হাসপাতালে অসৎ কাজ করলেই চাকরিচ্যুত: সারজিস আলম

সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসক, কর্মকর্তা-কর্মচারী ও দালালদের হুঁশিয়ারি করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক সারজিস আলম। তিনি বলেছেন, সরকারি হাসপাতালে একটি মধ্যস্বত্বভোগী গোষ্ঠী রয়েছে। এই গোষ্ঠী এতদিন ধরে এই অসৎ কাজ করেছে। তাদের আমরা হুঁশিয়ার করে দিতে চাই, প্রশাসনের সহযোগিতায় কাউকে যদি এ ধরনের কাজে দেখি তার চাকরিচ্যুতিসহ যত ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া দরকার আমরা তার সবগেুলো নেব।

শনিবার (১৭ আগস্ট) বিকালে রাজধানীর কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সঙ্গে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে তিনি হুশিয়ারি দেন।

আন্দোলন দমাতে শুধু রাবার বুলেট নয়, বুলেটও ব্যবহার করা হয়েছে বলে জানান সমন্বয়ক সারজিস আলম। তিনি বলেন, আমরা হাসপাতাল ঘুরে দেখেছি ফ্যাসিস্ট সরকার বলেছিল শুধু নাকি রাবার বুলেট ছোঁড়া হয়েছে। কিন্তু আহতদের শরীরের একপাশ দিয়ে বুলেট ঢুকে আরেক পাশ দিয়ে বের হয়ে গিয়ে আরেকজনকে আঘাত করেছে। হাসপাতালে আহতরা কাতরাচ্ছে। যারা এই গণহত্যার মতো বিষয়ের সঙ্গে জড়িত ছিল তাদের যেন বিচার দেশে ও আন্তর্জাতিকভাবে হয়।

এ সময় সমন্বয়ক সারজিস বলেন, এখন আমাদের প্রথম ও প্রধান কাজ ঢাকাসহ সারাদেশে আমাদের যে সব ভাইবোনেরা আহত হয়ে কাতরাচ্ছে, আমরা তাদের কাছে ছুটে যাচ্ছি। আমরা ১৫টি হাসপাতালে গিয়েছি। আমাদের পর্যবেক্ষণ হলো-  ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও মিটফোর্ড হাসপাতালসহ  ঢাকা শহরের বড় বড় হাসপাতালগুলোতে রোগীর খুব চাপ। শয্যার চেয়ে রোগী অনেক বেশি। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কাছে চাওয়া, চিকিৎসাধীন আহত ছাত্র-জনতাদের মধ্যে যতটুকু রোগী সেখানে রাখা সম্ভব, সেটুকু রেখে বাকিদের যেন বেসরকারি হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে যেন তাদের সঠিক চিকিৎসা হয়।

এই সমন্বয়ক বলেন, এর আগে বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতাল আহতদের প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে সরকারি হাসপাতালে পাঠিয়ে দিয়েছে। দুই একটি বেসরকারি হাসপাতাল ছাড়া সেখানে রোগী প্রায় নেই বললেই চলে। সমস্ত রোগী সরকারি হাসপাতালে। কারণ বেসরকারি হাসপাতালের খরচ চালানোর মতো আর্থিক অবস্থা তাদের নেই। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে একটি প্রজ্ঞাপন দেওয়া হয়েছে সকল জায়গায় যত খরচ হয়েছে সেটা যেন মওকুফ করা হয় এবং তারপরও বেসরকারি হাসপাতাল কিছু বিল নেয়, সেটিও যেন ন্যূনতম নেয়।

সারজিস বলেন, আমাদের আবেদন, সরকারি বা বেসরকারি যেকোনো হাসপাতালে যেকোনো বয়সী আন্দোলনকারী হোক না কেন,  ঢাকা ও ঢাকার বাইরে, সবার চিকিৎসা ফি যেন মওকুফ করা হয়। কিংবা সেখানে যদি কোনো পেমেন্ট করতে হয়, সেই দায়িত্ব যেন রাষ্ট্র নেয়।

এই সমন্বয়ক বলেন, আমাদের অনেক আন্দোলনকারী বা সমন্বয়ক বা সহ-সমন্বয়ক রয়েছেন, ইদানীং বিভিন্ন গ্রুপও তৈরি হচ্ছে। তাদের একটা বড় সংখ্যক হাসপাতালগুলোতে পরিদর্শনে যাচ্ছে। এতে আহতদের স্বাস্থ্যগত নিরাপত্তা কিংবা পরিচ্ছন্নতা সমস্যা হচ্ছে। আপনাদের কাছে অনুরোধ, আমরা যেন সংক্রমণের বিষয়টা মাথায় রাখি। সরকারি হাসপাতালে হাইকেয়ার ইউনিট তৈরি করবে, সেটা যেন বজায় রাখি।

বেসরকারি হাসপাতালের প্রতি আহ্বান জানিয়ে সমন্বয়ে বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কাছে আমাদের আবেদন থাকবে, বেসরকারি হাসপাতাল থেকে যারা ছাড়া পেয়েছে তাদের থেকে লাখ লাখ টাকা বিল নেওয়া হয়েছে। তাদের এই বিল ফেরত দিয়ে তাদের যে ইমেজের সংকট তৈরি হয়েছে, সেই ইমেজ ফিরিয়ে আনার চেষ্টা যেন বেসরকারি হাসপাতালগুলো করে।