অজিদের বিপক্ষে হেরেও চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির দুয়ারে বাংলাদেশ

শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে সেরা আটের সমীকরণ আগেই সহজ করেছিল বাংলাদেশ। আজ অস্ট্রেলিয়াকে হারাতে পারলে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে খেলা নিশ্চিত হতো। তা করতে পারেনি নাজমুল হোসেন শান্তর দল। তবে ৮ উইকেটের হারের পরও টাইগারদের সামনে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির পথ খোলা থাকছে। আগামীকাল ভারতের বিপক্ষে নেদারল্যান্ডস হারলে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে কোয়ালিফাই করবে বাংলাদেশ।

১১ নভেম্বর (শনিবার) পুনেতে টস হেরে ব্যাট করতে নেমে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৮ উইকেট হারিয়ে ৩০৬ রান তুলে বাংলাদেশ। দলের হয়ে সর্বোচ্চ ৭৪ রান এসেছে তাওহীদ হৃদয়ের ব্যাট থেকে। তাছাড়া ৪৫ রান করেন শান্ত। অজিদের হয়ে ৩২ রানে ২ উইকেট শিকার করেন অ্যাডাম জাম্পা।

জবাবে খেলতে নেমে ৪৪ ওভার ৩ বলে ২ উইকেট হারিয়ে জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায় অস্ট্রেলিয়া। অজিদের হয়ে অপরাজিত ১৭৭ রানের ইনিংস খেলেছেন মার্শ। বাংলাদেশের হয়ে একটি করে উইকেট শিকার করেছেন মুস্তাফিজ ও তাসকিন।

বড় লক্ষ্য তাড়ায় শুরুতেই হোঁচট খায় অস্ট্রেলিয়া। ইনিংসের তৃতীয় ওভারে ট্রাভিস হেডকে ফেরান তাসকিন আহমেদ। ব্যাক অব লেন্থ থেকে লাফিয়ে উঠা বল স্টাম্পে টেনে এনে বোল্ড হয়েছেন হেড। ১০ রান করে এই ওপেনার ফেরায় ভাঙে ১২ রানের উদ্বোধনী জুটি।

Taskin Ahmed struck in the third over, Australia vs Bangladesh, World Cup, Pune, November 11, 2023

শুরুর ধাক্কা পাকা হাতে সামলেছেন ডেভিড ওয়ার্নার ও মিচেল মার্শ। দুই অভিজ্ঞ ব্যাটার মিলে দ্বিতীয় উইকেটে যোগ করেন ১১৬ বলে ১২০ রান। তাদের দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নেয় অজিরা। ২৩তম ওভারে ৫৩ রান করা ওয়ার্নারকে ফিরিয়ে এই জুটি ভাঙেন মুস্তাফিজ।

অস্ট্রেলিয়ার ইনিংসে বাংলাদেশের সাফল্য বলতে এই দুটোই। বাকি গল্পটা শুধুই অজিদের আধিপত্যের। বাড়তি এক স্পিনার নিয়ে মাঠে নামা বাংলাদেশের কোনো মন্ত্রই এদিন মার্শের সামনে টিকেনি! মিরাজ-নাসুমদের রীতিমতো কচুকাটা করছেন এই টপ অর্ডার ব্যাটার। রান তাড়ায় ব্যাক্তিগত সেঞ্চুরিতে পৌঁছেছেন মাত্র ৮৭ বলে। শেষ পর্যন্ত অপরাজিত থেকেছেন ১৩২ বলে ১৭৭ রান করে।

মার্শকে অপর প্রান্ত থেকে যোগ্য সঙ্গ দিয়েছেন স্টিভেন স্মিথ। ৬৪ বলে অপরাজিত ৬৩ রান করে মাঠ ছেড়েছেন এই অভিজ্ঞ ব্যাটার। চতুর্থ উইকেটে তাদের অবিচ্ছিন্ন ১৭৫ রানের জুটিতে সহজেই জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায় অস্ট্রেলিয়া।

Mustafizur Rahman wore a dejected look as Mitchell Marsh and Steven Smith piled on the runs, Australia vs Bangladesh, Men's ODI World Cup, Pune, November 11, 2023

এর আগে ব্যাটিংয়ে নেমে দেখে-শুনে শুরু করেছিলেন বাংলাদেশের দুই ওপেনার তামিম-লিটন। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আসেন তারা। দুই ওপেনারের দারুণ ব্যাটিংয়ে প্রথম পাওয়ার প্লেতে কোনো উইকেট না হারিয়ে ৬২ রান তুলে বাংলাদেশ।

৩৬ রান করে তামিম ফেরায় ভাঙে ৭৬ রানের উদ্বোধনী জুটি। ১২তম ওভারের দ্বিতীয় বলটি শর্ট লেন্থে করেছিলেন শন অ্যাবট। শরীর বরাবর আসা বাউন্সার লাফিয়ে উঠে ডিফেন্স করতে যান তামিম, ব্যাটের উপরের দিকে লেগে ফিরতি ক্যাচ যায় বোলারের কাছে। তাতে সম্ভাবনাময় ইনিংসের সমাপ্তি ঘটে সফট ডিসমিসালে।

তামিমের বিদায় রান রেটে কোনো প্রভাব ফেলেনি। কারণ উইকেটে এসেই শট খেলতে শুরু করেন নাজমুল হোসেন শান্ত। তাতে দলের রানের গতিও বাড়ে। প্রথম ৫০ রান করতে লেগেছিল ৫০ বল, পরের ৫০ রান এসেছে ৪২ বলে, সবমিলিয়ে ৯২ বলে তিন অঙ্ক ছুঁয়েছে বাংলাদেশ।

শুরুটা ভালো হলেও আরো একবার হঠাৎ ছন্দ পতন লিটনের। সবলীল ব্যাটিংয়ে ফিফটি পথে এগোচ্ছিলেন। কিন্তু ১৭তম ওভারে অ্যাডাম জাম্পাকে উড়িয়ে মারতে গেলেন। একজন সেট ব্যাটার হয়ে এভাবে তেড়ে-ফুড়ে খেলতে যাওয়াটা রীতিমতো আত্মহত্যার শামিল। সেটাই করলেন লিটন। লং অনে ল্যাবুশেনের হাতে ধরা পড়েন এই ওপেনার। সাজঘরে ফেরার আগে লিটনের ব্যাট থেকে এসেছে ৪৫ বলে ৩৬ রান।

লিটনের বিদায়ের পর চারে ব্যাট করতে আসেন তাওহীদ হৃদয়। তৃতীয় উইকেটে হৃদয়ের সঙ্গে শান্তর রসায়নটা বেশ ভালোই জমেছিল। দুই প্রান্তেই আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে দলের রানের চাকাও দ্রুত ঘুরছিল। তবে এই সুখ বেশিক্ষণ সইলো না! ২৮তম ওভারের পঞ্চম বলটি লেগ স্টাম্পের ওপর করেছিলেন অ্যাবট, সেখানে জায়গা করে পেছনের পায়ে ভর দিয়ে স্কয়ার লেগে ঠেলে দেন শান্ত— এক রান অনায়াসে নেওয়ার পর খানিকটা ভেবে দ্বিতীয় রানের জন্য দৌড় শুরু করেন, কিন্তু সময়মতো ক্রিজে পৌঁছাতে পারেননি। তাতে হাফ সেঞ্চুরি না পাওয়ার আক্ষেপ নিয়ে সাজঘরে ফিরতে হয়েছে শান্তকে। তার ব্যাট থেকে এসেছে ৪৫ রান।

শান্তর পর রান আউটে কাটা পড়েন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদও। আক্রমণাত্মক ব্যাটিংয়ে শুরু থেকেই আত্মবিশ্বাসী ছিলেন তিনি। ২৮ বলে ইনিংসে ১ চারের সঙ্গে ছক্কা হাঁকিয়েছেন ৩টি। কিন্তু ৩৬তম ওভারে স্লো পুশ করে দ্রুত রান নিতে গিয়ে আউট হয়েছেন এই অভিজ্ঞ ব্যাটার। সাজঘরে ফেরার আগে তার ব্যাট থেকে এসেছে ৩২ রান।

আসরটা খুব একটা ভালো যায়নি হৃদয়ের। প্রত্যাশার সিকি ভাগও পূরণ করতে পারেননি এই মিডল অর্ডার ব্যাটার। তবে শেষ ম্যাচে এসে কিছুটা হলেও নিজের প্রতিভার প্রতি সুবিচার করলেন তিনি। আক্রমণাত্মক ব্যাটিংয়ে ৬১ বলে স্পর্শ করলেন হাফ সেঞ্চুরি। শেষ পর্যন্ত ৭৯ বলে ৭৪ রান করে আউট হয়েছেন তিনি।

অস্ট্রেলিয়াকে ৩০৭ রানের লক্ষ্য দিলো বাংলাদেশ

টপ অর্ডার ব্যাটারদের সবাই রান পেলেও আজ সুবিধা করতে পারেননি মুশফিক। উইকেটে এসে মানিয়ে নিতে খানিকটা সময় লেগেছে তার। তবে খানিকটা সময় নিয়ে দ্রুত রান তোলায় মনযোগ বাড়াতে চেয়েছিলেন তিনি। জাম্পাকে স্লগ সুইপে ছক্কাও হাঁকিয়েছিলেন। তবে রানের গতি বাড়াতে গিয়েই যেন বিপদ ডেকে আনলেন। এগিয়ে এসে মিড উইকেটের উপর দিয়ে মারতে গিয়ে ধরা পড়েন প্যাট কামিন্সের হাতে। সাজঘরে ফেরার আগে তার ব্যাট থেকে এসেছে ২৪ বলে ২১ রান।

মুশফিক ফেরার পর দারুণ ব্যাটিং করেছেন মিরাজ। সাজঘরে ফেরার আগে ২০ বলে করেছেন ২৯ রান। তিনি ব্যাটিং করেছেন প্রায় ১৪৬ স্ট্রাইকরেটে। তবে মিরাজ ফেরার পর আর কেউই তেমন কিছু করতে পারেননি। মাহেদি-নাসুমরা চেষ্টা করেও রানের গতি বাড়াতে পারেননি। ফিনিশিংটা আরেকটু ভালো হলে আরো ২০-৩০ রান বেশি হতে পারতো।