বয়স তার ৪০ ছুঁই ছুঁই। দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ে ভরসার নাম ছিলেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। ১৭ বছরের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার এখন গোধূলি লগ্নে। আর এমন সময়ে হারাতে বসেছে তার ব্যাটের ধার। সবশেষে চার ম্যাচে তিনি করেছেন মাত্র ৬ রান। প্রতিটি ইনিংসে তার সংগ্রহ ০, ১, ২ এবং ৩ রান। যেন গাছ থেকে ঝরা পাতার মতো। টেস্ট ক্রিকেটকে বিদায় জানিয়েছেন বছর তিন আগে। সম্প্রতি ভারত সিরিজে গিয়ে টি-টোয়েন্টি থেকেও নিয়েছেন অবসর। তবে ওয়ানডেকেও বিদায় বলার সময় চলে এসেছে তার!
রিয়াদের ব্যাটে রান খরা চলছে সেই মার্চ মাস থেকেই। চট্টগ্রামে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে ৩৭ রান করেছিলেন। সেই শেষ। তারপর থেকেই তার ব্যাট আর হাসছে না। এরপর থেকে আজ পর্যন্ত খেলে ফেলেছেন আরও ৪ ইনিংস। কিন্তু কোনোটিতে নেই বলার মতো কোনো স্কোর। তবে নিচের দিক থেকে ক্রমশই উন্নতি হচ্ছে তার। শ্রীলঙ্কা সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে ০, তৃতীয়টিতে ১ রান করেন।
সেই থেকে বাংলাদেশ টানা ৮ মাস কোনো ওয়ানডে খেলেনি। দীর্ঘ বিরতির পর যখন আবারও এই সংস্করণে ফিরেছে তারা, তখনও ব্যাটে ধার বাড়াতে পারেননি রিয়াদ।
আফগানিস্তান সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে শারজায় রশিদ খানের স্পিনে দৃষ্টিকটুভাবে আউট হয়েছিলেন তিনি। অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান সেদিন বাজে শট খেলতে গিয়ে আউট হয়েছিলেন। আজ দ্বিতীয় ওয়ানডেতে অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত নানগেয়ালিয়া খারোটের বলে ক্রিজ ছেড়ে ছক্কা মারার চেষ্টায় লং অফে ক্যাচ দিয়ে আউট হন। একই ওভারে একই শট খেলে ছক্কা মারতে গিয়েও রিয়াদও লং অফে ক্যাচ দেন। ১৭ বছরের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিজ্ঞ ক্রিকেটারের এমন সিদ্ধান্ত ছিল দৃষ্টিকটু।
কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে কেন রিয়াদের ব্যাট হাসছে না? মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের রান না আসার পিছনে কিছু কারণ থাকতে পারে বলে মনে করেন ক্রিকেট বিশ্লেষকদের কেউ কেউ। যার মধ্যে অন্যতম বয়স এবং ফিটনেস। ৩৮ বছর বয়সে ফিটনেসের সমস্যা তার প্রতিক্রিয়া, স্ট্যামিনা, এবং টাইমিংয়ে প্রভাব ফেলতে পারে, যা ধারাবাহিক পারফরম্যান্সের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়া প্রযুক্তির সাহায্যে প্রতিপক্ষ তার ব্যাটিং কৌশলের দুর্বলতা চিহ্নিত করতে পারে। যেকোনো ব্যাটসম্যানের জন্য বিশেষ কিছু বল খেলা কঠিন। এটাও একটা কারণ হতে পারে। আরও একটি কারণ হতে পারে মানসিক চাপ। ব্যাট না হাসাতে রান হচ্ছে কম। যে কারণে মানসিক চাপ বাড়তে পারে, যা তার স্বাভাবিক খেলায় প্রভাব ফেলছে।
এই কারণগুলো সমাধান করলে মাহমুদউল্লাহ তার ফর্ম ফিরে পেতে পারেন। তবে বয়স যার ৪০-এর ঘরে তার আবার এসব সমাধানের তাড়নারই বা কি আছে? অনেকেরই দাবি, অভিজ্ঞদের এখন বিদায় নিয়ে তরুণদের জায়গা করে দেওয়া উচিৎ। তবে রিয়াদের চোখে এখন স্বপ্ন চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে খেলা।
অভিজ্ঞতার পাহাড়সম ভার বইতে থাকা মাহমুদউল্লাহ হয়তো আজ নিজেই কিছুটা অবাক, কেন তার ব্যাটে আর আসছে না সুরের মূর্ছনা। এই ব্যাটিং স্তব্ধতা ভেঙে আবারও তার ব্যাটের ঝংকার শুনতে অধীর হয়ে অপেক্ষায় আছেন তার ভক্তরা। হয়তো শীঘ্রই অভিজ্ঞতার মুকুটকে নতুন করে দীপ্ত করবেন, যেমন সূর্যের আড়ালে থাকে চাঁদ, অপেক্ষা করে প্রভাতের আলোতে জেগে ওঠার। কিন্তু সেই অপেক্ষার পালা ফুরোবে কবে?