সব কিছু সংস্কারের পরই দ্রুত নির্বাচন: ড. ইউনূস

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বিদেশি কূটনীতিকদের জানিয়েছেন, সব কিছু সংস্কারের পর যত দ্রুত সম্ভব অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের আয়োজন করা হবে। তিনি বলেন, ‘বর্তমান সরকারের প্রধান কাজ হলো যত দ্রুত সম্ভব একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যবস্থা করা। তবে এর আগে নির্বাচন কমিশন, বিচার বিভাগ, বেসামরিক প্রশাসন, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী ও গণমাধ্যমের আমূল সংস্কারের মাধ্যমে একটি অনুকূল পরিবেশ তৈরি করা হবে।’

গতকাল রবিবার ঢাকায় ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে দেশের চলমান পরিস্থিতি নিয়ে বাংলাদেশে কর্মরত বিভিন্ন দেশের হাইকমিশনার, রাষ্ট্রদূত ও জাতিসংঘের সংস্থাগুলোর আবাসিক প্রধানদের উদ্দেশে ড. ইউনূস এসব কথা বলেন।

পরে প্রধান উপদেষ্টার প্রেসসচিব শফিকুল আলম এ বিষয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন।ছাত্র-জনতার তীব্র গণ-আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর গত ৮ আগস্ট ড. ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করে। দায়িত্ব নেওয়ার পর ড. ইউনূস প্রথমবারের মতো বিদেশি কূটনীতিকদের সঙ্গে বৈঠক করলেন।

শফিকুল আলম জানান, প্রধান উপদেষ্টা কূটনীতিকদের জানিয়েছেন, এই মুহূর্তে তাঁর সরকারের প্রধান কাজ হচ্ছে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক করা।

৫ আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানকে বাংলাদেশের দ্বিতীয় স্বাধীনতা উল্লেখ করে তিনি কূটনীতিকদের বলেন, ‘আমাদের নতুন যাত্রা শুরু হয়েছে। এ দেশের পুনর্নির্মাণের জন্য আপনাদের পূর্ণ সহযোগিতা প্রত্যাশা করছি।’

ছাত্র-জনতার প্রত্যাশার বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করে ড. ইউনূস বলেন, তারা এমন এক বাংলাদেশ গড়তে সচেষ্ট, যেখানে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা থাকবে, থাকবে বাকস্বাধীনতা, থাকবে মানবাধিকার।

গণমাধ্যম সংস্কার বিষয়ে ড. ইউনূস কূটনীতিকদের বলেন, শেখ হাসিনার সরকার মানুষের বাকস্বাধীনতা হরণ করতে ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টসহ বিভিন্ন নিবর্তনমূলক আইন করেছিল। এখন গণ-অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া ছাত্রসমাজ ও জন-আকাঙ্ক্ষা ধারণ করে মত প্রকাশের স্বাধীনতা ফিরিয়ে আনা হবে। এ জন্য প্রয়োজনীয় সংস্কার করা হবে বলে জানান তিনি।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, এই মুহূর্তে আর্থিক খাতে বড় অগ্রাধিকার হচ্ছে সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনা।

বাংলাদেশ তৈরি পোশাক শিল্পে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম রপ্তানিকারক। আমরা এখানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করি। তবে কেউ বৈশ্বিক পোশাক সরবরাহ কাঠামো বিঘ্নিত করার চেষ্টা করলে তা কোনোভাবে সহ্য করা হবে না বলে স্পষ্ট বার্তা দেন তিনি।প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আমি এমন সময় দায়িত্ব নিয়েছি, যখন দেশের অনেক কিছু চরম বিশৃঙ্খল অবস্থায় ছিল। স্বৈরাচার শেখ হাসিনা দেশের প্রতিটি প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করে গেছেন। বিচারব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। দীর্ঘ দেড় দশকের নির্মম দমন-পীড়নে গণতান্ত্রিক অধিকার ভূলুণ্ঠিত হয়েছে।’

শেখ হাসিনার নেতৃত্বে কারচুপিপূর্ণ নির্বাচনের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে ড. ইউনূস বলেন, শেখ হাসিনার সময়ে নির্বাচনে কারচুপি হয়েছে। তরুণ প্রজন্মকে ভোটাধিকার ছাড়াই বড় হতে হয়েছে।

প্রধান উপদেষ্টা বিদেশি কূটনীতিকদের জানান, গত ১৫ বছর সম্পূর্ণ রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতায় দেশে ব্যাংক লুট এবং ক্ষমতার অপব্যবহার করে রাষ্ট্রীয় কোষাগার লুণ্ঠন করা হয়েছে।

বর্তমান প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশকে নতুন করে গড়ে তুলতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহযোগিতা কামনা করে শান্তিতে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘আমরা একটি নতুন বাংলাদেশের সূচনা করতে যাচ্ছি। আমাদের বীর ছাত্র-জনতা দেশের আমূল পরিবর্তন চায়। এটি একটি কঠিন যাত্রা। এই যাত্রায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহযোগিতা প্রয়োজন।’ তিনি অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির জন্য বাণিজ্য ও বিনিয়োগ অংশীদারদের বাংলাদেশের প্রতি আস্থা অটুট রাখার আহ্বান জানান।

প্রেসসচিব জানান, প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, বাংলাদেশ যত আন্তর্জাতিক চুক্তি করেছে, যত আইনি বাধ্যবাধকতা আছে, সেগুলো মেনে চলা হবে। রোহিঙ্গাদের তাদের স্বদেশে ফিরিয়ে নেওয়াসহ মানবিক সাহায্য অব্যাহত রাখার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানান ড. ইউনূস। ব্রিফিং শেষে ড. মুহাম্মদ ইউনূস কূটনীতিকদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন। সূত্র: বাসস