৯ বছর বয়সেই বিয়ে, ডিভোর্সের অধিকারও হারাল এই দেশের মেয়েরা

সম্প্রতি ইরাকে এক আইন সংশোধনের ঘটনা হইচই ফেলে দিয়েছে গোটা বিশ্বে। ইরাক সরকার তাদের বিবাহ সংক্রান্ত একটি আইন সংশোধন করতে যাচ্ছে (Iraq New Marriage Law)।‌ যেখানে নয়া সংস্করণে বলা রয়েছে, ওই দেশের মেয়েদের বিয়ের বৈধ বয়স ১৮ থেকে কমিয়ে ৯ বছর করে দেয়া হবে। এর ফলে ওই দেশের পুরুষরা অল্পবয়সী মেয়েদের বিয়ে (Child Marriage) করতে পারবে অনায়াসেই। এককথায় বলতে গেলে, নয়া আইনে নারী স্বাধীনতার (Women Empowerment) বিষয়টি একেবারে ধুলোয় মিশিয়ে দেয়া হয়েছে। এবার থেকে সেখানে পুরোপুরি পুরুষতান্ত্রিক সমাজ গঠিত হবে তথাকথিত আইনের মাধ্যমে।

প্রস্তাবিত নয়া আইন অনুযায়ী, ইরাকের মেয়েরা বিয়ের পর বিবাহ বিচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন না। একমাত্র পুরুষ সঙ্গীদের সম্মতিতেই বিবাহ বিচ্ছেদ সম্ভব। তবে বিচ্ছেদ হলে সন্তানের অধিকার পাবেন না ওই বিবাহবিচ্ছিন্না নারী। এমনকি সন্তানের সঙ্গে ভবিষ্যতে দেখাও করতে পারবেন না। ইরাকের বর্তমান পার্লামেন্ট শিয়া মুসলমানদের দলগুলির একটি জোট দ্বারা প্রভাবিত। তারাই ব্যক্তিগত মর্যাদা আইন বাতিল করে এমন রক্ষণশীল আইনের প্রবর্তন করতে চান।

নয়া আইন প্রসঙ্গে ইরাকের ক্ষমতাসীন জোটের বক্তব্য, এই পদক্ষেপটি ইসলামিক আইনের ব্যাখ্যার সঙ্গে একেবারে সঙ্গতিপূর্ণ। এর আগেও ২০১৪ ও ২০১৭ সালে এই আইন প্রবর্তন করার চেষ্টা চালানো হয়েছিল কিন্তু সেই সময় ওই দেশের মহিলাদের ক্ষোভের কারণে তা স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়নি। চাথাম হাউসের সিনিয়র রিসার্চার রেনাদ মনসুর এপ্রসঙ্গে জানিয়েছেন, যখন শিয়া মুসলমানদের জোটের সংখ্যাগরিষ্ঠতা রয়েছে তখন অনায়াসেই আইন পরিবর্তন করা যেতে পারে। অন্যদিকে সমাজ বিশেষজ্ঞ ও নারী অধিকার কর্মীদের বক্তব্য, এমন জঘন্যতম আইন প্রবর্তিত হলে নারীদের গুরুতর সম্মানহানি হবে এবং নারী স্বাধীনতা বলে কোনও শব্দের অস্তিত্ব থাকবে না সেখানে।

ইরাকে বাল্যবিবাহের হার এমনিতেই অনেক বেশি। আইনে ১৮ বছর লেখা থাকলেও সেখানকার ১৫ বছর বয়সী মেয়েদেরও বিয়ে দিয়ে দেয়া হয়। এমতাবস্থায় বিবাহের বয়স ৯ বছরে কমিয়ে আনা হলে তা হবে ঐতিহাসিক ভুল সিদ্ধান্ত, দাবি বিশেষজ্ঞদের। এর পাশাপাশি অল্প বয়সে মেয়েদের বিয়ে হলে তাদের যৌন স্বাস্থ্য ঝুঁকির মুখে পড়বে বলেও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা।