সাথে এটাও সত্য যে, কোন কোন ক্ষেত্রে এই নারীই আবার আমাদের সমাজে নির্যাতিত, নিপিড়ীত, শোষিত এবং বঞ্চিত। তাই সমাজে নারীদের অধিকার নিশ্চিতকরণে আমাদের দেশে নানাবিধ আইন রয়েছে। অধিকার বঞ্চিত নারীদের আইনগত সহায়তা প্রদানে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০, যৌতুক নিরোধ আইন, ১৯৮০, পারিবারিক সহিংসতা (প্রতিরোধ ও সুরক্ষা) আইন,২০১০ সহ বিভিন্ন পারিবারিক আইন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে চলেছে।
এছাড়াও বাংলাদেশ সংবিধানের ২৮ এবং ২৯ অনুচ্ছেদে নারীদের অধিকারের উপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে।
বর্তমান সময়ের সবচেয়ে আলোচিত বিষয় হলো পারিবারিক আইনগুলোতে নারীদের সম্পত্তি অর্জনের বিধান থাকা স্বত্ত্বেও বিভিন্ন কারণে তারা উত্তরাধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। একজন মুসলমানের মৃত্যুর পরমুহূর্তেই তাঁর সম্পত্তিতে ওয়ারিশদের অংশ সৃষ্টি হয়। কোরআনিক অংশীদার ১২ জনে সুনির্দিষ্ট। এর মধ্যে চারজন পুরুষ ও আটজন মহিলা। পুরুষরা হলো পিতা, দাদা, স্বামী এবং বৈপিত্রেয় ভাই। আটজন মহিলা হলো মাতা, পিতা ও মাতার মাতা, স্ত্রী, কন্যা, পুত্রের কন্যা, আপন বোন, বৈমাত্রেয় বোন ও বৈপিত্রেয় বোন।
হিন্দু নারীরা স্ত্রী ধন এবং নারীর সম্পত্তির মাধ্যমে সম্পত্তির স্বত্ত্ব বা স্বার্থ অর্জন করে থাকে। কিন্তু উত্তরাধিকার নীতিমালা পরিপূর্ণ আকারে বাস্তবায়ন না হওয়ার কারণে নারীরা সম্পত্তি অর্জন হতে বঞ্চিত হচ্ছে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য কারণসমূহ হচ্ছে ব্যক্তিগত রেষারেষি, পারিবারিক অসন্তোষ ও কলহ, অব্যবস্থাপনা, পুরুষতান্ত্রিক মনোভাব, নারীর অসহায়ত্ব, নারীর উত্তরাধিকার সম্পর্কে যথাযথ জ্ঞান না থাকা, প্রাপ্য অংশ নিতে চাইলে ভাইদের অসহযোগিতা, বহুবিবাহের প্রভাবসহ সর্বোপরি আইনী জটিলতা। আর এই সমস্যাগুলো থেকে উত্তরণের সম্ভাব্য উপায়গুলো হলো উত্তরাধিকার আইন সম্পর্কে অবগত করা, উত্তরাধিকার আইন সম্পর্কে বিদ্যমান জটিলতা নিরসন করা, সম্পত্তিতে কন্যা সন্তান ও নারীদের উত্তরাধিকার সম্পর্কে মানুষের নেতিবাচক মনোভাব দূর করা, উত্তরাধিকার আইন সম্পর্কে সচেতনতার জন্য কার্যকরী সভা, সেমিনার, ট্রেনিং কিংবা পাঠ্যপুস্তকের মাধ্যমে জনসচেতনতা তৈরী করা, মসজিদের ইমামের মাধ্যমে প্রচার করা, বাটোয়ারা মামলা করার আগে বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তির মাধ্যমে মীমাংসা করার চেষ্টা করা।
১৯১০ সালের ৮ ই মার্চ থেকে পালিত হওয়া আন্তর্জাতিক নারী দিবসে প্রতিবছরের মত এই বছর আমাদের বাসনা হোক লিঙ্গবৈষম্য দূর করে শিল্প-সাহিত্যসহ সব ক্ষেত্রে এবং সমাজের সমস্ত কাজে নারীদের অবদানকে স্বীকৃতি দেওয়া।
লেখকঃ- মোছাঃ আয়েশা সিদ্দিকা এবং ফায়িজা ইবনাত, শিক্ষক, আইন বিভাগ, ইউনিভার্সিটি অব ইনফরমেশন টেকনোলজি এন্ড সায়েন্সেস (ইউআইটিএস), ঢাকা।