প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস নতুন বিশ্ব গড়ে তোলার জন্য সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, বিদ্যমান সভ্যতা আমাদের ব্যর্থ করেছে। পরিবেশগত দৃষ্টিকোণ থেকে এটি একটি আত্মধ্বংসী সভ্যতা হয়ে উঠেছে। আর্থিক দৃষ্টিকোণ থেকে এটি সম্পদের চরম সঞ্চয়ের দিকে পরিচালিত করেছে।এমন একটি অর্থনীতি গড়তে হবে, যেখানে প্রযুক্তি ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সুফল বিশ্বের সব মানুষের মধ্যে ভাগ করে নেওয়া যাবে। গতকাল শনিবার রাজধানীর একটি হোটেলে তিন দিনব্যাপী বে অব বেঙ্গল সংলাপের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে ভাষণে তিনি এসব কথা বলেন।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আসুন, আমরা একে অপরকে চ্যালেঞ্জ করি, একে অপরের কথা শুনি এবং একটি নতুন পৃথিবী কল্পনা করার সাহস করি, যা পরিবেশগতভাবে নিরাপদ পৃথিবীর সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। এমন একটি অর্থনীতি গড়ে তুলি, যেখানে প্রযুক্তি ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ফল সবার মধ্যে সমানভাবে ভাগ করা হবে, শুধু কিছু বিশেষ সুবিধাভোগীর মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে না।তরুণদের সম্ভাবনার বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আমরা একই সঙ্গে অপরিসীম সম্ভাবনার একটি অঞ্চল। আমাদের দেশ তরুণদের দেশ। ১৭১ মিলিয়ন মানুষের মধ্যে অর্ধেকের বয়স ২৭ বছরের নিচে। এটি আমাদের দেশকে সৃজনশীলতায় অত্যন্ত শক্তিশালী করে তুলেছে। যুবসমাজের মধ্যে টেকসই উন্নয়নে নেতৃত্ব দেওয়ার এবং আমাদের পরিবেশ সুরক্ষা ও উন্নয়নের ক্ষেত্রে সবুজ প্রবৃদ্ধির মডেল তৈরির ক্ষমতা রয়েছে। তবে এর জন্য প্রয়োজন সহযোগিতা, সাহস এবং অমিত ভবিষ্যৎকে নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি করে নেওয়ার প্রতি অটুট বিশ্বাস।
ড. ইউনূস বলেন, ‘এই সম্মেলনে আগামী কয়েক দিন ধরে আমরা যখন আলোচনা করব এবং আমাদের চিন্তাভাবনা ভাগাভাগি করব, আমি আপনাদের অনুরোধ করব, কীভাবে একটি নতুন বিশ্ব গড়া যায়, তা নিয়ে ভাবতে। আমাদের যুবসমাজ আমাদেরকে নতুন বাংলাদেশ তৈরির পথে পরিচালিত করেছে।’ সম্মেলন আয়োজন করায় বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজের (সিজিএস) প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, এই সম্মেলন শুধু মতবিনিময়ের স্থান নয়; এটি আমাদের অভিন্ন সহনশীলতার প্রমাণ। বাংলাদেশ সব সময় স্বপ্ন, কঠোর পরিশ্রম এবং অবিচ্ছেদ্য ইচ্ছা পূরণের দেশ হিসেবে প্রমাণ করেছে। এটি এখন আরো বেশি প্রাসঙ্গিক। কারণ, বিপ্লবের আকাঙ্ক্ষাগুলো এখনো সবার মনে সতেজ। এই আকাঙ্ক্ষা লাখো কণ্ঠের আওয়াজ, প্রায় পুরো জাতির আওয়াজ, তারা পরিবর্তনের দাবি তুলেছে। আমাদের সবাইকে মানবাধিকার, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, ন্যায়বিচার এবং অন্তর্ভুক্তির ওপর ভিত্তি করে ভবিষ্যৎ গড়ার জন্য চাপ দিয়ে যাচ্ছে।’ অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন বক্তব্য দেন।