আপনজন হারানোর বেদনা আমি বুঝি: প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘একটা জিনিস গেলে তা ফিরে পাওয়া যায়, কিন্তু জীবন গেলে তা আর ফিরে পাওয়া যায় না। আর যারা আপনজন হারিয়েছে, যে মা তার সন্তান হারিয়েছে, যে সন্তার তার বাবা হারিয়েছে, তার কষ্ট আর কেউ না বুঝুক, আমি বুঝি।’

তিনি বলেন, ‘এই আগস্ট মাস… বাবা-মা-ভাই সব হারিয়ে সেই কষ্ট নিয়ে এই বাংলাদেশে ফিরে এসেছিলাম নিজের ছোট ছোট ছেলে-মেয়েকে মাতৃস্নেহ থেকে বঞ্চিত করে এই দেশের মানুষের জন্য। তারা উন্নত জীবন পাবে, স্বাধীনতার সুফল পাবে, প্রত্যেকে পেট ভরে ভাত খাবে, প্রত্যেকে লেখাপড়া শিখে দারিদ্র্য থেকে মুক্তি পাবে। দেশ সমৃদ্ধ হলে সবাই উন্নত জীবন পাবে।’

বৃহস্পতিবার (১ আগস্ট) রাজধানীর খামারবাড়িতে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউট বাংলাদেশ (কেআইবি) মিলনায়তনে কৃষক লীগ আয়োজিত স্বেচ্ছায় রক্তদান কর্মসূচি, আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলে তিনি এসব কথা বলেন।

কোটা প্রথা বাতিল করেছিল সরকার এবং এখন চাওয়ার চেয়ে বেশি দেওয়া হয়েছে, দাবি করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এরপরও তাদের দাবি থামে না। এর পেছনে কী ছিল? কোটা আন্দোলনে জঙ্গি ঢুকে একদিকে হত্যাকাণ্ড চালালো, অন্যদিকে যেসব প্রতিষ্ঠান মানুষকে সেবা দেয়…দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ভবন তো মানুষকে বাঁচানোর জন্য, সেবা দেওয়ার জন্য, সেখানে অগ্নিসংযোগ; বিটিভিতে অগ্নিসংযোগ। সারাদেশকে একটা নেটওয়ার্কের আওতায় এনেছি, সেই সেতু ভবনে অগ্নিসংযোগ। এমনকি মেট্রোরেল, এক্সপ্রেসওয়ে, ডাটা সেন্টার, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বিভিন্ন জায়গায় হামলা চালালো। সিটি কর্পোরেশনের ময়লা ফেলার যে আধুনিক গাড়ি, সেগুলো পুড়িয়ে দেওয়া হলো। ঢাকায় ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট আগে ছিলই না, সেটি আমি করেছি, সেখানে আগুন। জনগণ একটু ভালো থাকবে, সুস্থভাবে চলবে, সেসবের সবকিছুতেই আগুন দিয়ে পোড়ালো। এটা কোন ধরনের আন্দোলন?

সরকারপ্রধান বলেন, আজকে যে প্রাণহানিগুলো ঘটল, যেখানে দাবি শতভাগ মেনে নেওয়া হয়ে গেছে; সেখানে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার কী যৌক্তিকতা আছে, কার স্বার্থে, কেন? পুলিশ হত্যা করা হয়েছে। শুধু হত্যা না, কি বীভৎস দৃশ্য দেখেন। তাকে হত্যা করে ঝুলিয়ে রাখা হলো পা ওপরে রেখে। গাজীপুরে দলের কর্মীদের তো মেরেছেই। হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে গেছে, সেখান থেকে বের করে নিয়ে এসে পা গাছের সাথে ঝুলিয়ে রেখে তাকে গুলি করা হয়েছে। পুলিশের ওপর আক্রমণ! পুলিশ, র‌্যাবের গাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।

আবেগাপ্লুত কণ্ঠে তিনি বলেন, চারজন শিশু মারা গেছে। অনেকগুলোর মৃত্যুর খবর আপনারা পেয়েছেন। পঁচাত্তর পর থেকে আমরা তো শুধু লাশের মিছিলই দেখছি। এবার দু’শর ওপর মানুষ মারা গেলো। যে স্থাপনাগুলো ভেঙেছে, মানুষ কষ্ট পাচ্ছে। একটু দেরি হলেও সেসব গড়ে তোলা যাবে, কিন্তু যে জীবনগুলো ঝড়ে গেল, ছোট্ট ছোট্ট শিশুরা গুলিবিদ্ধ, এই গুলিগুলো কীভাবে লাগল? তারপর মিথ্যাচার। দোতলা বাড়ির মধ্যে জানালার কাছে ছেলেটা, তাকে গুলি লেগেছে। আপনারা বলেন, হেলিকপ্টার থেকে গুলি ঘরের মধ্যে ঢুকবে কীভাবে?

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যখন পুলিশ আটকা পড়ল বিটিভিতে, হেলিকপ্টার দিয়ে, পানি দিয়ে আগুন নেভানোর চেষ্টা করেছে। কারণ, ফায়ার সার্ভিস যেতে পারেনি। ফায়ার সার্ভিসের সবচেয়ে আধুনিক গাড়িগুলো পুড়িয়ে দিয়েছে। মানুষগুলোকে মেরে তাড়িয়ে দিয়েছে। বাধ্য হয়ে হেলিকপ্টার দিয়ে চেষ্টা করেছি। ভবনের ছাদে আটকা পড়া পুলিশদের হেলিকপ্টার দিয়ে উদ্ধার করেছি।’

তিনি বলেন, এই আন্দোলনে আমাদের জ্ঞানী-গুণীরা সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। কীসের সমর্থন দিচ্ছে? দাবি যেটা ছিল, সেটা তো পূরণ হয়ে গেছে। তারপর আবার এভাবে নেমে… আসলে আঘাত পেয়েছে সাধারণ শিক্ষার্থী। কিন্তু, যারা এই আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সন্ত্রাসী এবং জঙ্গি কর্মকাণ্ড চালায়, তাতে ভুক্তভোগী হয় সাধারণ মানুষ। আহতদের যে দেখতে গেলাম, তার প্রায় সবই সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ। তাদের জীবন-জীবিকা কীভাবে চলবে। এভাবে একটা নাশকতা করা, এটা তো জঙ্গিবাদী কর্মকাণ্ড।

এর আগে সাম্প্রতিক সহিংসতায় নিহতদের স্মরণে ও ১৫ আগস্টের শহিদদের স্মরণে দোয়া ও মোনাজাত করা হয়। পরে প্রধানমন্ত্রী রক্তদান কর্মসূচির উদ্বোধন করেন।কৃষক লীগের সভাপতি সমীর চন্দ্রের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক উম্মুল কুলসুম স্মৃতির সঞ্চালনায় সভায় আরও বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য অ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন, কৃষিবিষয়ক সম্পাদক ফরিদুন্নাহার লাইলী প্রমুখ।