রমজানে মহানবী (সা.) যেভাবে দান করতেন

মানুষের মধ্যে সবচেয়ে বেশি দানশীল ছিলেন প্রিয় নবী (সা.)। সর্বদা মুক্ত হস্তে দরাজ দিলে উজাড় করে দান করতেন সবাইকে। তিনি কাউকে শূন্য হাতে ফিরিয়ে দিতেন না। আর রমজান মাস এলে এই দানশীলতা বহু গুণে বেড়ে যেত।

ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘রাসুল (সা.) ধন-সম্পদ ব্যয় করার ব্যাপারে সবার চেয়ে বেশি দানশীল ছিলেন। রমজানে জিবরাইল (আ.) যখন তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতেন, তখন তিনি আরো বেশি দান করতেন। রমজান শেষ না হওয়া পর্যন্ত প্রতি রাতেই জিবরাইল (আ.) তাঁর সঙ্গে একবার সাক্ষাৎ করতেন। আর নবী (সা.) তাঁকে কোরআন পড়ে শোনাতেন। জিবরাইল যখন তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতেন তখন তিনি রহমতসহ প্রেরিত বায়ুর চেয়ে বেশি দানশীল হয়ে যেতেন।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ১৯০২)

প্রেরিত বায়ুর সঙ্গে তুলনার অর্থ

‘প্রেরিত বায়ুর চেয়ে বেশি দানশীল ছিলেন’—এ কথার কী অর্থ? মুহাদ্দিসিনে কেরাম এর বিভিন্ন অর্থ করেছেন। এর একটি অর্থ হলো—কখনো কখনো প্রেরিত বায়ু বা বাতাস সবার জন্য কল্যাণ বয়ে আনে না। কারো জন্য হয় উপকারী, আবার কারো জন্য হয় ক্ষতিকর। কিন্তু রাসুল (সা.) গোটা পৃথিবীর জন্য উপকারী প্রেরিত বায়ুর মতো। অর্থাৎ তিনি যেভাবে আর্থিক দান-সদকা করতেন, তেমনি আত্মিক দান-সদকাও করতেন। ধন-সম্পদ খরচ করার পাশাপাশি মানুষকে দ্বিনি ইলম শিক্ষা দান এবং হিদায়াতের বিষয়ে বেশি তৎপর থাকতেন।

দান-সদকা কাদের করা যায়?

দান-সদকার উপযুক্ত পাত্র কে? এমনই এক প্রশ্নের সম্মুখীন হয়েছিলেন প্রিয় নবী (সা.)। এই প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন মহান আল্লাহ নিজেই। ইরশাদ হয়েছে—‘লোকেরা আপনাকে জিজ্ঞেস করছে তারা কী ব্যয় করবে? বলে দিন, যে বস্তুই তোমরা ধন-সম্পদ থেকে ব্যয় করবে তা পিতা-মাতা, আত্মীয়-স্বজন, এতিম, মিসকিন ও মুসাফিরদের জন্য ব্যয় করো; এবং তোমরা যে সৎকাজ করো আল্লাহ তা সম্যক অবগত।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ২১৫)

মুকাতিল (রহ.) বলেন, এই আয়াত হচ্ছে নফল দান সম্বন্ধে। (ইবন আবি হাতেম : ২/৬১৯)

আয়াতের ভাবার্থ হলো—হে নবী, মানুষ আপনাকে খরচ করার পাত্র সম্বন্ধে জিজ্ঞেস করছে। আপনি তাদের বলে দিন, তারা যেন আয়াতে উল্লিখিত শ্রেণির মানুষের মধ্যে খরচ করে-অর্থাৎ নফল দান-সদকা করে।