বনানীতে মাদক ব্যবসার মহাজন শহীদের খুঁটির জোর কোথায়?

হাবিব সরকার, ঢাকা:
রাজধানীর বনানী থানা পুলিশের সোর্স শহীদ। এছাড়া ১৯ নাম্বার ওয়ার্ড যুবলীগের সক্রিয় কর্মী। একদিকে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সখ্যতা অন্যদিকে রাজনৈতিক পরিচয়কে কাজে লাগিয়ে কড়াইল বস্তিতে করেছে অবাধে অবৈধ ভাবে গ্যাস, পানি, বিদ্যুৎ ও মাদক ব্যবসা। অভিযোগ রয়েছে, পুলিশের সাথে মিলে নিরীহ মানুষকে ফাঁসিয়ে করেছে ফিটিং বানিজ্য। গ্রেফতারের ভয় দেখিয়ে করেছে অবাধ চাঁদাবাজি। একসময়ের দিনমজুর অবৈধ টাকায় আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ বনে গেছে। টঙ্গীতে জমি কিনে গড়েছে বিলাস বহুল ভবন।
পুলিশের সোর্স হলেও মাদক ব্যবসায়ীদের সঙ্গে শহীদের গলায় গলায় পিরিত। কড়াইল বস্তিতে মাদক ব্যবসার মহাজন হিসেবে তার আলাদা পরিচয় রয়েছে। শহীদ যাদের দিয়ে মাদক ব্যবসা করায় তাদের তথ্য সে পুলিশকে দেয় না। যাদের সাথে তার মাদক ব্যবসার বনিবনা হয়না শুধুমাত্র তাদের তথ্য দিয়ে পুলিশকে ধরিয়ে দেয়। এছাড়া তার সাথে কেউ ব্যাক্তিগত বিরোধে জড়ালে তাদেরকেও মাদক দিয়ে ফাঁসিয়ে পুলিশে ধরিয়ে দেওয়ার ঘটনাও অহরহই ঘটেছে।
সবদিক ম্যানেজ করেই চলে শহীদ। কড়াইল বস্তিতে অধিপত্য ধরে রাখতে করেছেন যুবলীগের রাজনীতি। সে ১৯ নাম্বার ওয়ার্ড যুবলীগের একজন সক্রিয় সদস্য। যুবলীগের প্রতিটি কর্মসূচিতে তাকে দলবল নিয়ে উপস্থিত থাকতে দেখা যেত। চেষ্টা ছিল যুবলীগে বড় কোনো পদ পাওয়ার। দীর্ঘ অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে এসব তথ্য।
জানা যায়, ভুলভাল তথ্য দিয়ে প্রায়ই নিরীহ মানুষকে ফাঁসানোর কারণে ঝামেলায় পড়তে হতো শহীদকে। তখন তাকে এই ঝামেলা থেকে উদ্ধার করতে শরণাপন্ন হতেন যুবলীগ নেতাদের দুয়ারে। তারাই তাকে উদ্ধার করতেন। কড়াইল বস্তিতে গ্যাস, পানি, বিদ্যুৎ ও মাদক ব্যবসার ভাগ থানা পুলিশ ও যুবলীগ নেতাদের দিতেন।
ঢাকা-১৭ আসনের গত সংসদ নির্বাচনের সময় শহীদকে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রার্থী মোহাম্মদ এ আরাফাতের পক্ষে ব্যাপক প্রচারণা করতে দেখা যায়। এসময় বনানীর বেদে বস্তির চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী ফটিককে সঙ্গে নিয়ে নির্বাচনী প্রচারণা করেছে। নৌকার লিফলেট বিতরণ করেছে, মিছিল করেছে। এমনকি টিএন্ডটি আদর্শ উচ্চ বালক বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্রে থেকে নৌকায় ভোট দিতে ভোটারদের হুমকি-ধামকি দিয়েছে।
কড়াইল বস্তির বিএনপি নেতা রফিক কাজী জানান, সরকার পতনের আন্দোলনের সময় পুলিশের সোর্স শহীদ নির্বিচারে ছাত্রদের উপর হামলা করেছে। এছাড়া আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী ছাত্র ও বিএনপি নেতাদের বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে পুলিশ দিয়ে ধরিয়ে দিয়েছে। আন্দোলনকারীদের হুমকি ধামকি দিয়েছে। এর আগেও বিএনপি নেতাদের গ্রেফতারের ভয় দেখিয়ে চাঁদাবাজি করেছে। অনেক বিএনপি নেতাকে পুলিশে ধরিয়ে দিয়েছে।
বস্তিতে শহীদের প্রতিবেশী রাব্বানী বলেন, “শহীদ ছিল টোকাই পরে রাখাল। তিনবেলা ঠিকমতো খেতে পারতো না। এখন সে টঙ্গীতে জমি কিনে বিলাস বহুল বাড়ি করেছে। এতো টাকা পেল কোথায়? বুঝে নেন! বস্তিতে থাকাটা তার ভঙ্গিমা মাত্র। মানুষকে বোঝায় সে গরীব। এছাড়া বস্তিতে ঘর তুলে ভাড়াও তো পায়। তার ঘরে জুয়া খেলার আসর বসায়।”
অনুসন্ধান করে জানা যায়, গত ৫ই আগষ্ট সরকার পতনের পর থেকে আত্মগোপনে ছিলেন শহীদ। তার নিজস্ব লোক দিয়ে এলাকায় ছড়িয়ে দিয়েছিলেন তাকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। যেন প্রতিদ্বন্দ্বিরা তাকে খোঁজাখুঁজি না করেন। যেন ফিরে এলে আইনের বিচারে শাস্তি পেয়েছেন ভেবে সবাই ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখেন। তার কৌশল অবশ্য ভালোই কাজে লেগেছে। দীর্ঘদিন আত্মগোপনে থেকে আবার বনানীতে ফিরে এসেছে। মাদক ব্যবসায়ীদের সঙ্গেও নিয়মিত দেখা যাচ্ছে তাকে। পুলিশের সোর্সের কাজেও সক্রিয় হয়েছে।
জানা গেছে, আত্মগোপনে থাকা আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছে শহীদ। আওয়ামী নেতাকর্মীদের নামে রুজু হওয়া মামলা ও থানার অভিযানের তথ্য পাচার করছে। এছাড়া এলাকায় ঘুরে ঘুরে জামায়াত, বিএনপি নেতাদের কার্যক্রম নজরদারি করে আওয়ামী নেতাদের খবরাখবর দিচ্ছে। সোর্স শহীদের মতো আওয়ামী লীগের দোসররা মাঠে থেকে বর্তমান তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিরুদ্ধেও গভীর ষড়যন্ত্র করছে।
এলাকাবাসী মনে করেন, শহীদদের মতো অপরাধীদের আইনের আওতায় আনা না হলে দেশ ও জাতি দুইয়েই ক্ষতির মুখে পড়বে।