যুক্তরাষ্ট্রের রাজস্ব ও অর্থ দপ্তরের আন্তর্জাতিক অর্থায়ন বিষয়ক সহকারী আন্ডারসেক্রেটারি ব্রেন্ট নেইম্যানের নেতৃত্বে ছয় সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল গতকাল শনিবার সকালে ঢাকায় এসেছে। এই প্রতিনিধিদলের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি ডোনাল্ড লু। দিল্লি সফর শেষে তিনি গতকাল বিকেলে ঢাকায় পৌঁছেন।
ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর প্রথমবারের মতো ঢাকায় এলো মার্কিন প্রতিনিধিদল।আজ রবিবার মার্কিন প্রতিনিধিদলটি কর্মব্যস্ত সময় পার করবে। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠকের পাশাপাশি পররাষ্ট্র উপদেষ্টা, অর্থ ও বাণিজ্য উপদেষ্টা এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের সঙ্গে দলটি আজ বৈঠক করবে বলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।
ঢাকা ও ওয়াশিংটনের কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংকট থেকে উত্তরণের সন্ধিক্ষণে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে সংস্কারপ্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে এগিয়ে যাওয়ার এক দারুণ সুযোগ তৈরি হয়েছে। সেই সঙ্গে বাংলাদেশের বর্তমান সরকারের আমলে দুই দেশের সম্পর্ক নিরবচ্ছিন্নভাবে এগিয়ে নেওয়ার পথ উন্মোচিত হয়েছে।
কূটনৈতিক সূত্রগুলো জানায়, মার্কিন প্রতিনিধিদলের সঙ্গে আলোচনায় চারটি বিষয় প্রাধান্য পেতে পারে। সেগুলো হচ্ছে : অর্থনৈতিক সহযোগিতা, পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনা, গণতন্ত্র-মানবাধিকার নিয়ে আলোচনা এবং দিল্লি প্রসঙ্গ।
সূত্র বলছে, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের জরুরি চাহিদা এবং দুই দেশের ভবিষ্যৎ সম্পর্ক নিয়ে এই সফরে যুক্তরাষ্ট্র অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও সংস্কারে কিভাবে সহায়তা করা যায়, তার ওপর গুরুত্ব দেবে। তবে ওয়াশিংটনের প্রতিনিধিদলের এবারের বাংলাদেশ সফরে অর্থনীতিতে অগ্রাধিকার থাকলেও শেষ পর্যন্ত রাজনীতি দুই দেশের সম্পর্কের বড় নিয়ামক হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদারে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন সরকারকে যুক্তরাষ্ট্র যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, তা এগিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে মার্কিন প্রতিনিধিদলের ঢাকা সফরকে বাংলাদেশের জন্য বিশেষ সুযোগ হিসেবে দেখছেন কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা। তাঁরা বলছেন, গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও অর্থনৈতিক সংকট উত্তরণে সহায়তা, বিদেশে পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনার পাশাপাশি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় ফেরত যেতে সরকারের পদক্ষেপ এবং এ ক্ষেত্রে ওয়াশিংটনের সহায়তা চাওয়ার সুযোগ হবে এ সফরে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদলের সদস্যরা আজ অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস, পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন এবং অর্থ ও বাণিজ্য উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন। আজ দুপুরে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদলটির সদস্যরা পররাষ্ট্রসচিবের সঙ্গে মধ্যহ্নভোজে অংশ নেবেন। প্রতিনিধিদলের নেতা যুক্তরাষ্ট্রের রাজস্ব দপ্তরের ডেপুটি আন্ডারসেক্রেটারি ব্রেন্ট নেইম্যান বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান মনসুরের সঙ্গেও বৈঠক করবেন।
পররাষ্ট্রসচিব মো. জসীম উদ্দিন গত বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদল ঢাকায় আসছে। এটা বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ককে যুক্তরাষ্ট্র যে গুরুত্ব দেয়, তার একটা বড় প্রতিফলন। আমাদের সঙ্গে তাদের আলোচনাটা বহুমাত্রিক হবে, এটা শুধু একটি বিষয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে না।’
এদিকে গতকালই ঢাকা সফররত মার্কিন প্রতিনিধিদল আমেরিকান চেম্বার অব কমার্স ইন বাংলাদেশের (অ্যামচেম) নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করে। সঠিক অর্থনৈতিক সংস্কার হলে বাংলাদেশে উন্নয়ন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচনে বেসরকারি খাতে মার্কিন বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সহায়তা বাড়বে বলে বৈঠকে আলোচনা হয়।
বৈঠকের পর ঢাকার মার্কিন দূতাবাস এক বার্তায় জানায়, জ্বালানি নিরাপত্তা থেকে শুরু করে ডাটা সেন্টার এবং পরিবহন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসাগুলো বাংলাদেশের অর্থনীতির বিভিন্ন খাতে ইতিবাচক ভূমিকা পালন করছে। সঠিক অর্থনৈতিক সংস্কার করা হলে আমেরিকার বেসরকারি খাত বাণিজ্য ও বিনিয়োগের মাধ্যমে বাংলাদেশের উন্নয়ন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচনে সহায়তা করতে পারে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মধ্য দিয়ে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতন হয়। হাসিনা সরকারের পতনের তিন দিনের মাথায় ড. ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করা হয়। নতুন সরকার গঠনের পর দ্রুত সময়ের মধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অভিনন্দন জানিয়েছে। পাশাপাশি দেশ গঠনে ড. ইউনূসকে সহায়তার আশ্বাস দিয়েছে।