নার্স মানে এক নিবেদিত প্রাণ। নার্স মানে নার্সিং। একটি সেবা দানকারী সত্ত্বা। একজন নার্স দেশের স্বাস্থ্যসেবার জন্য অত্যন্ত জরুরি। আন্তর্জাতিক নার্স দিবস আজ। এবারে দিবসটির প্রতিপাদ্য হচ্ছে ‘আমাদের নার্স, আমাদের ভবিষ্যৎ।’ আধুনিক নার্সিংয়ের প্রবর্তক ফ্লোরেন্স নাইটিংগেলের সেবাকর্মের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে প্রতিবছর তার জন্মদিনে আন্তর্জাতিক নার্স দিবস পালন করা হয়। ফ্লোরেন্স নাইটিংগেলের জন্ম ১৮২০ সালের ১২ মে ইতালির ফ্লোরেন্স শহরে। তিনি ছিলেন অপূর্ব রূপসী, অন্যদিকে খুবই দয়ালু ও স্নেহপূর্ণ মনের অধিকারী। তাকে ইউরোপের অন্ধকারে আলোকবর্তিকা বলে আখ্যায়িত করা হয়। নাইটিংগেলের বাবা ছিলেন দুটো স্টেটের মালিক এক ধনী ভূস্বামী। নাইটিংগেল যখন কেবল যৌবনে পা দেন, তখন তার ধনী বাবা পুরো পরিবারকে নিয়ে ইউরোপ ভ্রমণে বের হন। এই ভ্রমণই তরুণী নাইটিংগেলের চিন্তাধারায় ব্যাপক পরিবর্তন নিয়ে আসে। নাইটিংগেল মানবসেবার প্রতি প্রথম টান অনুভব করেন ১৭ বছর বয়সে লন্ডনে থাকা অবস্থায়। পরবর্তীতে এই টানকে তিনি ‘ঈশ্বরের ডাক’ বলে অভিহিত করেছিলেন। কিন্তু সেবাকে জীবনের ব্রত হিসাবে নেওয়ার কথায় প্রবল আপত্তি আসে তার পরিবার থেকে। তখন সমাজে নার্সিং ছিল নিম্নবিত্ত, অসহায়, বিধবা মহিলাদের পেশা। পরিবারের প্রবল আপত্তিকে পাশ কাটিয়ে তিনি নিজেকে নার্সিংয়ের কৌশল ও জ্ঞানে দক্ষ করে তোলেন। বিভিন্ন দেশে ভ্রমণের সুবাদে তিনি সেসব দেশের সেবা ব্যবস্থা সম্পর্কে ধারণা ও অপেক্ষাকৃত উন্নত ব্যবস্থাতে প্রশিক্ষণ লাভ করেন। ১৮৫৩ সালে লন্ডনের মেয়েদের একটি হাসপাতালে নিয়ন্ত্রকের দায়িত্ব নেন। নাইটিংগেলের সবচেয়ে বড় অবদান ছিল ক্রিমিয়ার যুদ্ধে অসুস্থ সৈন্যদের পাশে দাঁড়ানো। রাশিয়ার বিরুদ্ধে ইংল্যান্ডের এই যুদ্ধে সৈন্যদের অবস্থা বিপন্ন। সে সময় প্রতিরক্ষা দপ্তরের সেক্রেটারি সিডনি হার্বাট নাইটিংগেলকে লিখলেন- ‘যুদ্ধের এই বিশৃঙ্খল অবস্থায় আহত সৈন্যদের তত্ত্বাবধান করার মত একজনও উপযুক্ত ব্যক্তি নেই। যদি আপনি এ কাজের ভার গ্রহণ করেন, দেশ আপনার কাছে কৃতজ্ঞ থাকবে।’ দেশের এই ডাক নাইটিংগেল উপেক্ষা করতে পারেননি। নিজ উদ্যোগে নার্সিংয়ের জন্য ৩৮ জনের স্বেচ্ছাসেবী দল নিয়ে তিনি ছুটে যান। যা আজো নার্সিং সেবার এক অনন্য উদাহরণ হয়ে আছে। বিশ্বে ১৯৬৫ সাল থেকে পালিত হয়ে আসলেও বাংলাদেশেও ১৯৭৪ সাল থেকে দেশে দিবসটি পালন করে আসছে। এরই ধারাবাহিকতায় এবারও নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদফতর কেন্দ্রীয়ভাবে দিবসটি পালন করবে। এছাড়াও বাংলাদেশ নার্সেস অ্যাসোসিয়েশন, সোসাইটি ফর নার্সেস সেফটি অ্যান্ড রাইটসসহ নার্সদের অন্যান্য সংগঠনও দিবসটি উপলক্ষে শোভাযাত্রাসহ নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে।