গতবার এই কুমিল্লার কাছে হেরেই স্বপ্নালু সফরের মাঝে হোঁচট খেয়ে শিরোপা খোঁয়াতে হয়েছিল সিলেটকে। এবার শিরোপাতো দূরে থাক সিলেট নেই প্লে অফের দৌড়ে। নিজেদের আগের ম্যাচে বরিশালের কাছে হেরে শেষ হয়েছে সেই সম্ভাবনা। তার পর আজকের এই দুর্ধর্ষ জয় সিলেট শিবিরে আনন্দের বাতাস বয়ে আনলেও তাতে জড়ানো আক্ষেপের করুণ সুর। গ্রুপপর্বের দ্বিতীয়বারের দেখায় কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানসকে সিলেট স্ট্রাইকার্স হারিয়েছে ১২ রানে।
এবার প্রথম দেখায় সিলেট হেরেছিল ৫২ রানের ব্যবধানে। আজকের ম্যাচে আগে ব্যাট করতে নেমে কুমিল্লাকে ১৭৮ রানের লক্ষ্য দেয় সিলেট। চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে টস জিতে প্রথমে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন সিলেটের অধিনায়ক মোহাম্মদ মিঠুন। দুই ম্যাচের জন্য বিপিএলে যোগ দেওয়া কেনার লুইসের ব্যাটে ভর করে দল শুরুটাও পেয়েছিল ভালো। তবে ২টি করে চার-ছক্কায় ২৫ বলে ৩৩ রান করে লুইস বিদায় নেন। পরে জাকির হাসান ১৭ বলে ১৮ ও নাজমুল হোসেন শান্ত ১৮ বলে ১২ রান করে সাজঘরে ফিরলে চাপ বাড়ে সিলেটের। ইয়াসির আলী রাব্বি সুবিধা করতে পারেননি। ৫ বলে করেন ২ রান। তবে পঞ্চম উইকেটে দলের হাল ধরেন বেনি হাওয়েল ও মোহাম্মদ মিঠুন। ২০ বলে ২৮ রান করে অধিনায়ক মিঠুন বিদায় নিলেও হাওয়েল তুলে নেন অর্ধশতক। তার ব্যাটে ভর করেই মূলত জয়ের লড়াই করার মতো পুঁজি পায় সিলেট।
শেষ পর্যন্ত নির্ধারিত ২০ ওভারে ৫ উইকেট হারিয়ে ১৭৭ রানের বড় পুঁজি পায় সিলেট। হাওয়েল ৩১ বলে ২০০ স্ট্রাইক রেটে ৬২ রান করে থেকে যান অপরাজিত, হাঁকান ৬টি চার ও ৪টি ছক্কা। কুমিল্লার পক্ষে সুনিল নারাইন ও রিশাদ হোসেন দুটি করে উইকেট শিকার করেন।
জবাবে টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারে নিজের সেরা ইনিংস উপহার দিয়ে দলকে একাই টেনে নিয়ে যাচ্ছিলেন অধিনায়ক লিটন দাস। তাকে সঙ্গ দিতে পারেননি আর কেউ। একাদশে সুযোগ পেয়ে সেটা কাজে লাগাতে ব্যর্থ হন ইমরুল কায়েস। ৫ বলে ৩ রান করে ফেরেন তিনি। জ্বলে ওঠেনি তাওহীদ হৃদয়ের ব্যাট। ১৫ বলে করেছেন ১৭ রান। উল্টো গুরুত্বপূর্ণ সময়ে থিতু হওয়ার চেষ্টায় বল নষ্ট করেন জনসন চার্লস ও মইন আলি। চার্লস ২১ বরে ১২ ও মইন ৫ বল খেলে রানের খাতা খোলার আগেই বিদায় নেন।
এই সবের ভীড়ে একাই উজ্জ্বল ছিলেন লিটন দাস। জনসন চার্লসের সঙ্গে গড়া ৭৯ রানের জুটির ৬০ রানই আসে তার ব্যাট থেকে। শেষ দিকে আন্দ্রে রাসেলের সঙ্গে ১৫ বলে ২৬ রানের কার্যকরী জুটিতে বৈতরণী পারের আশা দেখছিল কুমিল্লা। শেষ ওভারে ২৫ রানের সমীকরণের সামনে প্রথম বলেই লিটন ফিরে গেলে সে আশায় বাধ নামে। ৫৮ বলে ক্যারিয়ারসেরা ৮৫ রানের ইনিংস খেলেন লিটন। ৭টি চারের সঙ্গে হাঁকান ৩টি ছক্কা। জাকের আলি নেমে প্রথম বলে ছক্কা হাঁকিয়ে রাসেলকে স্ট্রাইকে নিয়ে আসেন। তবে রাসেল পারেননি ৩ বলে ১৭ রান তুলতে। উল্টো ১৪ বলে ২৩ রানে থাকাকালীন ইনিংসের শেষ বলে বাউন্ডারিতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন তিনি। তানজিম হাসান সাকিব শিকার করেন ৩ উইকেট। ১টি করে উইকেট পান সামিত প্যাটেল, শফিকুল ইসলাম ও বেনি হাওয়েল।
আক্ষেপে মোড়ানো এ জয় সিলেটকে অপ্রয়োজনীয় দুটি পয়েন্ট এনে দিলেও এ হার কুমিল্লার জন্য হতে পারে সেরা দুইয়ে থাকার ক্ষেত্রে শঙ্কার বিষয়। ১০ ম্যাচ শেষে ১৪ পয়েন্ট তাদের। বাকি দুটো ম্যাচ টেবিলের এক ও তিনে থাকা রংপুর ও বরিশালের সঙ্গে। এই দুটো দলই আবার আজ মুখোমুখি হবে দিনের দ্বিতীয় ম্যাচে। কুমিল্লার হারে রংপুরের শীর্ষস্থানে থাকা বেশ সহজ হয়ে গেল।
অন্যদিকে বরিশালের কাছে আগের ম্যাচ না হারলে শেষ চারে থাকার দৌড়ে এ জয় অনেকখানি এগিয়ে দিত সিলেটকে। আক্ষেপ নিয়েই ঢাকায় ফিরে শেষ ম্যাচে খুলনা টাইগার্সের বিপক্ষে মাঠে নামবে সিলেট।