বিয়ের পর স্বামী-স্ত্রীর পরস্পরের প্রতি পরস্পরের কিছু অধিকার ও দায়িত্ব সাব্যস্ত হয়। এক্ষেত্রে স্বামীর দায়িত্ব ও কর্তব্য সব সময় বেশি থাকে। বিয়ের পর নারীর ভরণপোষণ, নিরাপদ বাসস্থান সবকিছু বহন করা স্বামীর অন্যতম প্রধান দায়িত্ব। যে-সব যোগ্যতা ও সক্ষমতার ভিত্তিতে একজন পুরুষকে বিয়ের যোগ্য ভাবা হয়, তার মধ্যে অন্যতম হলো- স্ত্রী বা বিয়ে পরবর্তী সংসারের ব্যয়ভার বহনের সক্ষমতা।
আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘হে যুব সম্প্রদায়! তোমাদের মধ্যে যে বিয়ের সামর্থ্য রাখে, সে যেন বিয়ে করে নেয়, কেননা তা চক্ষুকে সংযত রাখে এবং লজ্জাস্থান রক্ষা করে। (বুখারি, হাদিস, ৫০৬৬; মুসলিম, হাদিস, ১৪০০)
আল্লাহ তায়ালাও পবিত্র কোরআনে বলেছেন— সন্তানের পিতার ওপর সন্তানের মায়ের জন্য অন্ন-বস্ত্রের উত্তম পন্থায় ব্যবস্থা করা একান্ত দায়িত্ব। (সূরা বাকারা, আয়াত, ২৩৩)
অন্য আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘তোমরা স্ত্রীদের জন্য তোমাদের সামর্থ্য অনুযায়ী নিজেদের ঘরে বাসস্থানের ব্যবস্থা করো।’ (সুরা তালাক, আয়াত, ৬)
আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পুরুষদের উদ্দেশ্যে এক হাদিসে বলেছেন, ‘তুমি যখন খাবে, তাকেও খাওয়াবে এবং তুমি যখন পরবে, তাকেও পরাবে। চেহারায় কখনো প্রহার করবে না, অসদাচরণ করবে না।’ (আবু দাউদ, হাদিস, ২১৪২; মুসনাদে আহমাদ, হাদিস, ১৮৫০১)
হাদিস এবং কোরআনের আয়াতের মাধ্যমে এ বিষয়টি প্রমাণিত যে, স্ত্রীর ভরণপোষণের দায়িত্ব পুরোপুরি স্বামীকে বহন করতে হবে। এসব দায়িত্ব থেকে স্ত্রী একেবারে মুক্ত। স্ত্রীর ব্যয়ভার বহনের পাশাপাশি তার দেন-মোহর সঠিকভাবে আদায় করা ওয়াজিব।
স্বামী যদি স্ত্রীকে চাকরির অনুমতি দেন অথবা স্ত্রী বাড়িতে বসেই কোনো সৃজনশীল কাজের মাধ্যমে ব্যক্তিগতভাবে আয়-উপার্জনে সক্ষম হন, তাহলে এই উপার্জন থেকে পাওয়া টাকার মালিক স্ত্রী নিজেই। এতে স্বামীর কোনো অধিকার বা আধিপত্য সাস্তব্য হবে না। স্বামী এই টাকা স্ত্রীর অনুমতি ছাড়া খরচ করতে পারবেন না। যেমন স্বামীর ব্যক্তিগত সম্পদ বা টাকা পয়সা স্ত্রীর জন্য স্বামীকে না বলে ব্যবহার করার অনুমতি নেই।
এজন্য স্বামীর মনে রাখতে হবে, স্ত্রীর উপার্জিত অর্থ তার অনুমতি ব্যতীত খরচ করা, কিংবা স্ত্রীকে না জানিয়ে মা-বাবা, ভাই-বোন থেকে শুরু করে কাউকে ওই টাকা দিয়ে সাহায্য করা ইসলাম অনুমোদন দেয় না। এটা জায়েজ নেই।
এটা করলে স্ত্রীর অধিকার নষ্ট করা হবে এবং তার আমানতের খেয়ানত করা হবে।
স্ত্রীর উপার্জিত টাকা থেকে পারিবারিক ঋণ পরিশোধ অথবা সংসার পরিচালনার জন্য খরচ করতে হলে অবশ্যই স্ত্রীর সঙ্গে পরামর্শ করতে হবে। তার অনুমতি হলেই কেবল এটাই সম্ভব হবে, অন্যথায়। কারণ, স্ত্রীর সম্পদের অধিকারী স্বামী নয়। তাই স্ত্রীকে না জানিয়ে তার খরচ করলে স্বামী গুনাহগার হবে।