যৌবনকাল জীবনের শ্রেষ্ঠ সময়। এই সময় সম্পর্কে কবি-সাহিত্যিক থেকে শুরু করে বিভিন্ন ধর্ম-দর্শনে নানা ধরনের বক্তব্য রয়েছে। বিশ্বনবী (সা.)-এর হাদিসে যুবকদের নিয়ে বেশ কিছু আলোচনা আছে। এখানে যুবসমাজ সম্পর্কিত কিছু হাদিস বর্ণনা করা হলো—
১. মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘তোমার রব এমন যুবককে ভালোবাসেন, যার ‘ছবওয়া’ (প্রবৃত্তি পূজা) নেই।(মুসনাদ আহমাদ, হাদিস : ১৭৪০৯)
২. রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘যেদিন আল্লাহর বিশেষ ছায়া ছাড়া অন্য কোনো ছায়া থাকবে না, সেদিন আল্লাহ তাআলা সাত শ্রেণির মানুষকে তাঁর (আরশের) ছায়াতলে আশ্রয় দেবেন। (১) ন্যায়পরায়ণ শাসক; (২) এমন যুবক, যে আল্লাহর ইবাদতে জীবন অতিবাহিত করেছে; (৩) এমন ব্যক্তি, যার অন্তর মসজিদের সঙ্গে সম্পৃক্ত রয়েছে; (৪) এমন দুজন ব্যক্তি, যারা আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে পরস্পরকে ভালোবেসে একত্র হয় এবং পৃথক হয়; (৫) এমন ব্যক্তি, যাকে কোনো সুন্দরী ও অভিজাত নারী (ব্যভিচারে লিপ্ত হওয়ার জন্য) আহবান করে, তখন সে বলে, আমি আল্লাহকে ভয় করি; (৬) এমন ব্যক্তি যে গোপনে দান-সদকা করে, কিন্তু তার বাঁ হাত জানতে পারে না যে তার ডান হাত কী ব্যয় করে; (৭) এমন ব্যক্তি যে নির্জনে আল্লাহকে স্মরণ করে, অতঃপর তার চক্ষুদ্বয় অশ্রুসিক্ত হয়।’ (বুখারি, হাদিস : ১৪২৩)
৩. রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘হাসান ও হুসাইন (রা.) জান্নাতি যুবকদের সর্দার।’ (তিরমিজি, হাদিস : ৩৭৮১)
৪. নবী করিম (সা.) বলেছেন, ‘জান্নাতিদের বলা হবে, তোমরা যুবক থাকবে, কখনো বৃদ্ধ হবে না।’ (মুসলিম, হাদিস : ২৮৩৭)
৫. মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘যে যুবক কোনো বৃদ্ধকে সম্মান প্রদর্শন করে, আল্লাহ তার জন্য এক ব্যক্তিকে নিযুক্ত করবেন, যে তাকে তার বার্ধক্যের সময় সম্মান প্রদর্শন করবে।’ (তিরমিজি, হাদিস : ২০২২)
৬. আবু বকর (রা.) তাঁর কাছে ওমর (রা.) উপস্থিত থাকার সময় জায়েদ বিন সাবিত (রা.)-কে বলেন, ‘তুমি যুবক ও জ্ঞানী ব্যক্তি। আমরা তোমার প্রতি কোনো খারাপ ধারণা রাখি না। কেননা তুমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সময়ে অহি লিখতে।সুতরাং তুমি কোরআনের আয়াত সংগ্রহ করে একত্র করো।’ (বুখারি, হাদিস : ৪৬৭৯)
৭. মহানবী (সা.) এক মুমূর্ষু যুবকের কাছে উপস্থিত হয়ে জিজ্ঞেস করেন, তোমার কেমন লাগছে? যুবকটি বলল, হে আল্লাহর রাসুল! আমি আল্লাহর কাছে (রহমত) প্রত্যাশা করছি এবং আমার পাপের ব্যাপারে ভয় করছি। নবী (সা.) বলেন, এই দুটি জিনিস (আশা ও শঙ্কা) যে বান্দার অন্তরে একত্র হয়, সে যা আশা করে, আল্লাহ তাকে তা দান করবেন এবং সে যা আশঙ্কা করে তা থেকে তাকে নিরাপদ রাখবেন। (ইবনু মাজাহ, হাদিস : ৪২৬১)
৮. হুনায়নের যুদ্ধের সময় বারা ইবনু আজেব (রা.) বলেছেন, ‘না, আল্লাহর কসম, (হুনায়নের যুদ্ধের দিন) রাসুলুল্লাহ (সা.) পলায়ন করেননি। কিন্তু তাঁর কিছুসংখ্যক যুবক সাহাবি অস্ত্র ছাড়াই (যুদ্ধের ময়দানে) অগ্রসর হয়ে গিয়েছিলেন।’ (বুখারি, হাদিস : ২৯৩০)
৯. আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বলেছেন, ‘আমরা যুবক বয়সে নবী (সা.)-এর সঙ্গে যু্দ্ধ করতাম।’ (মুসনাদ আহমাদ, হাদিস : ৩৭০৬)
১০. আনাস (রা.) বলেছেন, মদিনায় আনসারি সাহাবিদের মধ্যে ৭০ জন যুবক ছিল। তাদের ‘কারি’ বলা হতো। তারা মসজিদে থাকত। সন্ধ্যায় তারা মদিনার এক প্রান্তে চলে যেত। তারা আলোচনা-পর্যালোচনা করত এবং সালাত আদায় করত। তাদের পরিবারবর্গ ভাবত, তারা মসজিদে আছে। আর মসজিদে অবস্থানকারীরা মনে করত তারা তাদের পরিবারের সঙ্গে আছে। যখন ফজরের সময় হতো, তখন তারা সুস্বাদু পানি পান করত। তারা কাঠ সংগ্রহ করত এবং সেগুলো নিয়ে এসে নবী (সা.)-এর ঘরে হেলান দিয়ে রেখে দিত। (মুসনাদ আহমাদ, হাদিস : ১৩৪৮৭)
তাঁরা এগুলো বিক্রি করে আহলে সুফফার জন্য খাদ্য ক্রয় করত।
১১. রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘হে যুবসমাজ! তোমাদের মধ্যে যে বিয়ের সামর্থ্য রাখে, সে যেন বিয়ে করে। কেননা তা দৃষ্টিকে সংযত রাখে এবং লজ্জাস্থানকে হেফাজত করে। আর যার বিয়ে করার সামর্থ্য নেই সে যেন সওম (নফল রোজা) পালন করে। কেননা এটি যৌনক্ষমতাকে দমন করে।’ (বুখারি, হাদিস : ৫০৬৫)
১২. দাজ্জাল সম্পর্কে একটি হাদিসে নবী (সা.) বলেন, ‘অতঃপর দাজ্জাল একজন সুঠামদেহী যুবককে ডেকে আনবে এবং তাকে তরবারি দিয়ে আঘাত করে তীরের লক্ষ্যস্থলের ন্যায় দুই টুকরা করে ফেলবে। তারপর সে আবার তাকে আহবান করবে। যুবক আলোকময় হাস্যোজ্জ্বল চেহারায় তার সম্মুখে এগিয়ে আসবে।’ (মুসলিম, হাদিস : ২৯৩৭)
১৩. মালিক বিন হুয়ায়রিস (রা.) বলেছেন, আমরা সমবয়সী একদল যুবক রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে এলাম। আমরা তাঁর কাছে ২০ দিন ও ২০ রাত অবস্থান করলাম। রাসুলুল্লাহ (সা.) অত্যন্ত দয়ালু ও নম্র ছিলেন। তিনি যখন বুঝতে পারলেন যে আমরা আমাদের পরিবারের কাছে ফিরে যেতে চাই বা ফিরে যাওয়ার জন্য উত্সুক হয়ে পড়েছি, তখন তিনি আমাদের জিজ্ঞেস করলেন, আমরা আমাদের পেছনে কাদের রেখে এসেছি। আমরা তাঁকে জানালাম। তিনি বলেন, তোমরা তোমাদের পরিবারের কাছে ফিরে যাও এবং তাদের মধ্যে অবস্থান করো। আর তাদের শিক্ষা দাও ও সৎ কাজের আদেশ দাও। (বর্ণনাকারী বলেন) মালেক (রা.) আরো কিছু উল্লেখ করেছিলেন, যা আমার মনে আছে বা মনে নেই। নবী (সা.) আরো বলেছিলেন, তোমরা সালাত আদায় করো সেভাবে, যেভাবে আমাকে সালাত আদায় করতে দেখছ। সালাতের সময় উপস্থিত হলে তোমাদের একজন যেন আজান দেয় এবং তোমাদের মধ্যে যে বয়সে বড় সে যেন ইমামতি করে। (বুখারি, হাদিস : ৬৩১)
১৪. রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘কিয়ামতের দিন প্রত্যেক আদম সন্তানের পা এক বিন্দু সামনে বাড়তে দেওয়া হবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত না তাদের থেকে পাঁচটি প্রশ্নের জবাব নেওয়া হবে। তাহলো—(১) তোমার জীবন কিভাবে কাটিয়েছ? (২) তোমার যৌবন কিভাবে কাটিয়েছ? (৩) তোমার আয় কোত্থেকে করেছ? (৪) তা কোথায় ব্যয় করেছ? (৫) অর্জিত জ্ঞান অনুপাতে কতটুকু আমল করেছ?’ (তিরমিজি, হাদিস : ২৪১৭)