সোহেল রানাকে হাইকোর্টের দেওয়া জামিন স্থগিত

প্রায় এক দশক আগে সাভারে রানা প্লাজা ধসে হতাহতের মামলায় ভবনমালিক সোহেল রানাকে তিনদিন আগে জামিন দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনে আজ রবিবার সে জামিন স্থগিত করেছেন বিচারপতি মো. আবু জাফর সিদ্দিকীর চেম্বার আদালত।

আদালতে আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. সারওয়ার হোসেন (বাপ্পী) । সঙ্গে ছিলেন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ সাইফুল আলম। সোহেল রানার পক্ষে ছিলেন আইনজীবী কামরুল ইসলাম।

সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল সাইফুল আলম বলেন, “আগামী ৮ মে পর‌্যন্ত জামিন স্থগিত করে ওইদিন আবেদনটি আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে শুনানির জন্য রেখেছেন আদালত।”

গত ৬ এপ্রিল সোহেল রানার নিয়মিত জামিন প্রশ্নে জারি করা রুল যথাযথ ঘোষণা করে এ রায় দেন বিচারপতি আকরাম হোসেন চৌধুরী ও বিচারপতি শাহেদ নুরুউদ্দিনের  হাইকোর্ট বেঞ্চ। রায়ে সোহেল রানাকে নিয়মিত জামিন দেওয়া হয়।

সেদিন তার আইনজীবী কামরুল ইসরাম বলেছিলেন, “আর সব মামলায় তিনি জামিনে আছেন। রাষ্ট্রপক্ষ আপিল বিভাগের চেম্বার আদালতে গিয়ে এ জামিন আদেশে স্থগিতাদেশ না নিলে তার মুক্তিতে বাধা নেই।”

আর ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. মহিউদ্দিন দেওয়ান বলেছিলেন, চেম্বার আদালতে জামিন স্থগিত চাইবে রাষ্ট্রপক্ষ।
২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল সকালে সাভার বাসস্ট্যন্ড সংলগ্ন আট তলা রানা প্লাজা ভেঙে পড়লে শিল্পক্ষেত্রে বিশ্বের অন্যতম ভয়াবহ দুর্ঘটনাটি ঘটে। ওই ঘটনায় নিহত হন এক হাজার ১৩৫ জন, আহত হন আরও হাজারখানেক শ্রমিক।

বাংলাদেশের ওই ঘটনা সে সময় আন্তর্জাতিক সব গণমাধ্যমে শিরোনাম হয়। দেশে কারখানার অবকাঠামোগত নিরাপত্তা ও কর্মপরিবেশের বিষয়টি নতুন করে আলোচনায় এলে সরকার ও মালিকরা বিভিন্ন পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হয়।

ভবন ধসে প্রাণহানির ঘটনায় প্রথমে ‘অবহেলাজনিত মৃত্যুর’ অভিযোগে একটি মামলা করেন সাভার থানার এসআই ওয়ালী আশরাফ। রানা প্লাজার মালিক সোহেল রানাসহ ২১ জনকে এজাহারে আসামি করা হয়। তবে তদন্ত শেষে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা অভিযোগপত্রে ৪১ জনকে আসামি করে তাদের বিরুদ্ধে পরিকল্পিত মৃত্যু ঘটানোসহ দণ্ডবিধির ৩০২, ৩২৬, ৩২৫, ৩৩৭, ৩৩৮, ৪২৭, ৪৬৫, ৪৭১, ২১২, ১১৪, ১০৯, ৩৪ ধারায় বিভিন্ন অভিযোগ আনেন। পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের ( সিআইডি) সহকারী সুপার বিজয়কৃষ্ণ কর ২০১৫ সালের ১ জুন অভিযোগপত্র জমা দেন।

মামলাটি ঢাকার জেলা ও দায়রা জজ আদালতে সাক্ষ্যগ্রহণ পর্যায়ে আছে। পাঁচ শতাধিক সাক্ষী এ মামলায়। তার মধ্যে ৩৫ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য হয়েছে। ২০২০ সালের ১২ নভেম্বর এ মামলায় নিম্ন আদালতে সোহেল রানার জামিন আবেদন খারিজ হয়। এরপর তিনি হাই কোর্টে জামিন আবেদন করেন। ২০২১ সালের ১ মার্চ হাইকোর্ট তার জামিন প্রশ্নে রুল জারি করেন। সে রুল যথাযথ ঘোষণা করে রায় দিলেন উচ্চ আদালত।