কানপুর টেস্ট চলাকালে ভারতীয় সমর্থকদের মারধরের শিকার হন বাংলাদেশ সমর্থক ‘টাইগার রবি’। এর ফলে তাকে হাসপাতালে যেতে পর্যন্ত হয়েছে। কিন্তু ভারতীয় প্রশাসন রবির এ দাবিকে উড়িয়ে দিয়ে জানায়, আঘাত করার মতো কোনো প্রমাণ তারা পায়নি। তবে এর কয়েকঘণ্টা পরই হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে লাইভে আসেন রবি। সেখানে তিনি ভারতীয় প্রশাসনের দাবিকে উড়িয়ে দিয়েছেন। সেই সঙ্গে বর্ণনা দিয়েছেন কিভাবে তাকে মারপিট করে ভারতীয় সমর্থকরা। গতকাল শুক্রবার (২৭ সেপ্টেম্বর) নিজের ফেসবুক পেজে হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে লাইভে আসেন ‘টাইগার রবি’। সেখানে তিনি বলেন, প্রিয় বন্ধুরা, আপনারা দেখেছেন মিডিয়া ইতোমধ্যে আমার নামে মিথ্যা প্রচারণা করেছে। আমি কাল রাত থেকে ঘুমাইনি। মাঠে গিয়েছিলাম। দুই তলা থেকে আমি ৬ নম্বর গেটের পিচের নিচে আসি। তখন বৃষ্টি শুরু হয়েছিল। সেই সময় পিঠে দুই তিনটা ঘুষি মারে। বিশ্বাস না হলে ডেইলি ক্রিকেটের মিলন ভাইয়ের সঙ্গে কথা বলে দেখতে পারেন, উনি ছিলেন। পরে আমার কাছে (ভারতীয় ওই সমর্থক) ক্ষমা চায়। এরপর হাসপাতালে থাকলেও বর্তমানে নিজেকে সুস্থ দাবি করে রবি দেশবাসীর কাছে দোয়া চেয়ে তিনি জানান, আমাকে পেছন থেকে আঘাত করা হয়। পরে আমি অসুস্থ হয়ে পড়ি। এখন সুস্থ আছি। আপনাদের জন্য দোয়া করি। আমার জন্যও দোয়া করবেন। এদিকে ওই লাইভের পর নিজের পেজে আরো একটি পোস্ট করেন ‘টাইগার রবি’। সেখানে তিনি লিখেন, আমার আল্লাহর কাছে সবকিছু ছেড়ে দিলাম। বিচারটাও আমার রবের হাতে ছেড়ে দিলাম। আমার আল্লাহ নিশ্চয়ই উপর থেকে দেখেছেন আজ আমার সঙ্গে কী ঘটেছিল। তিনি আরো লিখেন, আমি যাওয়ার আগে একটা কথা বলে যাচ্ছি, আমি আমার মৃত্যুশয্যায় অসুস্থ মায়ের কসম কেটে বলছি, আমি বিন্দু পরিমাণও মিথ্যার আশ্রয় নেইনি। আমাকে আঘাত করা হয়েছে, এটিই সত্য। এটিই আজ ঘটেছিল। দুনিয়া উল্টে গেলেও এই সত্যকে আমি অস্বীকার করতে পারব না। কারণ, আমি আমার মায়ের কসম কেটে আপনাদের থেকে যাওয়ার আগে সত্যটা বুক ফুলিয়ে বলে গেলাম। ভারতের প্রশাসন ও আমার দেশের সাংবাদিক ভাইদের কাছে আমি হেরে গেছি উল্লেখ করে ‘টাইগার রবি’ আরো লেখেন, ভারতীয় প্রশাসন তাদের দেশের সম্মান বাঁচাতে ঠিক যেভাবে আমাকে উপস্থাপন করেছে, আমার দেশের সাংবাদিক ভাইরাও আমার কথা না শুনে, সত্যটা না খুঁজেই আমাকে কাঠগড়ায় দাঁড়করিয়ে দিয়েছেন। আপনাদের কাছে আমি কৃতজ্ঞ প্রিয় গণমাধ্যমকর্মী ভাইয়েরা। আপনারাই আমাকে দেশের মানুষের কাছে পরিচিত করেছিলেন, আর আপনারাই মিথ্যা অপবাদ দিয়ে আমার সব কেড়ে নিলেন। ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা আপনাদের প্রতি। কোন একদিন হয়তোবা সত্যটা নিজেরাই উপলব্ধি করবেন! সেদিন হয়তো সামান্য হলেও খারাপ লাগবে এই নগণ্য রবির জন্য। আমি চলে যাচ্ছি উল্লেখ করে টাইগার রবি লিখেন, আর হয়তো কখনো টাইগার রবিকে বাঘের বেশে দেখবেন না। আমার সঙ্গে যা হয়েছে এমনটা আমার শত্রুর সঙ্গেও জীবনে না ঘটুক। হ্যাঁ, এটা সত্য। আমি অশিক্ষিত, আমার শিক্ষার অভাব ছিল, আমি মানুষের সঙ্গে শিক্ষিত মানুষদের মতো গুছিয়ে সুন্দরভাবে কথা বলতে পারতাম না। আমার কথায় অনেক সময় অনেকে কষ্ট পেয়ে যেতেন। আর তাই অধিকাংশ মানুষের কাছে আমি খারাপ, অসভ্য ছিলাম। হ্যাঁ ভাই, আমি হয়তো শিক্ষার অভাব থাকায় আপনাদের মতো সভ্য ছিলাম না। তাই, আজকের পুরো ঘটনাটা আপনারা আমার ‘অতিত দিয়ে বিচার করে’ আমাকে ভুল বুঝলেন! আর দেশের মানুষের কাছে আপনাদের মিডিয়ার ক্ষমতা দিয়ে একনিমিষেই আমাকে ভেতর থেকে ধ্বংস করে দিলেন। ধন্যবাদ আপনাদের। তিনি আরো লেখেন, আমি হয়তো ব্যক্তি হিসেবে আপনাদের কাছে খারাপ! কিন্তু, বাংলাদেশ ক্রিকেট, বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের ও আমার দেশের পতাকা এবং দেশের প্রতি আমার ভালোবাসা আর আবেগে একবিন্দুও কমতি ছিল না। আমি আমার মাকে যেমন ভালোবাসি, বাংলাদেশ ক্রিকেট আর মিরপুর স্টেডিয়ামটাও আমার দুনিয়া ছিল। আজ আমাকে পুরো দেশের মানুষের কাছে মিথ্যাবাদী বানিয়ে দিয়েছেন উল্লেখ করে ‘টাইগার রবি’ লেখেন, যদি সত্যিই আমি মিথ্যাবাদী হতাম তাহলে এতক্ষণে আমার ক্রিকেটের প্রতি ভালোবাসার জন্য হলেও সবার কাছে ক্ষমা চেয়ে আবার ক্রিকেটেই ফিরে আসতাম। কিন্তু, আমি কোন অন্যায় করিনি। আমি মাইর খেয়েছি, আমি ব্যথাও পেয়েছি এবং এখনো অব্দি যা যা বলেছি সব সত্য। আমার আল্লাহ সাক্ষী, উনি তো সব দেখেছেন, বিচারটাও তিনিই করবেন। কিন্তু, আমার দেশের মানুষ আমার এই আঘাতের চেয়ে তীব্র আঘাত দিয়েছে, আমাকে ভুল বুঝে ও মিথ্যা অপবাদ দিয়ে। সবকিছুর জন্য ধন্যবাদ সবাইকে। আমাকে আর সহ্য করতে হবে না আপনাদের। বাংলাদেশ ক্রিকেট ও ক্রিকেটারদের জন্য দোয়া ও শুভকামনা জানিয়ে সবশেষে ‘টাইগার রবি’ লিখেন, টাইগার বেশে আর হয়তো কখনো দেখা হবে না। ভালোবাসার ক্রিকেট থেকে দূরে চলে যাচ্ছি। যদি কখনো নিজের মনকে আটকে রাখতে না পারি, তাহলে সাধারণ একজন দর্শক হয়ে কোনো এক গ্যালারিতে এসে বসে পড়ব রবি হয়েই।