অনলাইন সাবমিশনের বিষয়টিতে গুরুত্বপূর্ণ আখ্যায়িত করে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, মনোনয়নপত্র জমা দিতে গিয়ে যে শো-ডাউন, এটা আমাদের সংস্কৃতিতে পরিণত হয়েছে। এটা করতে গিয়ে আচরণবিধি ভঙ্গ হতে পারে। অনেক সময় সংঘাতও হতে পারে। এটাকে সহজ করা হয়েছে।
আজ রোববার (১২ নভেম্বর) নির্বাচন ভবনে রিটার্নিং অফিসারে কাছে প্রচলিত পদ্ধতিতে সরাসরি মনোনয়নপত্র জমার পাশাপাশি ‘অনলাইনে মনোনয়ন জমা’ ও ‘স্মার্ট নির্বাচনি ব্যবস্থাপনা’ অ্যাপ উদ্বোধন করেন সিইসি।
অনুষ্ঠানে নিবন্ধিত বিভিন্ন দলের উপস্থিত প্রতিনিধিদের উদ্দেশে সিইসি জানান, অনলাইন মনোনয়নপত্র জমা সব প্রার্থী ও রাজনৈতিক দলের প্রার্থীদের জন্য। আর স্মার্ট ইলেকশন অ্যাপ সাধারণ মানুষের জন্য। এটা ব্যবহারে ব্যাপক প্রচারের পাশাপাশি সবাইকে উদ্বুদ্ধ করতে হবে।
এ সময় সিইসি বলেন, প্রযুক্তির যে পরিবর্তন ৫০ থেকে ৬০ বছরে যা হয়েছে; এটা অবিস্মরণীয়। প্রযুক্তির সঙ্গে নিজেকে মেলাতে যদি না পারি, তবে পিছিয়ে যাবো। ৃ অনলাইনে সাবমিশন সিস্টেম ব্যবহার খুবই সহজ।পৃথিবী এগিয়ে যাচ্ছে প্রযুক্তির মাধ্যমে আমাদেরও এগিয়ে যেতে হবে। এটা অনেনক আধুনিক হবে।
অনলাইনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার গুরুত্ব তুলে ধরে তিনি বলেন, মনোনয়ন সাবমিশন করতে গিয়ে শো-ডাউন করা হয়। এই শো-ডাউন কালচার বা সংস্কৃতিতে পরিণত হয়েছে। যদিও সংস্কৃতি কিন্তু এখানে সংকটও হয়ে থাকে। এই সংকটে নির্বাচনের আচরণ বিধিমালা ভঙ্গ হতে পারে। অনেক সময় সংঘাতও হতে পারে। মনোনয়ন সাবমিশন করতে গিয়ে অনেকে বাধাপ্রাপ্তও হন, সাব মিশন করার পর চাপ প্রয়োগ করা হয় নমিনেশন প্রত্যাহারের। এই যে অনাচারগুলো হয়, কিন্তু অনলাইন সিস্টেমের অনাচারগুলো কমে আসতে পারে। অনলাইন সাবমিশনের ফলে পুরো নির্বাচনি ব্যবস্থাপনা আরও সহজ ও পরিশুদ্ধ হতে পারে।
অনলাইন ভোটিং প্রসঙ্গে সিইসি জানান, এখনও ঘরে বসে ভোট দেওয়ার ব্যবস্থা পৃথিবীর কোথাও চালু হয়নি। তবে বর্তমানে ভারত ঘরে বসে মোবাইলের মাধ্যমে অনলাইনে ভোটিং চেষ্টা করছে। তারা সফল হলে আমরাও প্রবর্তন করতে পারবো। তবে কবে চালু হবে, সেই নিশ্চিয়তা এখন দিতে পারছি না।
নির্বাচন কমিশনার (ইসি) মো. আনিছুর রহমান বলেন, আমাদের সিস্টেম ম্যানেজার অ্যাপস নিয়ে বিস্তারিত বলেছেন। এই অ্যাপসের মাধ্যমে অনলাইনে মনোনয়ন জমা দেওয়া যাবে। এর আগে সশরীরে মনোনয়ন জমা দিতে এসে অনেক লোকসমাগম হতো এবং অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার শিকার হতে হতো। এসব কারণেই আমরা একটা অনলাইন সিস্টেম চালু করেছি। এতদিন এটা অনলাইনে ট্রায়ালে ছিল। বেশ কয়েকটি উপনির্বাচনে এবং স্থানীয় সরকারের নির্বাচনে অনলাইনে মনোনয়ন জমা ট্রায়ালে ছিল। এর পাশাপাশি ‘স্মার্ট ইলেকশন ম্যানেজমেন্ট’ এর ফলে কার ভোটার নম্বর কত, কোন কেন্দ্রে ভোট দিতে হবে এগুলোর আর দরকার হবে না। এই ‘স্মার্ট ইলেকশন ম্যানেজমেন্ট’-এ জন্মতারিখ ও মোবাইল নম্বর দিয়েই রেজিস্ট্রেশন করতে পারবেন। এই অ্যাপ অধিকতর জবাবদিহিতা এবং স্বচ্ছতার টুল হিসেবে ব্যবহার হবে। এই কমিশন দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই সবকিছু স্বচ্ছভাবে করে আসছে।
তিনি বলেন, আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারতেও এ রকম একটা আগে থেকেই ছিল। সেটা আমরা দেখেছি। এই অ্যাপে বেসরকারিভাবে নির্বাচিতদের নাম জানা যাবে। এই অ্যাপে প্রার্থী, সমর্থক ও ভোটাররা আগেভাগেই জানতে পারবেন। আগে আমরা এগুলো টেলিভিশনে দেখতাম। যেখানে সব প্রার্থীদের অবস্থা দেখা যেত না। কিন্তু এই অ্যাপে সঙ্গে সঙ্গেই সব আসনের জয়ী এবং ভোট পড়ার শতাংশের হার জানতে পারবে। এর ফলে নির্বাচন কমিশন অধিকতর স্বচ্ছ ও জবাবদিহিতার মুখোমুখি হবে। পাশাপাশি স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণেও নির্বাচন কমিশন এগিয়ে গেল।
ইসি আলমগীর বলেন, গত কমিশন অনলাইনে মনোনয়ন দাখিলের বিষয়টি আইনে অন্তর্ভুক্ত করেছিল। কিন্তু সেটা খুব একটা বাস্তবায়ন করতে পারেনি। সেটা আজ বাস্তবায়ন হলো, সেজন্য আমার খুব ভালো লাগছে। আর ‘স্মার্ট ইলেকশন ম্যানেজমেন্ট’ যেটা গত কয়েকটা নির্বাচনে আমরা ব্যবহার করেছিলাম। তা থেকে আমরা উদ্বুদ্ধ হয়েছি। সেখান থেকেই এটি করার জন্য বলা হয়েছিল এবং নির্বাচন কমিশন সেটা করেছে। এ জন্য আমি তাদের ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
তিনি বলেন, নির্বাচনে প্রার্থীর তথ্য নিয়ে অপপ্রচার হয়। তবে ভবিষ্যতে কোনো ভোটার যখন প্রার্থী সম্পর্কে জানতে চাইবেন তখন কিন্তু তারা ‘স্মার্ট ইলেকশন ম্যানেজমেন্ট’ অ্যাপে সব দেখতে পারবেন। এই অ্যাপে প্রার্থীর সব তথ্য-প্রমাণ থাকবে। অর্থাৎ অপপ্রচারগুলো যাচাই করে নেওয়া যাবে। সেই সঙ্গে নির্বাচনে ভোটের বিষয় নিয়ে মানুষের মধ্যে দ্বন্দ্ব থাকে, সেটাও দূর হবে।
নির্বাচন কমিশনার বেগম রাশেদা সুলতানা বলেন, আমরা জানি এবং মানি, আমরা চাই বা না চাই, আমাদের প্রত্যেকের জীবন এখন প্রযুক্তির ওপর নির্ভরশীল। প্রযুক্তিকে আমরা অস্বীকার করতে পারি না। আমরা যখন এখানে কমিশনার হিসেবে যোগ দিই, তারপর থেকে যতগুলো ইলেকশন হয়েছে প্রায় সবগুলোতেই মনোনয়ন সাবমিশনের দিন থেকে আচরণবিধি ভঙ্গটা শুরু হয়ে যায়। মনোনয়ন সাবমিশন করতে এসে বিভিন্ন শোডাউন করে। কিন্তু আইনে বলা আছে, মনোনয়ন জমার সময় শোডাউন করা যাবে না। আমরা বিশ্বাস করি, এই অ্যাপের ফলে ভোট অনেক স্বচ্ছ ও জবাবদিহিতামূলক হবে এবং সাধারণ জনগণ এটাকে খুব ভালোভাবে নেবে।
নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার আহসান হাবিব খান (অব.) বলেন, আমরা অতীতে দেখেছি যে, প্রথমদিনেই মনোনয়ন সাবমিশন করতে আসে তখন কিন্তু আমাদের সম্মানিত প্রার্থীরা শত শত মোটরসাইকেল নিয়ে আসেন। এতে তাদের শক্তি প্রদর্শিত হতো। তারা প্রথম দিনেই নির্বাচনী আচরণবিধি ভঙ্গ করলেন। এই অ্যাপ দুটি বিশেষ পদ্ধতি, যেটা তাদের আচরণবিধি ভঙ্গ করতে দেবে না। এ ছাড়া আমাদের সমাজে দেখা যায়, অনেকে মনোনয়নপত্র জমা দিতে গেলে বাধা দেওয়া হয় বা মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করতে বল প্রয়োগ করা হয়। এই অ্যাপের ফলে আর কেউ এ রকম সুযোগ পাবে না।