গোপন দানে সওয়াব বেশি

ফেসবুকসহ অন্যান্য স্যোশাল মিডিয়া আমাদের মধ্যে প্রদর্শনের প্রবণতা বাড়িয়ে দিয়েছে। আমরা এখন নিজের যে কোনো ভালো কাজই প্রদর্শন করার চেষ্টা করি। ওমরা, হজ, দান-সদকা এমন কি নামায পড়তে গিয়েও সেলফি তুলে শেয়ার করে কিছু মানুষ।

সাম্প্রতিক দুর্যোগে বন্যার্তদের ত্রাণ দিতে গিয়ে, দরিদ্র-বিপদগ্রস্ত মানুষদের সাহায্য করতে গিয়েও একই ধরনের প্রদর্শনের প্রবণতা লক্ষ করা যাচ্ছে। দেখা যাচ্ছে, যতটুকু সাহায্য করা হচ্ছে, ছবি তোলা হচ্ছে তার চেয়ে অনেক বেশি। অনেকে অভাবী হওয়ার পরও লজ্জায় ত্রাণ সংগ্রহ করতে যেতে পারছেন না ছবি প্রচারিত হওয়ার ভয়ে।

অথচ ইসলামে গোপনে দানকে উৎসাহিত করা হয়েছে এবং বেশি ফজিলতপূর্ণ বলা হয়েছে। আল্লাহ তাআলা বলেন, যদি তোমরা প্রকাশ্যে দান কর তবে তাও উত্তম, আর যদি তোমরা তা গোপনে কর এবং তা অভাবগ্রস্তদেরকে দান কর, তবে তা তোমাদের জন্য আরো উত্তম এবং তিনি তোমাদের গুনাহসমূহ মুছে দেবেন। আর তোমরা যে আমল কর, আল্লাহ সে সম্পর্কে সম্যক অবহিত। (সুরা বাকারা: ২৭১)

গোপন দানের ফজিলত বর্ণনা করতে গিয়ে আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, ‘কেয়ামতের দিন যখন আরশের ছায়া ছাড়া কোন ছায়া থাকবে না, আল্লাহ তায়ালা সাত শ্রেণির মানুষকে তার আরশের নিচে আশ্রয় দেবেন। তাদের মধ্যে একজন হলো ওই ব্যক্তি, যে এতো গোপনে দান করত যে, তার ডান হাতের দান বাম হাতও টের পেত না। (সহিহ বুখারি, সহিহ মুসলিম)

বিশেষত দান-সদকার প্রদর্শনী করতে গিয়ে যদি নিয়তের মধ্যে রিয়া বা লৌকিকতা ঢুকে পড়ে, আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের বদলে মানুষকে দেখানোর ইচ্ছা ঢুকে পড়ে, তাহলে সওয়াব তো নষ্ট হবেই, রিয়ার কারণে তা গুনাহের কারণ হয়ে উঠবে। হাদিসে রিয়াকে শিরকের সাথে তুলনা করা হয়েছে। মাহমুদ ইবনে লাবিদ আনাসারি (রা.) থেকে বর্ণিত আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, এই সব আমলই হয়ে যায় মানুষের জন্য, শুধু আল্লাহর জন্য কিছুই থাকে না। রসূল সা. বলেছেন, আমি আপনাদের জন্য যে বিষয়টিকে সবচেয়ে বেশি ভয় করি, তা হলো ছোট শিরক তথা রিয়া বা লৌকিকতা। আমলের প্রতিদান দেওয়ার সময় আল্লাহ তাআলা বলবেন, যাদেরকে তোমরা তোমাদের আমল দেখাতে, তাদের কাছেই প্রতিদানের জন্য যাও, দেখ তারা কি প্রতিদান দিতে পারবে? (মুসনাদে আহমদ)

আল্লাহ তাআলা বলেন, হে ঈমানদারগণ! দানের কথা মনে করিয়ে দিয়ে ও কষ্ট দিয়ে তোমরা নিজেদের দান-খয়রাতকে সে ব্যক্তির ন্যায় ব্যর্থ করে দিও না যে নিজের ধন লোক দেখানোর জন্য ব্যয় করে থাকে। (সুরা বাকারা: ২৬৪)

তাই নিজের আমলকে রিয়া বা লৌকিকতা থেকে রক্ষা করতে হবে। কোনো নেক কাজ শুরু করার পর অন্তরে রিয়া এসে জায়গা নেওয়ার চেষ্টা করলে যথাসম্ভব তা প্রতিহত করতে হবে। হাদিসে কুদসিতে এসেছে, আল্লাহ বলেন, আমি শরিককদের মধ্যে শিরক থেকে সবচেয়ে বেশি অভাবমুক্ত। যদি কেউ কোন আমল করে এবং তাতে আমাকে ছাড়া অন্য কাউকে শরীক করে, তাহলে আমি তাকে ও তাঁর শিরককে তাদের অবস্থায়ই ছেড়ে দেই। (সহিহ মুসলিম)