হলি আর্টিজানে হামলার ৮ বছর আজ

রাজধানীর গুলশানে হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় জঙ্গি হামলার আট বছর আজ। বাংলাদেশের ইতিহাসে জঙ্গি হামলার এ রকম বড় ঘটনার পরও এখনো অনলাইনে সক্রিয় রয়েছে জঙ্গিরা। এক সময় এনক্রিপটেড অ্যাপস টেলিগ্রাম ও থ্রিমাতে তাদের কার্যক্রম সীমাবদ্ধ ছিল। তবে এখন নতুন নতুন সব অ্যাপসে সদস্য সংগ্রহ, প্রচারণা, নিজেদের মধ্যে ট্রেনিং মডিউল শেয়ার করাসহ যাবতীয় কার্যক্রম চালাচ্ছে অনেকটা নির্বিঘ্নে। ফলে জঙ্গি দমনে এক রকম হিমশিম খাচ্ছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। প্রশ্ন উঠেছে তাদের সক্ষমতা নিয়েও।

এদিকে হলি আর্টিজানে হামলার পর চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। সন্ত্রাসবাদে সরকারও জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করে। গঠন করা হয় পুলিশের সন্ত্রাসবিরোধী একাধিক ইউনিট। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর লাগাতার অভিযানের মুখে অনেকটাই কোণঠাসা হয়ে পড়ে জঙ্গিরা। গত আট বছরে র‌্যাব ১ হাজার ৮৭৫ জন ও সিটিটিসি ৮২৬ জন জঙ্গি গ্রেফতার করেছে। তবে এরপরও থেমে নেই জঙ্গিদের কার্যক্রম। নিজেদের খোলস বদলে ফের সক্রিয় হয়ে উঠেছে তারা।

পুলিশের অ্যান্টি টেরোরিজম ইউনিটের (এটিইউ) ডিআইজি (প্রশাসন) মফিজ উদ্দিন আহম্মেদ বলেন, অনলাইন প্ল্যাটফর্মে কার্যক্রম অনেকটা হিডেনলি হয়। এটাকে প্রতিরোধ করার জন্য আমরা হিডেন পদ্ধতিতে কাজ করে থাকি। আমাদের সাইবার ক্রাইমের আলাদা উইং আছে।

উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের ১ জুলাই রাতে রাজধানীর গুলশানের হলি আর্টিজানে ভয়াবহ ওই জঙ্গি হামলায় ১৭ বিদেশিসহ ২০ জন নিহত হন। নিহতদের মধ্যে ছিলেন দুজন পুলিশ কর্মকর্তা। এছাড়া জঙ্গিদের ছোড়া গুলি ও বোমায় পুলিশের অনেক সদস্য আহত হন। এ ঘটনার পর থেকে প্রতিবছর ১ জুলাই গুলশানের ৭৯ নম্বর সড়কের পাঁচ নম্বর প্লটের ওই ভবনের সামনে অস্থায়ী বেদিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান বিভিন্ন দূতাবাসের কর্মকর্তাসহ দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলাকে জঙ্গিদের চালানো অন্যতম বড় আঘাত বলে বিবেচনা করা হয়। ঘটনার দিন ৫ জঙ্গি আগ্নেয়াস্ত্র, চাপাতি ও গ্রেনেড নিয়ে গুলশানের কূটনৈতিক এলাকায় অবস্থিত হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় ঢুকে পড়ে এবং সেখানে থাকা লোকজনকে জিম্মি করে। কয়েকবার প্রস্তুতি নেওয়া সত্ত্বেও স্পর্শকাতর বিবেচনায় হলি আর্টিজানে অভিযান থেকে বিরত থাকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। পরদিন সকালে সেনাবাহিনী পরিচালিত ‘অপারেশন থান্ডারবোল্টে’ জিম্মিদশার অবসান হয়। সেনা অভিযানে হামলাকারী ৫ জঙ্গি নিহত হয়। অভিযানে নিহত জঙ্গিরা হলেন রোহান ইমতিয়াজ, সামিউল মোবাশ্বির, নিবরাস ইসলাম, শফিকুল ইসলাম ও খায়রুল ইসলাম। ওই সময় হলি আর্টিজানে হামলার দায় স্বীকার করে মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেট (আইএস) বিবৃতি দেয়। এছাড়া হামলাকারী পাঁচজনকে তাদের ‘সৈনিক’ বলেও দাবি করে জঙ্গি সংগঠনটি। তবে সরকার আইএসের এই দাবি নাকচ করে দিয়ে জানায়, দেশীয় জঙ্গি সংগঠন নব্য জেএমবি এই হামলার জন্য দায়ী।

সিটিটিসি সূত্র বলছে, গুলশানের হলি আর্টিজানের বেকারিতে হামলার ঘটনায় গুলশান থানায় হওয়া মামলা তদন্তের দায়িত্ব পায় সিটিটিসি। তদন্ত শেষে এই ঘটনায় জড়িত সব মাস্টারমাইন্ডকে শনাক্ত করে। তাদের মধ্যে বেশ কয়েকজন সিটিটিসির বিভিন্ন অভিযানে নিহত হয় এবং আটজনকে গ্রেফতার করে। পরে ২০১৭ সালে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে সিটিটিসি। আদালতের রায়ে একজন বেকসুর খালাস পায় এবং অন্য সবাই ফাঁসির দণ্ডাদেশ পায়। এ রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করা হলে উচ্চ আদালতের রায়ে আমৃত্যু কারাদণ্ড প্রদান করা হয়। সিটিটিসির তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, এই হামলায় অংশগ্রহণ করেছিল নব্য জেএমবি।

জঙ্গি সংগঠনের ন্যাচার বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, নব্য জেএমবি বাংলাদেশের ইতিহাসে সব থেকে হিংস তম সংগঠন। তারা অনেকগুলো হামলা চালায় বিভিন্ন স্থানে। পরে সিটিটিসি তাদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করে এই সংগঠনের নেটওয়ার্ক ভেঙে দেয়। এছাড়া এই অর্থবছরে ৫৪ জনকে ডি রেডিকালাইজেশন প্রোগ্রামের আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে।

জঙ্গিবাদমুক্ত সমাজ গঠনে মায়েদের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ : সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ ও মাদকমুক্ত শান্তিপূর্ণ সমাজ গঠনে মায়েদের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। কারণ পারিবারিক শিক্ষা শিশুদের চরিত্র ও মূল্যবোধ গঠনের প্রথম ধাপ। আর শিশুরা এই শিক্ষা বেশির ভাগই তাদের মায়ের কাছ থেকে পেয়ে থাকে। রোববার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে এনজিওবিষয়ক ব্যুরো অফিসে আয়োজিত ’মাদারস্কুলস গ্রাজুয়েশন সেরেমনি’ শীর্ষক এক অনুষ্ঠানে বক্তারা এসব কথা বলেন। মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন (এমজেএফ) এবং কমিউনিটি পার্টিসিপেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (সিপিডি) যৌথভাবে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। সিপিডির ডেপুটি এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর রুমানা কাদেরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন সমাজসেবা অধিদপ্তরের কর্মকর্তা কেএম শহিদুজ্জামান, ডিএমপির কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের সহকারী কমিশনার রোকসানা ইসলাম সুজানা, মাদারস্কুলসের শিক্ষিকা সায়মা জাহান প্রমুখ।