স্বজন, এপিএস ও ব্যবসায়িক অংশীদারের নামে কিনে অঢেল সম্পদের মালিক হয়েছেন নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সাবেক প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী। তাঁর এমন বেনামে অঢেল সম্পদের তথ্য পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) গোয়েন্দা ইউনিট ও দিনাজপুর জেলা কার্যালয়।
সূত্র জানায়, তিনি দিনাজপুর জেলা এবং রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় হাজার কোটি টাকার সম্পদের পাহাড় গড়েছেন। ক্ষমতার প্রভাবে নিয়োগ বাণিজ্য, টেন্ডারবাজি এবং দলীয় পদ দেওয়ার নামে কামিয়েছেন এসব টাকা।এ ছাড়া বিভিন্ন ব্যাংক থেকে স্বজনদের নামে স্বল্প সুদে কৃষিঋণ নিয়ে গড়েছেন একের পর এক অটোরাইস মিল। জোহুরা অটোরাইস মিলের নেপথ্যে বিশাল বিনিয়োগ রয়েছে খালিদ মাহমুদ চৌধুরীর। পাচার করা টাকায় লন্ডনে একাধিক বাড়ি কিনেছেন মেয়ের নামে। রাজধানীতে ১৩টি ফ্ল্যাট এবং ৫ শতাংশ করে কয়েকটি প্লট রয়েছে।
প্রাথমিক অনুসন্ধানে দুদক জানতে পারে, প্রতিমন্ত্রী হাজার কোটি টাকা লন্ডনে পাচার করেছেন সহকারী একান্ত সচিব (এপিএস) বাশারের মালিকানায় নেওয়া এজেন্ট ব্যাংকিং শাখার মাধ্যমে। প্রতিমন্ত্রীর ছত্রছায়ায় বোচাগঞ্জ উপজেলার সীমান্ত এলাকায় ফেনসিডিল ও টাপেনটাডল নামের মাদক চোরাচালানের বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ করতেন উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক আশরাফ আলী তুহিন।
ঠাকুরগাঁয়ের পীরগঞ্জ উপজেলার আওয়ামী লীগের স্থানীয় কয়েকজন নেতা জানান, ৫ আগস্টের পর লাশের গাড়িতে করে উপজেলার বৈরচুনা ইউনিয়নে পৌঁছান। এর পর ভবানীপুরের সীমান্ত দিয়ে ভারতে পালিয়ে যান।
দুদক সূত্র জানায়, প্রতিমন্ত্রী দিনাজপুরের বোচাগঞ্জ উপজেলায় এপিএস বাশারের মাধ্যমে টেনা গ্রামে নামে-বেনামে ৩০০ বিঘা জমি কেনেন। এ ছাড়া কালুপীর বাজারের পাশে মসলাবাটি নামক স্থানে ১৫০ বিঘার ওপর পুকুরের সঙ্গে করেছেন খামারবাড়ি। কালুপীর বাজারে কয়েক কোটি টাকার জমি, দোকান ও গোডাউন করেছেন। পার্শ্ববর্তী উপজেলা পীরগঞ্জের ৫ নম্বর সৈয়দপুর ইউনিয়নে ৯০ বিঘা জমির ওপর আমবাগান, পীরগঞ্জ উপজেলায় কয়েক কোটি টাকা মূল্যের ৫৮ শতাংশ জমি, বোচাগঞ্জের সেতাবগঞ্জ বাজারে কয়েক কোটি টাকার ১ হাজার ৭৪১ শতাংশ জমি, বিরল উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রমাকান্তের মাধ্যমে স্থলবন্দরের পাশেই ৩৮৬ শতাংশ জমিসহ শত শত কোটি টাকার বালুবাণিজ্য রয়েছে। দিনাজপুর শহরে ৫টি প্লট রয়েছে। জেলার পুনর্ভবা নদী থেকে প্রতিমন্ত্রীর অবৈধ বালু উত্তোলন নিয়ন্ত্রণে ছিলেন রমাকান্ত। এ ছাড়া জোহুরা অটোরাইস মিলের মালিক আবদুল হান্নান তার একাধিক ম্যানেজারের নামে উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে শত শত বিঘা জমি কিনেছেন। ওইসব জমির কয়েক গুণ বেশি দাম দেখিয়ে বিভিন্ন ব্যাংকে বন্ধক রেখে খালিদ মাহমুদের প্রভাবে শত কোটি টাকার ঋণ নিয়েছেন আবদুল হান্নান। এ ছাড়া প্রতিমন্ত্রীর বেনামে ঢাকার লালমাটিয়া, আদাবর, শেখেরটেক, মোহাম্মদিয়া হাউজিং সোসাইটি, বাবর রোড ও হুমায়ুন রোডে রয়েছে ১৩টি ফ্ল্যাট এবং বছিলা ও ঢাকা উদ্যানে ৫ শতাংশ করে কয়েকটি প্লট।
গত ২ সেপ্টেম্বর সাবেক নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, তার স্ত্রী, সন্তান ও তাদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের নামের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট তলব করে বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থা বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)।