কাল দুর্গোৎসব শুরু, শপিং সেন্টারগুলোতে বেড়েছে ভিড়

আগামীকাল বুধবার থেকে শুরু হচ্ছে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। তাই পূজারি ও ভক্তদের ব্যস্ততার শেষ নেই। তারা মণ্ডপ সাজানোর পাশাপাশি কেনাকাটায় ব্যস্ত। যে কারণে রাজধানীর শপিং সেন্টার, ফ্যাশন হাউস ও অন্য খুচরা বিক্রয়কেন্দ্রগুলোতে ভিড় লক্ষ্য করা গেছে।

হিন্দু শাস্ত্রমতে, মহালয়া তিথিতে দেবী দুর্গাকে মর্ত্যে (পৃথিবীতে) আমন্ত্রণ জানানো হয়। ওই দিন ভোরে চণ্ডীপাঠের মধ্য দিয়েই মর্ত্যলোকে দেবী দুর্গাকে এ আমন্ত্রণ জানানোর মধ্য দিয়ে দুর্গাপূজার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়।

বুধবার মহাষষ্ঠী পূজার মধ্য দিয়ে শুরু হবে দুর্গোত্সব। বুধবার সকাল ৮টা ৪৪ মিনিটের মধ্যে মহাষষ্ঠী কল্পনারম্ভ শেষ হবে।

এর আগে আজ মঙ্গলবার পঞ্চমী তিথি শেষে বেলতলায় অকালবোধনের মধ্য দিয়ে দক্ষিণায়নের নিদ্রিত দেবী দুর্গার নিদ্রা ভাঙাতে বোধনঘট স্থাপন ও বন্দনাপূজা হবে। বোধন শেষে ষষ্ঠী তিথি থেকে দশহস্তে অস্ত্রে সজ্জিত ত্রিনয়নী দেবী দুর্গার অতল স্নিগ্ধ চোখের পলক খুলে যাবে। জেগে উঠবেন দশভুজা দেবী দুর্গা। তীর-ধনুক, চক্র-গদা, খড়্গ-কৃপাণ, কল্যাণ ও ত্রিশূল হাতে শক্তিরূপী দুর্গতিনাশিনী দেবী দুর্গা অশুভ এবং অকল্যাণের মহিষাসুর বধে মূর্ত হয়ে উঠবেন।
এদিকে দুর্গোৎসব ঘিরে সারা দেশের মণ্ডপে মণ্ডপে চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। প্রতিমা তৈরিতে মাটির কাজ এরই মধ্যে শেষ হয়েছে। এখন চলছে সাজসজ্জা ও আলোকসজ্জার কাজ। মণ্ডপগুলো কিভাবে সব থেকে বেশি দৃষ্টিনন্দন করা যায় সে চেষ্টা চলছে। এ নিয়ে কোনো কোনো মহল্লায় এক মণ্ডপের সঙ্গে আরেক মণ্ডপের রীতিমতো প্রতিযোগিতা চলছে।

 পূজায় নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রশাসনের পাশাপাশি পূজা উদযাপন কমিটিও কাজ করছে। একই সঙ্গে পূজাকে সামনে রেখে কেনাকাটাও চলছে। বৃদ্ধ থেকে শিশু সবারই পূজায় নতুন বস্ত্র চাই। তাই তারা ছুটছেন বাজারে ও শপিং মলে। নতুন জামা-কাপড়ের পাশাপাশি পূজার অন্যান্য উপকরণ কেনাও শুরু হয়েছে।সরকারের পতনের পর সৃষ্ট অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির কারণে পূজায় বেচাকেনা নিয়ে কিছুটা সংশয়ে ছিলেন ব্যবসায়ীরা। কিন্তু তাঁদের সেই আশঙ্কা এখন কেটে গেছে। খুচরা বিক্রেতারা বলেছেন, এবার দুর্গাপূজা উপলক্ষে বেচাকেনা ভালো হচ্ছে। সময়মতো ভিসা না পাওয়ায় অনেকে কেনাকাটা করতে প্রতিবেশী দেশ ভারতের কলকাতায় যেতে পারেনি। তারা এখন দেশেই কেনাকাটা করছে। পূজাকে সামনে রেখে বেশির ভাগ ফ্যাশন ব্র্যান্ড, পোশাকের খুচরা বিক্রেতা ও ইলেকট্রনিকস ব্র্যান্ডগুলো নতুন পণ্য নিয়ে আসার পাশাপাশি মূল্য ছাড়সহ নানা অফার দিয়েছে।

রাজধানীর বসুন্ধরা শপিং মলে সরেজমিনে দেখা গেছে, দুর্গাপূজা উপলক্ষে জমজমাট কেনাবেচা চলছে। সেখানে আড়ং, দেশী দশ, ইনফিনিটি, অঞ্জন’সসহ বিভিন্ন পোশাকের শোরুমগুলোতে প্রচণ্ড ভিড়। জুতার দোকানগুলোতেও একই চিত্র। বাটা, বে এম্পোরিয়াম, এপেক্সসহ অন্যান্য ব্র্যান্ডের জুতার শোরুমে চলছে ধুম কেনাকাটা। পূজায় শাড়ি ও সালোয়ার-কামিজের বেশি চাহিদা থাকে। শাড়ির মধ্যে কাতান, সিল্ক ও নকশাদার শাড়ির প্রতি নারীদের আগ্রহ বেশি। জামদানির চাহিদাও যথেষ্ট বলে জানান ব্যবসায়ীরা।

দুর্গাপূজার প্রস্তুতি ঘিরে প্রতিবছরের মতো পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী শাঁখারীবাজারের দোকানগুলো এখন ক্রেতাদের পদচারণে মুখর। শাঁখা, শঙ্খ, প্রতিমার কাপড়, ঘণ্টা, ঘট, প্রদীপ, আগরবাতি, ঠাকুরের মালা, কদম মালা, জবের মালা, মুকুট থেকে শুরু করে শাড়ি, ধুতি, পাঞ্জাবিসহ অলংকারের দোকানগুলোতে ব্যাপক কেনাকাটা চলছে।

পূজা কমিটির সঙ্গে সিপিবি নেতৃবৃন্দের বৈঠক : শারদীয় দুর্গোৎসবকে স্বতঃস্ফূর্ত ও আনন্দমুখর করতে মহানগর সর্বজনীন পূজা কমিটির সঙ্গে বৈঠক করেছেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) ঢাকা মহানগর দক্ষিণ কমিটির নেতৃবৃন্দ। সোমবার দুপুরে ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির প্রাঙ্গণে মহানগর সর্বজনীন পূজা কমিটির কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সভায় সভাপতিত্ব করেন মহানগর সর্বজনীন পূজা কমিটির সভাপতি জয়ন্ত কুমার দেব। উপস্থিত ছিলেন সিপিবি ঢাকা মহানগর দক্ষিণ কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি জামসেদ আনোয়ার তপন ও সাধারণ সম্পাদক জলি তালুকদার, বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সন্তোষ শর্মা ও সহসভাপতি তাপস কুমার পাল, মহানগর সর্বজনীন পূজা কমিটির উপদেষ্টা সুব্রত চৌধুরী প্রমুখ।

আজ সংবাদ সম্মেলন : শারদীয় দুর্গাপূজার সার্বিক প্রস্তুতি তুলে ধরতে আজ মঙ্গলবার দুপুর ১২টায় ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির প্রাঙ্গণে সংবাদ সম্মেলন করবে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ ও মহানগর সর্বজনীন পূজা কমিটি। সংবাদ সম্মেলনে পূজাসংক্রান্ত সব তথ্য ও নিরাপত্তা প্রস্তুতি তুলে ধরা হবে। একই সঙ্গে পূজাকে নির্বিঘ্ন ও উত্সবমুখর করতে সারা দেশের মন্দিরগুলোর আয়োজক কমিটিসহ সংশ্লিষ্ট করণীয় সম্পর্কে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হবে।