অপহরণের ২২ দিন পর উদ্ধার শিশু, চক্রের হোতাসহ গ্রেপ্তার ৫

চকলেট খাই‌য়ে আম কি‌নে দেওয়ার লোভ দে‌খি‌য়ে অপহরণ করে অনলাইনে ২ লাখ টাকায় বিক্রি করা তিন বছরের শিশুকে উদ্ধার করেছে র‍্যাব। সেইসঙ্গে শিশুর ক্রেতাসহ অপহরণকারী চক্রের হোতা পীযুষ দম্পত্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

রাজধানীর মোহাম্মদপুর থেকে ৩ বছরের শিশু অপহরণের ঘটনার ২২ দিন পর গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া থেকে অপহৃত শিশুকে উদ্ধার এবং সাভার থেকে অপহরণকারী চক্রের হোতাসহ ৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

শুক্রবার রাজধানীর কারওয়ানবাজারে র‍্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান র‌্যাব-২ এর অধিনায়ক অতিরিক্ত ডিআইজি মো. আনোয়ার হোসেন খান।

আটককৃতরা হলেন- পীযুষ কান্তি পাল (২৯), রিদ্ধিতা পাল (২৫), সুজন সুতার (৩২), পল্লব কান্তি বিশ্বাস (৫২) ও বেবি সরকার (৪৬)।

মো. আনোয়ার হোসেন খান জানান, গত ২৬ এপ্রিল দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের মনির মিয়ার বাজার সংলগ্ন ঢাকা উদ্যানের সি ব্লকের ১ নম্বর রোডের ১২ নম্বর বাসার সামনের রাস্তায় মো. দেলোয়ার হোসেনের বড় মেয়ে হুমায়রা (৮) ও ছোট ছেলে মো. সিদ্দিকসহ (৩) ৭-৮ জন শিশু-কিশোর খেলা করার সময় এক ব্যক্তি শিশু-কিশোরদের চকলেট খাওয়ায়। একপর্যায়ে অজ্ঞাত ঐ ব্যক্তি হুমায়রাকে বলেন, তুমি বাসায় চলে যাও আমি তোমার ভাইয়াকে বাজার থেকে আম কিনে দেব। সে যেতে না চাইলে তাকে ধমক দিয়ে বাসায় চলে যেতে বলে আর শিশু সিদ্দিককে আম কিনে দেওয়ার কথা বলে নিয়ে যায়। হুমায়রা কান্নাকাটি করতে করতে বাসায় গিয়ে মাকে জানায়। এর পর খোঁজাখুঁজি করেও ছেলের সন্ধান না পেয়ে মোহাম্মদপুর থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন।

পরে অপহৃত শিশুর বাবা মো. দেলোয়ার হোসেন মোহাম্মদপুর থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে মামলা করেন। সাধারণ ডায়েরি হওয়ার পর থেকে সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে ভিকটিমকে উদ্ধারে তৎপর হয় পুলিশ।

ভিকটিম শিশুকে উদ্ধারে দেরি হওয়ায় বাবা র‍্যাবে একটি অভিযোগ দাখিল করেন। অভিযোগ পেয়ে র‍্যাব-২ ছায়াতদন্ত শুরু করে। গোয়েন্দা নজরদারি ও তদন্তে র‍্যাব জানতে পারে, অপহরণকারী ব্যক্তি পীযুষ কান্তি পাল ও তার সহযোগী স্ত্রী রিদ্ধিতা পাল। এদিকে গোপন তথ্যের মাধ্যমে র‌্যাব জানতে পারে, পীযুষ দম্পতি শিশুটিকে সুজন সুতার (৩২) নামে এক ব্যক্তির মাধ্যমে পল্লব কান্তি বিশ্বাস ও তার স্ত্রী বেবী সরকার (৪৬) দম্পতির কাছে ২ লাখ টাকার বিনিময়ে বিক্রি করেন।

গতকাল বৃহস্পতিবার র‍্যাব-২ এর আভিযানিক দল গোপন সংবাদের ভিত্তিতে সুজন সুতারকে রাজধানীর শাহবাগ এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে। পরে তার দেওয়া তথ্যমতে গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ার তাড়াসি গ্রামের বাড়ি থেকে পল্লব কান্তি বিশ্বাস ও তার স্ত্রী বেবী সরকারকে গ্রেপ্তার এবং তাদের হেফাজত থেকে শিশুটিকে উদ্ধার করে।

সাভার এলাকায় অভিযান চালিয়ে পীযুষ কান্তি পাল ও তার স্ত্রী রিদ্ধিতা পালকে গ্রেপ্তার করা হয়। চক্রটির মূল হোতা পীযুষ কান্তি পাল পঞ্চগড় জেলার সদর থানার রমেন্দ্র চন্দ্র পালের ছেলে।

তিনি একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে এমবিএ পড়ার সময় পার্ট টাইম জব হিসেবে বিউটি পার্লার/স্পা সেন্টারে কাজ করতেন। তাদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, পীযুষ কান্তি পাল স্পা সেন্টারে কাজ করার সময় রিদ্ধিতা পালের সঙ্গে পরিচয় হয়। ২০২০ সালে তারা বিয়ে করেন। মূলত স্পা সেন্টারে কাজ করার সময় তিনি মানবপাচারের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন।

পীযুষ পীযুষ কান্তি পাল ও তার স্ত্রী রিদ্ধিতা পাল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ‘সনাতনী উদ্যোক্তা ফোরাম (SUF) নামক একটি গ্রুপের মাধ্যমে সন্তান বিক্রির বিজ্ঞাপন দিয়ে আসছিলেন। সুজন সুতারের সঙ্গে এই গ্রুপের মাধ্যমে রিদ্ধিতা পালের পরিচয় হয়। সুজন এই গ্রুপে বাচ্চা দত্তক নেওয়ার জন্য একটি পোস্ট দিলে রিদ্ধিতা তার বাসার স্বামী পরিত্যক্ত কাজের মহিলার একটি বাচ্চাকে ২ লাখ টাকার বিনিময়ে দত্তক দেবেন বলে সুজন সুতারের সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গত ২১ এপ্রিল যোগাযোগ করেন এবং নিজের ছেলে প্রণিল পালের ছবি পাঠিয়ে বলেন, ‘এই ছেলেকে দত্তক দেওয়া হবে, আপনাদের পছন্দ হয় কিনা বলেন।’

গত ২৬ এপ্রিল পীযুষ কান্তি পাল সাভার থেকে এসে সিদ্দিককে অপহরণ করে সিএনজিযোগে গাবতলী হয়ে সাভারে তার বাসায় নিয়ে যান। পরে রিদ্ধিতা পাল সুজনের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করে আগারগাঁও আইডিবি ভবনের সামনে একটি স্ট্যাম্পের মাধ্যমে নিজেকে অর্পণা দাস ও পীযুষকে বিজন বিহারী পাল পরিচয় দিয়ে সিদ্দিককে ২ লাখ টাকার বিনিময়ে সুজনের কাছে বিক্রয় করেন।

সুজন সুতার শিশুটিকে ২৬ এপ্রিল রাতে পল্লব কান্তি বিশ্বাস ও বেবি সরকারের হাতে তুলে দেন।