاِنۡسَانَ مِنۡ نُّطۡفَۃٍ اَمۡشَاجٍ نَّبۡتَلِیۡهِ فَجَعَلۡنٰهُ سَمِیۡعًۢا بَصِیۡرًا اِنَّا هَدَیۡنٰهُ السَّبِیۡلَ اِمَّا شَاكِرًا وَّ اِمَّا كَفُوۡرًا
আমি তো মানুষকে সৃষ্টি করেছি মিলিত শুক্রবিন্দু হতে, তাকে পরীক্ষা করার জন্য; এ জন্য আমি তাকে করেছি শ্রবণ ও দৃষ্টিশক্তিসম্পন্ন। আমি তাকে পথ দেখিয়ে দিয়েছি, হয় সে কৃতজ্ঞ হবে, না হয় সে অকৃতজ্ঞ হবে। (সুরা দাহর: ৩)