খুশু-খুজু দুটিই আরবি শব্দ। আভিধানিকভাবে দুটির অর্থে সামান্য কিছু পার্থক্য থাকলেও উভয়টার দ্বারা বিনয়-নম্রতা, স্থিরতা, একাগ্রতা, মনোযোগিতা—এসব অর্থই বোঝানো হয়। নামাজে খুশু-খুজু অবলম্বন করা একজন মুমিনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেছেন, ‘অবশ্যই সফলকাম হয়েছে মুমিনরা।যারা নিজেদের নামাজে বিনয়-নম্র।’ (সুরা : মুমিনুন, আয়াত : ১-২)
খুশু-খুজু নামাজের প্রাণ। যার নামাজে যত বেশি খুশু-খুজু পাওয়া যাবে তার নামাজ তত বেশি প্রাণবন্ত ও আল্লাহর কাছে গ্রহণীয় হবে। পক্ষান্তরে যে নামাজ পড়ে, কিন্তু তার নামাজে খুশু-খুজু বলতে কিছুই থাকে না, তার নামাজ রূপসর্বস্ব কিছু কার্যকলাপ মাত্র।পার্থিব দায়মুক্তি ছাড়া যে নামাজ তার জন্য কোনো উপকার বয়ে আনতে পারে না।
কোরআন ও হাদিসে নামাজের যত ফজিলত, প্রভাব ও উপকারিতার কথা বর্ণিত হয়েছে সবই এই খুশু-খুজুর সঙ্গে সম্পৃক্ত। খুশুর ফজিলত সম্পর্কে এক হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি নামাজের সময় হলে সুন্দরভাবে অজু করে এবং একাগ্রতার সঙ্গে সুন্দরভাবে রুকু-সিজদা করে নামাজ আদায় করে, তার এ নামাজ আগের সব গুনাহের কাফফারা হয়ে যায়; যতক্ষণ পর্যন্ত না সে কোনো কবিরা গুনাহে লিপ্ত হয়। আর এই সুযোগ তার সারা জীবনের জন্য।’ (মুসলিম, হাদিস : ২২৮)
খুশু-খুজু অর্জনের উপায়
১. নামাজের পুরোটা সময় নিজের ভেতরে এ খেয়াল জাগ্রত রাখা যে আল্লাহ তাআলা আমাকে দেখছেন, আমি তার সামনে দণ্ডায়মান। হাদিসে জিবরিলে এসেছে, আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘ইহসান হচ্ছে, তুমি এমনভাবে আল্লাহর ইবাদত করবে যেন তুমি তাঁকে দেখছ। আর যদি তাঁকে না-ও দেখ তবে তিনি তো তোমাকে অবশ্যই দেখছেন।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৮)
২. প্রতিটি নামাজই এই ভাবনা নিয়ে পড়া যে এটিই হয়তো আমার জীবনের শেষ নামাজ। আবু আইউব আনসারি (রা.) বলেন, এক ব্যক্তি নবী (সা.)-এর কাছে এসে বলল, হে আল্লাহর রাসুল! আমাকে কিছু শিখিয়ে দিন, যা আমি সহজে আদায় করতে পারি।তিনি বলেন, ‘যখন তুমি তোমার সালাতে দাঁড়াবে, তখন এমনভাবে সালাত আদায় করবে, যেন তুমি বিদায়ি সালাত আদায় করছ।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৪১৭১)
৩. নামাজ পড়ার সময় এই খেয়াল করা যে আমি আল্লাহর সঙ্গে কথা বলছি। কেননা মুমিন বান্দারা নামাজের মাধ্যমে আল্লাহর সঙ্গে গোপনে কথা বলে। সহিহ বুখারিতে এসেছে, আনাস ইবনে মালেক (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের কেউ যখন নামাজে দাঁড়ায় তখন সে আল্লাহর সঙ্গে একান্তে কথা বলে; যতক্ষণ সে তার নামাজের জায়গায় থাকে।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৪১৬)
৪. নামাজের মধ্যে যা কিছু পড়া হয় আর যা কিছু করা হয়, খেয়াল করে পড়া এবং খেয়াল করে করা অর্থাৎ আমার প্রতিটি কাজ নিয়মানুযায়ী হচ্ছে কি না, যা কিছু পড়ছি তা শুদ্ধ ও সঠিক হচ্ছে কি না তার প্রতি লক্ষ রাখা। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘স্পষ্টভাবে ধীরে ধীরে কোরআন তিলাওয়াত করো।’ (সুরা : মুজ্জাম্মিল, আয়াত : ৪)
জামাতে নামাজ আদায়ের সময় ইমামের কিরাত অত্যন্ত মনোযোগ দিয়ে শোনা। কোরআনের অর্থ বুঝলে তার প্রতি খেয়াল করা। অন্য আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেছেন, ‘যখন কোরআন পাঠ করা হয় তখন মনোযোগ দিয়ে তা শোনো এবং চুপ থাকো যাতে তোমরা দয়াপ্রাপ্ত হও।’ (সুরা : আরাফ, আয়াত : ২০৪)